চট্টগ্রাম: মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ে কনটেইনারের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক বাংলাদেশি কিশোরকে। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে খালি কনটেইনারের ভেতর লুকিয়ে কেলাং বন্দরে পৌঁছায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কনটেইনারের ভেতর চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে জাহাজের ক্যাপ্টেনের নজরে আসে বিষয়টি। এরপর ১৭ জানুয়ারি জরুরি ভিত্তিতে জাহাজটি কেলাং বন্দরে ভিড়িয়ে কিশোরকে উদ্ধার করা হয়।
ইন্টিগ্ররা জাহাজের লোকাল এজেন্ট কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্সের সহকারী ব্যবস্থাপক এসএম ফয়সাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, জাহাজটি ১ হাজার ৩৩৭ টিইইউ’স (২০ ফুট হিসেবে) কনটেইনার নিয়ে ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৩ টিইইউ’স ছিল খালি। ১৬ জানুয়ারি জাহাজটি পোর্ট কেলাং পৌঁছার পর একটি কনটেইনার থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে নাবিকরা ক্যাপ্টেনকে জানায়। ক্যাপ্টেন বিষয়টি বন্দরকে জানায়। এরপর জাহাজটিকে স্পেশাল বার্থিং দেওয়া হয় ২০ ফুট লম্বা ওই কনটেইনারটি আনলোড করার জন্য। তখন ১২-১৫ বছরের একটি কিশোরকে পাওয়া যায় অসুস্থ অবস্থায়। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খালি কনটেইনারে করেই কিশোরটি পোর্ট কেলাং পৌঁছেছে। কিন্তু সে খালি কনটেইনারে ডিপো থেকে উঠলো নাকি বাইরে থেকে আসলো খতিয়ে দেখতে হবে। কিশোরটি বাংলায় অস্পষ্টভাবে কথা বলছিল। তার চিকিৎসা চলছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইন্টিগ্ররা জাহাজটি কনটেইনার লোড করে ১২ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে ১৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরের বহির্নোঙরে (সাগরে) পৌঁছে। কনটেইনারটি সেই জাহাজেই ছিল। আর জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কেলাং বন্দরেই গেছে। মাঝখানে যাত্রাবিরতি ছিল না।
চট্টগ্রাম বন্দরে দিয়ে কনটেইনার বা জাহাজে লুকিয়ে বিদেশ যাওয়ার আটটি ঘটনা ঘটেছে এর আগে। এর মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতজন জীবিত ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। দুইজনকে চট্টগ্রাম বন্দর ফটক ও জাহাজ থেকেই আটক করে নামিয়ে আনা হয়। বাকি পাঁচজনকে সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকার দেশ রি-ইউনিয়ন থেকে ফেরত আনা হয়।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পেনাং সমুদ্রবন্দরে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া খালি কনটেইনারের ভেতর একজনের মরদেহ পাওয়া যায়।
২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সিঙ্গাপুর বন্দরে একটি খালি কনটেইনার থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দুজন অস্থায়ী শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছিল। এর মধ্যে দ্বীন ইসলাম ছিল কঙ্কালসার অবস্থায় এবং আল আমিন নামের আরেক শ্রমিক ছিল মৃত।
২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর ভারতের বিশাখাপত্তনাম বন্দরে একটি খালি কনটেইনার থেকে রোহান হোসেন নামের এক বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ। জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ১২ দিন পর রোহানকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রোহানের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে ছিল।
২০১৭ সালের ৩১ জুলাই যুক্তরাজ্যগামী পোশাকের একটি কনটেইনার থেকে বাবুল ত্রিপুরা নামের এক শ্রমিককে উদ্ধার করেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা।
২০১০ সালের ৮ জুন অবৈধভাবে বন্দরে ঢুকে সোয়েব রিপন নামের এক যুবক ‘এমভি হ্যানসা ক্যালিডোনিয়া’জাহাজে লুকিয়ে থাকেন। সিঙ্গাপুরে যাত্রাপথে একজন নাবিক জাহাজে তাকে শনাক্ত করেন। পরে ওই যুবককে একই জাহাজে করে চট্টগ্রামে ফেরত আনা হয়। এমভি মার্কস উইলমিংটন জাহাজে করে মালয়েশিয়ায় যান ফল বিক্রেতা মো. রিপন। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর কনটেইনার থেকে বেরিয়ে এলে তাঁকে আটক করেন নাবিকেরা। ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল এমভি টাম্পা বে নামের শ্রীলঙ্কার কলম্বোগামী একটি জাহাজে লুকিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময় বরিশালের আকতার আলীকে আটক করেন বন্দরকর্মী ও নাবিকেরা।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এমভি হ্যানসা ক্যালিডোনিয়া জাহাজে করে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন মো. রিপন।
একের পর এক লুকিয়ে বিদেশ পাড়ির ঘটনায় মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন শিপিং সংশ্লিষ্টরা। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে কঠোর নজরদারি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, খালি কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে আসার সময় চেক করার জন্য একটি দরজা খোলা রাখা হয়। এরপর বন্দরের তত্ত্বাবধানে থাকে এবং জাহাজে লোড করা হয়। এ সময় যাতে কেউ কনটেইনারে ঢুকতে না পারে তার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি শিপিং এজেন্টদেরও নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি