এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৯ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে ৫৭ রান করেছে বাংলাদেশ। সৌম্য ৩২ ও মুমিনুল হক ২১ রানে অপরাজিত।
দলীয় ষষ্ঠ ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হন ওপেনার তামিম ইকবাল। ব্যক্তিগত তিন রানে তিনি বিরাট কোহলির ক্যাচে ফেরেন। দলীয় ১১ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এর আগে বাংলাদেশকে ৩৮৮ রানে অলআউট করে ২৯৯ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৬৮৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল টিম ইন্ডিয়া।
এর আগে স্বাগতিকদের রান পাহাড়ের জবাবে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩৮৮ রানে শেষ হয় টাইগারদের প্রথম ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমের উইকেটের মধ্য দিয়ে ২৯৯ রানের বড় লিড পায় স্বাগতিকরা।
টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করার পথে ২৩৬টি বল মোকাবেলা করেন মুশফিক। তাতে ছিল ১৩টি চার ও ১টি ছক্কার মার। ১২৮তম ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে আউট হওয়ার আগে ২৬২ বলে ১২৭ রানের অসাধারণ দায়িত্বশীল ইনিংস উপহার দেন ‘মি. ডিপেন্ডেবল’।
মুশফিককে ফিরিয়ে রেকর্ডবুকে জায়গা করে নেন টেস্টের নাম্বার ওয়ান বোলার অশ্বিন। ৪৫তম টেস্টে এসে দ্রুততম ২৫০ উইকেটের কীর্তি গড়েন ভারতীয় স্পিন সেনসেশন। ছাড়িয়ে যান অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি পেসার ডেনিস লিলিকে (৪৮ ম্যাচ)।
মুশফিক-মিরাজের অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটিতে ছয় উইকেটে ৩২২ রান নিয়ে ভালোভাবেই তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু, শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ দিনের প্রথম ওভারেই আউট হয়ে যান মিরাজ (৫১)। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
চাপের মুখে মুশফিকের সঙ্গে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন ১৯ বছরের তরুণ মেহেদি হাসান। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ফিফটি উদযাপন করেন এ উঠতি অলরাউন্ডার।
মিরাজের বিদায়ে স্পিনার তাইজুল ইসলামকে স্ট্রাইক দিয়ে ভরসা রাখেন মুশফিক। উমেশ যাদবের বাউন্সারে ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসে আটকা পড়েন। তাইজুলের ইনিংস শেষ হয় ৩৮ বলে ১০ রান করে। রবিন্দ্র জাদেজার বলে স্লিপে থাকা অজিঙ্কা রাহানেকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তাসকিন। ৩৫ বলে এক চারে ৮ রান করেন তিনি।
২৯৯ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। চতুর্থ দিন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান বিজয়ের (৭) পর রাহুলকেও (৫) মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি করেন তাসকিন আহমেদ। ২৩ রানে দুই উইকেট হারায় টিম ইন্ডিয়া। দুই ওপেনার মুরালি বিজয় ও লোকেশ রাহুল দ্রুত বিদায় নিলে ৬৭ রানের জুটিতে রানের চাকা সচল রাখেন বিরাট কোহলি ও চেতশ্বর পুজারা। খুব বেশিক্ষণ অবশ্য টিকতে পারেননি প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। কোহলিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানিয়ে ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান।
ইনিংসের ২৭তম ওভারে রাহানেকে বোল্ড করেন সাকিব। বিদায়ের আগে রাহানের ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান। পুজারার সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েন দুটি চার আর একটি ছক্কা হাঁকানো রাহানে। দ্বিতীয় সেশনের শেষ বলটি খেলে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। পুজারা ৫৪ ও রবীন্দ্র জাদেজা ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
প্রথম ইনিংসে বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরি (২০৪), মুরালি বিজয় (১০৮) ও ঋদ্ধিমান সাহার (১০৬ অপ.) জোড়া শতকে রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিকরা। চেতশ্বর পুজারা ৮৩ ও অজিঙ্কা রাহানের ব্যাট থেকে আসে ৮২। সাহার সঙ্গে ৬০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন রবিন্দ্র জাদেজা। ছয় উইকেটে ৬৮৭ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করে টিম ইন্ডিয়া।
জবাবে ১০৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপের মুখেই পড়েছিল সফরকারীরা। সাকিব-মুশফিকের ১০৭ রানের পার্টনারশিপে ম্যাচে ফেরে টাইগাররা। সেঞ্চুরি থেকে ১৮ রান দূরে থাকতে অশ্বিনের বলে উমেশ যাদবের হাতে ধরা পড়েন সাকিব আল হাসান। এর আগে মুমিনুল হকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে অযথাই রানআউটের শিকার হন ওপেনার তামিম ইকবাল (২৪)।
মুমিনুলও বেশিদূর এগোতে পারেননি। মাত্র ১২ রান করেই যাদবের বলে এলবিডব্লু হয়ে সাজঘরে ফেরেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে (২৮) এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন ইশান্ত শর্মা। রবিন্দ্র জাদেজাকে সুইপ করতে গিয়ে ইনিংসের তৃতীয় এলবিডব্লু আউটে নাম লেখান সাব্বির রহমান (১৬)।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।
ভারত একাদশ: মুরালি বিজয়, লোকেশ রাহুল, চেতশ্বর পুজারা, বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), আজিঙ্কে রাহানে, উমেশ যাদব, ঋদ্ধিমান সাহা (উইকেটরক্ষক), রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবিন্দ্র জাদেজা, ইশান্ত শর্মা ও ভুবনেশ্বর কুমার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
এমআরপি