আজ (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস। দৃঢ় মনোবল ও পূর্নস্পৃহা নিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও অংশগ্রহণের উদার্থ আহেবান জানিয়েছেন রুমানা, ‘আমরা মেয়ে বলে ঘরের মধ্যে বসে থাকবো, এটা না।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। উন্নত ও উন্নয়নশীল আর আট দশটি দেশের মতো এদেশের উন্নয়নে পুরুষদের পাশাপাশি সমান ভূমিকা রাখছেন নারীরাও। দেশ পরিচালনা থেকে শুরু করে, ব্যবসা, বানিজ্য, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এমনকি ক্রীড়া জগতেও নারীদের অবদান চোখে পড়ার মতো।
কৃষ্ণা রানী সরকার, সাবিনা খাতুনরা যখন ফুটবলে দেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তখন বসে নেই মাবিয়া, শিলারাও। এশিয়ান গেমসের মতো এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরে সাঁতার ও ভারোত্তোলনে স্বর্ণ জিতে নিজেদের গায়ে লাগিয়েছেন স্বর্ণ কণ্যার তকমা। দেশের পতাকা বিদেশের মাটিতে তুলে ধরেছেন বীর দর্পে। আর টেবিল টেনিসে জোবেরা আক্তার লিনু’র তো জুরি মেলাই ভার।
ফুটবল, সাঁতার, ভারোত্তোলন ও টেবিল টেনিসের পাশাপাশি নারীরা পিছিয়ে নেই ক্রিকেটেও। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ ঠিক তেমনেই এক প্রমীলা ক্রিকেটার। নিজ ক্রিকেট নৈপুণ্য দিয়ে এরই মধ্যে দেশ সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে।
অথচ রুমানার এই পর্যন্ত উঠে আসার পথটি ততটা মসৃণ ছিল না। ক্রিকেট খেলা নিয়ে তার পরিবার কখনও বাধেনি। কিন্তু বাধ সেধেছে তার পারিপার্শ্বিকতা। খেলতে গিয়ে সহ্য করেছেন প্রতিবেশীর কটু কথা ও সমাজপতিদের রক্তচক্ষু। ফলে মানসিক একটি চাপ সব সময়ই তার ভেতরে থাকতো। মেয়ে হয়েও সে কিভাবে ক্রিকেট খেলে? এটি ছিল সেই অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়াদের প্রতিদিনকার প্রশ্ন।
‘মেয়ে হিসেবে এটা সব সময়ই সব জায়গায় বাধা। পারিবারিকভাবে নয়, তবে পারিপার্শ্বিকতা থেকে সব সময়ই একটা চাপ ছিল। তারা মেনে নিতে চাইতো না যে আমি মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলি। দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা ছিল প্রকট। আড়ালে আবডালে অনেকে অনেক কটু কথাও বলেছে। ’
সেই কটুকথা, সমাজপতিদের রক্তচক্ষু জয় করে শুধুমাত্র নিজ মনের বলেই আজ বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক হতে পেরেছেন রুমানা। আর এই কাজটি করতে গিয়ে তাকে রীতিমত সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবে হাল ছাড়েননি।
মনের গহীন কোনে নিজের উপরেই নিজের অগাধ বিশ্বাস ছিল, ‘আমি একজন মেয়ে। আর একজন মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলাটা সহজ কোন কাজ না। কেননা ক্রিকেট বেশ কঠিন একটি খেলা। ভীষণ পরিশ্রমের। তবে আমি জানতাম আমি যদি তাদের কথায় কান না দিয়ে নিজের কাজটি নিজে করতে পারি তাহলে সফল হবোই। ’
সত্যিই তো সফল হয়েছেন রুমানা। ছোট বেলা থেকে যে ভুবনে তিনি বিচরণ করেছেন, আজ সেই ভুবনের নেতৃত্ব তার হাতে। রুমানার মতো এদেশের আরও নারী আছেন যারা শুধুমাত্র সামাজিক বাধা-বিপত্তির কারণে নিজেদের পরিপূর্ণ বিকশিত করতে পারেননি। তাদের জন্য রুমানার পরামর্শ হলো, ‘একটা মেয়ে যখন তার লক্ষ্যের জন্য ছোটাছুটি করে তখন তাকে অবশ্যই এ সমাজের সবার সমর্থণ করতে হবে। আমরা যদি ঘরের চাইতে বাইরে বেশি সমর্থন পাই তাহলে আরও এগিয়ে যেতে পারবো। আমাদের দেশে ঘরের বাইরে সমর্থনের বড় অভাব। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, ৮ মার্চ ২০১৭
এইচএল/এমআরএম