অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় প্রতিপক্ষকে প্রথম ইনিংসে ২৬০ রানে অলআউট করা বিরাট কোহলির ভারত। ১৫৫ রানে এগিয়ে সফরকারী অজিরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৪৩ রান।
নিজেদের মাটিতে ক্রমেই পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা ভারত স্পিননির্ভর উইকেটই বানায়। অজিদের সেই স্পিন বিষে নীল হতে হয় নিজেদেরই। অজি স্পিনাররাই তুলে নেন ভারতের ৭ উইকেট। শেষ ১১ রানে সাত উইকেটের পতনে ১০৫ রানে অলআউট। টেস্ট ইতিহাসে ভারতের এমন ইনিংস ধস দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের ৪৫৯ রানের জবাবে এমন ব্যাটিং ধসের শিকার হয়েছিল ভারত। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে শেষ সাতটি উইকেটের পতন হয়েছিল। ওই ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষকে ফলোঅনে (১৬৪ ও ২৯৬) ফেলে ১০ উইকেটের দাপুটে জয় পায় কিউইরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ৮২ রানের ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরু এনে দেন ডেভিড ওয়ার্নার (৩৮) ও ম্যাট রেনশ (৬৮)। ভারতের মাটিতে সবচেয়ে কম বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী রেনশ।
ওয়ার্নারের বিদায়ের পরেই রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন রেনশ। অজিরাও যেন খেই হারিয়ে ফেলে! নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বড় স্কোরের লক্ষ্য থেকে ছিটকে যায় তারা। স্মিথ ২৭, শন মার্শ ১৬, পিটার হ্যান্ডসকম্ব ২২, মিচেল মার্শ ৪, ম্যাথু ওয়েড ৮ রান করে আউট হন। ২০৫ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর হ্যাজেলউডকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন স্টার্ক।
স্টার্ক-হ্যাজেলউডের দশম উইকেট জুটিতে প্রথম দিনে অলআউট এড়ায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় দিনের প্রথম ওভারেই আউট হয়ে যান দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখানো মিচেল স্টার্ক। দু’জনের ৫৫ রানের পার্টনারশিপের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে অজিদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬০। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে স্লগ-সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড-উইকেটে রবিন্দ্র জাদেজার হাতে ধরা পড়েন স্টার্ক। অজি পেসারের ৬১ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কার মার। অপর প্রান্তে ৩১ বলে ১ রান করে অপরাজিত থেকে যান জস হ্যাজেলউড। এর আগে ৯ উইকেটে ২৫৬ রান নিয়ে চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন পার করে সফরকারীরা।
একাই চারটি উইকেট দখল করেন পেসার উমেশ যাদব। টেস্টের দুই শীর্ষ বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন তিনটি ও রবিন্দ্র জাদেজা নেন দু’টি। বাকি উইকেটটি আরেক স্পিনার জয়ন্ত যাদবের।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে ভারত। ৪০.১ ওভারে তোলে মাত্র ১০৫ রান। ওপেনার মুরালি বিজয় ১০ রানে সাজঘরে ফেরেন। তবে, আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল করেন ৬৪ রান। তিন নম্বরে নামা চেতশ্বর পুজারা ৬ রানে বিদায় নেন।
চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন বিরাট কোহলি। প্রায় আড়াই বছর পর শূন্য রানে বিদায় নেন তিনি। ১০৪টি ইনিংস পর ভারতীয় ব্যাটিং জিনিয়াসকে ‘ডাক’ অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করান অস্ট্রেলিয়ান ‘গতিদানব’ মিচেল স্টার্ক। ভুলে থাকার মতো মুহূর্তের শিকার হন কোহলি। বিশ্বের সবচেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে যান।
আজিঙ্কা রাহানে করেন ১৩ রান। এছাড়া, অশ্বিনের ব্যাট থেকে আসে ১ রান। রিদ্ধিমান সাহা ০, রবীন্দ্র জাদেজা ২, জয়ন্ত যাদব ২, উমেস যাদব ৪, ইশান্ত শর্মা ১ রান করেন।
অজিদের চার বোলার বল করেন। পেসার মিচেল স্টার্ক দুটি উইকেট নেন। একটি উইকেট নেন আরেক পেসার জস হ্যাজেলউড। ছয়টি উইকেট তুলে নেন স্পিনার স্টিভ ও’কেফি। আর একটি উইকেট দখল করেন আরেক স্পিনার নাথান লিয়ন।
১৫৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে অজিরা। শুরুটা ভালো হয়নি তাদেরও। দলীয় ১০ রানে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার। আরেক ওপেনার মিচেল মার্শের ব্যাট থেকে কোনো রান আসেনি। দলীয় ২৩ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় অজিরা। ৬১ রানের মাথায় তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন চার নম্বরে নামা পিটার হ্যান্ডসকম্ব (১৯)। তিন ব্যাটসম্যানকেই ফেরান অশ্বিন।
এরপর জুটি গড়েন দলপতি স্টিভেন স্মিথ এবং ম্যাট রেনশ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন তারা। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় রেনশ ব্যক্তিগত ৩১ রানে জয়ন্ত যাদবের বলে ইশান্ত শর্মার তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন।
তৃতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নামবেন ৫৯ রানে অপরাজিত থাকা অজি দলপতি স্মিথ। তাকে শেষ বেলায় সঙ্গ দিয়ে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন মিচেল মার্শ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
এমআরপি