ঢাকা: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাল্টি স্পোর্টস অ্যারেনা; যার নাম 'বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স'। এই বিশাল কমপ্লেক্সে থাকবে প্রচলিত প্রায় সব খেলাধুলার জন্য সেরা বন্দোবস্ত।
দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এমনটাই জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল দেশের ফুটবলের নতুন ভেন্যু 'বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা'। এর মাধ্যমে দেশের ঘরোয়া শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে প্রথম ক্লাব হিসেবে নিজস্ব স্টেডিয়াম পেল কিংসরা। এদিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংস ও বাংলাদেশ পুলিশ এফসির মধ্যকার ম্যাচের বিরতিতে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে নতুন এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শিদী এবং বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসান।
বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের একটি অংশ হচ্ছে 'বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা'। ইউরোপীয় ধাচের এই স্টেডিয়াম উদ্বোধন শেষে কনফারেন্স কক্ষে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। সেখানে 'বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স' নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, 'এটা (কমপ্লেক্স) ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে করা হচ্ছে না। এটা করা হচ্ছে দেশের স্বার্থ, দেশের সমৃদ্ধির জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় সকল ব্যবসায়ীদের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। উনি নিজেও ক্রীড়াক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের ক্রিকেট বর্তমান পর্যায়ে আসার পেছনে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি যেভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। '
ফুটবলে দেশের শীর্ষ তিনটি ক্লাব (বসুন্ধরা কিংস, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র) পরিচালনা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এছাড়া ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলার সঙ্গেও সরাসরি জড়িয়ে আছে এই শিল্পগোষ্ঠীর নাম। এবার তো তারা প্রথমবারের মতো সামনে আনতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
খেলাধুলার সঙ্গে এমন নিবিড় সম্পর্কের ব্যাপারে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, 'পারিবারিকভাবেই আমরা খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আবার বাবা অল ইন্ডিয়া সাঁতারে সেরা হয়েছিলেন। আবার বড় ভাই পাকিস্তান হকি দলে খেলেছেন। ফুটবলেও আবাহনীর প্রথম বিভাগের অধিনায়ক ছিলেন। আমিও অল্পস্বল্প বাংলাদেশ হকি দলে খেলেছি। ফলে জেনেটিক্যালি আমাদের ভেতরে খেলার প্রতি আলাদা একটা টান তো আছেই। মূলত সেখান থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছি। শুরুতে শুধু বসুন্ধরা কিংস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবার বিশেষ করে সাংবাদিকদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে আমরা এটা (স্পোর্টস কমপ্লেক্স) করেছি। সংবাদমাধ্যমগুলোতে এটা নিয়ে পজিটিভ আলোচনা আমাকে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এজন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। '
বসুন্ধরার একাডেমির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে চায় ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো। এ ব্যাপারে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, 'আমাদের যে ইনডোর একাডেমি করছি সেটায় চেষ্টা করছি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাব থেকে আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজ নিতে। আমাদের এই একাডেমিতে অন্তত পক্ষে এক হাজার ছেলে থাকতে পারবে, তারা খেলা শিখতে পারবে। মেয়েদের জন্য আমরা একাডেমির ব্যবস্থা রেখেছি এবং বাংলাদেশের মেয়েরা কিন্তু বলা যায় যে গর্ব। খেলাধুলায় তারা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। ফুটবল, ক্রিকেট সব খেলায়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে আমাদের একাডেমির কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই আমরা এখনও সিদ্ধান্তে আসিনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলারদের নিতে চায়, তাদের তৈরি করতে চায়। একাডেমি নির্মাণের কাজ শেষ হলে আশা করি খুব দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। '
তিনি আরও বলেন, 'আমি শুধু ক্লাব ফুটবল নিয়ে ভাবছি না, আমি চাই দেশের ফুটবল আবার জেগে উঠুক। একসময় আবাহনী-মোহামেডান খেলার সময় আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে দেখতে যেতাম। আমি চাই এই ব্যাপারটা আবার দেশের ফুটবলে ফিরে আসুক। আমি চাই দেশের আন্তঃস্কুল কিংবা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল আবার এগিয়ে যাক। তবে দেশের ফুটবল এগিয়ে যেতে আরও সময় লাগবে। এখন যারা আছে, তাদের হয়তো চার-পাঁচ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানে নেওয়া যাবে। কিন্তু স্কুল লেভেল থেকে তৈরি না করলে খুব শিগগিরই অত দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন- ৩০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে 'বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স'
বসুন্ধরা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হবে ম্যানইউ
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
এমএইচএম