ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এদেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তান হবে না: নওফেল

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এদেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তান হবে না: নওফেল ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এদেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তানে পরিণত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।  

বুধবার  (২৮ জুন) বিকাল ৪টায় নগরের সিনেমা প্যালেস মোড়ে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের উদ্যোগে আয়োজিত উল্টো রথযাত্রা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন সাবেক নিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।  

নওফেল বলেন, এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের বারবার দরকার।

তিনি এদেশে সকল ধর্মের মানুষের জন্য মাতৃরূপে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ উপহার। কারণ তার নেতৃত্বে এদেশ আজ অর্থনৈতিক মুক্তির পেয়েছে। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র চলছে। এই বৃহত্তর ভারতবর্ষের দুইপাশে পাকিস্তান তৈরি করে ভারতবর্ষকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। যা আগেও ছিল এখনো আছে। বাংলাদেশ যাতে পাকিস্তান না হয়, বাংলাদেশ যাতে আফগানিস্তান না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। যারা এক সময় এদেশে জঙ্গি, উলফাসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নবাদীদের জায়গা দিয়ে এই পবিত্রভূমিকে অপবিত্র করার চেষ্টা করেছে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপে আজ তারা ক্ষমতায় নেই। আর কোনোদিন ক্ষমতায় যেতেও পারবে না। শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে এবং ক্ষমতায় থাকলে এদেশ আর পেছনে যাবে না। উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাবে।  

সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ মনেপ্রাণে একটি অসাম্প্রদায়িক দল। আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দুরা নিরাপদ এবং আওয়ামী লীগই কেবল সকল ধর্মের মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করে। ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি গ্রুপ চেষ্টা করছে। তারা শুধু ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ তাদেরকে মন থেকে প্রত্যাহান করেছে। তাদের কোনো কথা জনগণ বিশ্বাস করে না। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠন করতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ আগেও হিন্দুদের সাথে ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।   

উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী। আর্শীবাদক ছিলেন ভারতের শ্রীধাম বৃন্দাবনের শ্রীপাদ মুক্তিদাতা চৈতন্য দাস ব্রহ্মচারী। প্রধান বক্তা ছিলেন  ইসকন বাংলাদেশের সদস্য ও পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, রুমকী সেনগুপ্ত, কৈবল্য ধামের ট্রাস্টি মনিলাল দাশ, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দারুব্রহ্ম দাস ব্রহ্মচারী, যুগ্ম সম্পাদক রুপেশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ।    

শোভাযাত্রায় বিভিন্ন পৌরাণিক সাজের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ও বৈদিক সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রাটি সিনেমা প্যালেস থেকে শুরু হয়ে আন্দরকিল্লা, চেরাগী, জামালখান, আসকারদিঘীর পাড়, কাজির দেউড়ি, মেহেদিবাগ, গোলপাহাড় হয়ে প্রবর্তকে গিয়ে শেষ হয়।  

অন্যদিকে নন্দনকানন রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রম সম্মুখে ইসকন চট্টগ্রাম আয়োজিত ২৬তম উল্টো রথযাত্রার ধর্মীয় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

এ সময় বলেন, চট্টগ্রামে আমরা এক সাথে আনন্দ উৎসব করবো। পবিত্র ঈদে ও পবিত্র রথযাত্রার উৎসবে এক সাথে আমরা শামিল হবো।  এটাই আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। কোনো অপকৌশলের রাজনীতি বাংলাদেশে করতে দেয়া হবে না। প্রপগান্ডা চালিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে থামানো যাবে না।  

উদ্বোধক নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন,  হাজার বছর ধরে এই ভূখন্ডে জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। সম্প্রীতি এ দেশের মানুষের সুমহান ঐতিহ্য। বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি ধর্মপরায়ণ বলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সর্বদাই সহনশীল।  

প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, এখনো বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর সংহতি ও জাতীয় ঐক্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হিন্দু-মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ সব ধর্ম এবং বর্ণের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করেছিল- যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।  

নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ পণ্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে ও তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় আশীর্বাদক ছিলেন মায়াপুর ইসকনের সন্যাসী শ্রীমৎ ভক্তি দয়িত আদি পুরুষ স্বামী মহারাজ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কাউন্সিলর প্রফেসর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মন্জু, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, ফটিকছড়ি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ছালামত উল্লাহ চৌধুরী শাহীন, নানুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল আযম,   জন্মাষ্টমী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, দক্ষিণ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের লায়ন সন্তোষ কুমার নন্দী, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি সুজিত দাশ, যুবলীগ নেতা সন্জয় ভৌমিক কন্কন, কাউন্সিলর রুমকী সেনগুপ্ত, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, স্বাগত বক্তব্য দেন নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের সহ সভাপতি অকিঞ্চন গৌর দাস ব্রহ্মচারী, সুবল সখা দাস ব্রহ্মচারী,  অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ।  

মহাশোভাযাত্রা নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রম প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে নগরীর সড়ক প্রদক্ষিণ করে নন্দনকানন রাধামাধব মন্দিরে এসে শেষ হয়। মহাশোভাযাত্রায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ভক্তবৃন্দসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, পৌরাণিক সাজ ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।