ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্বাধীনতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা, মাউশির তদন্ত কমিটি চট্টগ্রামে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩
স্বাধীনতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা, মাউশির তদন্ত কমিটি চট্টগ্রামে ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জাহেদুল হকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরী।

ঘটনা তদন্তে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য ও মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. গাজী গোলাম মাওলা’র নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রোববার (৫ মার্চ) তদন্ত কমিটির সদস্যরা আসেন চট্টগ্রামে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরীর পাঠানো অভিযোগপত্রে বলা হয়, অধ্যাপক মো. জাহেদুল হক স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য। তাঁর পিতা শামসুল হক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চাচাতো ভাই। এছাড়া ছাত্রজীবনে অধ্যাপক মো. জাহেদুল হক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি বিভিন্ন কলেজে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করতে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।  

‘২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন নম্বর ৫৫৩১/২০১২ এর আদেশ অনুসারে- বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের মনিটরিং শাখা -১ এর স্মারক মোতাবেক দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে ফেলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্মতি প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম বহাল রাখা হয়েছে। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত আছে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই নাম মুছে না ফেলার দায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের’।  

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট ফজলুল কাদের চৌধুরীর স্ত্রী সেলিনা কাদের চৌধুরীকে সভাপতি করে ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ-হাটহাজারীর ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি অধ্যাপক মো. জাহেদুল হক আবারও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সাদাত কাদের চৌধুরীকে সভাপতি করে ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেন।

এছাড়া কর্ণফুলী থানাধীন মেরিন একাডেমী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন শেখ মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবস পালন করেননি নাছির উদ্দিন। এদিন ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ ও শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দেন তিনি। এসব অভিযোগ পেয়েও তাকে অধ্যক্ষ পদে বহাল রেখেছেন মো. জাহেদুল হক।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরে ১৮ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগসমূহ সরেজমিনে তদন্তের জন্য মাউশি’র প্রশিক্ষণ পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য এবং মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এসেছি। এখানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জাহেদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত’।  

অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মহামান্য আদালতের একটি নির্দেশনা আছে যে, কোনও যুদ্ধাপরাধীর নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ থাকবে না। কিন্তু তিনি কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্বে থেকেও এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম বহাল রাখা হয়েছে। ওই স্কুলে দুটি কমিটিতেই যুদ্ধাপরাধী পরিবারে সদস্যরা রয়েছে। এছাড়াও কর্ণফুলী থানাধীন একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল রেখে মাউশি’তে চিঠি পাঠিয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।