সিলেট থেকে: তখনও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভিড় বাড়েনি। এক পাশে অনুশীলনে ব্যস্ত শ্রীলঙ্কা, অন্যদিকে পাকিস্তান।
‘ছ’-এর উচ্চারণ আদতে হয়ে গিয়েছিল ‘চ’। প্রশ্নটা যে কোনো বিদেশি ক্রিকেটারের করা, এতক্ষণে বুঝতে পারার কথা। এরপর আরও এক-দুটো ভাঙা ভাঙা বাংলা বেরিয়ে এলো তার মুখ থেকে। ‘ভাই, বলটা দিয়েন’ বা এমন। শেষ অবধি জিজ্ঞেস না করে উপায় থাকল না, ‘এত ভালো বাংলা কোথায় শিখলেন?’
মালশাহ সিহানি নামের শ্রীলঙ্কান নারী ক্রিকেটার জানালেন, কয়েকবার রুপালী ব্যাংকের হয়ে ডিপিএল খেলেছেন, ওই সূত্রেই বাংলা জানেন তিনি। সিহানির মতো সবাই হয়তো বাংলা জানেন না, কিন্তু সিলেটে তার মতো নারী ক্রিকেটারদের একরকম উৎসবের আসরই বসছে।
স্মৃতি মান্ধানা-বিসমাহ মারুফদের মতো তারকারা যেমন আছেন এখানে, তেমনি আরব আমিরাতের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ১৫ বছরের কিশোরী রিশিতা রাজিথাও। তাদের লড়াইয়ের শুরু হচ্ছে শনিবার বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে।
ধীরে ধীরে সাজছে সিলেট স্টেডিয়ামও। সকালে গিয়ে অবশ্য তেমন কিছুই দেখা যায়নি, কিন্তু বিকেল হতেই দাঁড়িয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। অপেক্ষা তো আর অল্পদিনের না। ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর বাংলাদেশের মাটিতে হচ্ছে মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
যেমন-তেমন টুর্নামেন্টও আবার নয়, বাংলাদেশ এখানে খেলছে ‘বর্তমান চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে। আশা করি, কথাটার মর্মার্থ টের পাওয়া গেছে। যদি না যায়, তাহলে মনে করে দেখতে পারেন- জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাফল্য একটিই, মেয়েদের এশিয়া কাপ জেতা। ছেলে বা মেয়ে দুই দল মিলিয়েই এটা সেরা সাফল্য।
বাংলাদেশ নামবে ওই শিরোপা ধরে রাখার মিশনে। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি শিরোপার সুবাস নিতে তাই চান আরও একবার। স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন, ‘ভালো খেলার সময় কিন্তু এখন অলরেডি শেষ। যেহেতু ট্রফি আমাদের ছিল, সুতরাং চেষ্টা করব ট্রফিটা যেন আমাদেরই থাকে। ’
সাত দলের লড়াই। ভারত দুর্দান্ত ফর্মে আছে। ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরুর পর একবার বাদে সবগুলোর শিরোপাই তাদের ঘরে গেছে। তাদের সঙ্গে শক্তির পার্থক্য কত, এসব নিয়ে ভাবতেই রাজি নন জ্যোতি। তার ভাবনার যৌক্তিকতাও অবশ্য ফেলনা নয়, গেল আসরে তাদের হারিয়েই ট্রফিটা নিয়ে এসেছিলেন তারা। নির্দিষ্ট দলকে ভাবতে চান না জ্যোতি। তার চাওয়া ‘দলের সবার অল্প হলেও অবদান’ রাখতে পারা।
শুরুর প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশ্য খুব কঠিন লড়াই নেই বাংলাদেশের সামনে। থাইল্যান্ডের মেয়েদেরকে ক’দিন আগেও বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সেমিফাইনালে ১১ রানে হারিয়ে এসেছেন জ্যোতিরা। তবে টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী সব দলকেই খেলতে হবে সবার বিপক্ষে। ‘সহজ ও কঠিনের’ হিসাব কষে লাভ আদতে তাই তেমন নেই।
তবে সহজ যে কিছুই হবে না, তার ঝাঁজ পাওয়া গেছে শুক্রবারই। তীব্র গরমেও অনুশীলনে এতটুকু ঘাটতিও রাখতে চায়নি কোনো দল। সংযুক্ত আরব আমিরাত যেমন অনুশীলন করেছে তিন ঘণ্টারও বেশি।
থাইল্যান্ড সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল টেনিস বল। সেটা দিয়ে ঘণ্টাখানেক মেয়েদের ধাতস্ত করানো হয়েছে ক্যাচিংয়ে, এরপর ক্রিকেট বল এলেও ক্যাচ ফেলেননি ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের অনুশীলনেও ক্যাচ ছাড়ায় শোনা গেছে চিৎকার।
সময়ের সঙ্গে বেড়েছে মাঠের বাইরের সিরিয়াসনেসও। এসিসি (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল) কর্তারা সচল হয়েছেন, সাংবাদিকদের জন্য নেমে এসেছে নানা বিধিনিষেধ। সিলেটের তীব্র গরমে আসল উৎসব শুরু হবে কাল। মাঠের ভেতরের ক্রিকেটটাই যে মূল। তার সব প্রস্তুতিও শেষ, এখন শুধু ব্যাট-প্যাডে মাঠে নামার অপেক্ষা।
বাংলাদেশ কি প্রথমবার শিরোপা ধরে রাখতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ১৫ দিন। ততদিন পর্যন্ত ব্যস্ততা না থাকলে টিভি পর্দায় বসে ক্রিকেটটা দেখতে পারেন, মনে হয় না ঠকে যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২
এমএইচবি/এমএইচএম