ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছোট্ট মেয়েটির মৃত্যু জানান দিল ডেঙ্গুর ভয়াবহতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
ছোট্ট মেয়েটির মৃত্যু জানান দিল ডেঙ্গুর ভয়াবহতা মায়ের সঙ্গে শ্রাবন্তী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে চট্টগ্রামে তা-ই জানান দিল ছোট্ট শ্রাবন্তী সরকারের মৃত্যুতে। হাসিখুশি প্রাণবন্ত মেয়েটির অকাল মৃত্যু নাড়া দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

কেউ জানাচ্ছেন শোক, কেউবা আবার ক্ষোভ ঝাড়ছেন মশক নিধনের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওপর।  

নগরের সেন্ট স্কলাস্টিকা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল শ্রাবন্তী।

 রাতেই নগরের বলুয়ারদীঘি মহাশ্মশানে দাহ করা হয় তার মরদেহ। যে মেয়েটি পড়াশোনায় ভালো ছিল, গান শিখে বড় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন ছিল সেই মেয়েটি আজ বেঁচে নেই।  

শ্রাবন্তীর আত্মীয় জুয়েল দাশ বাংলানিউজকে জানান, শ্রাবন্তীর বাবা বিশ্বজিৎ সরকার ইপিজেডের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ায় হলেও থাকতেন নগরের সদরঘাটের পোস্ট অফিস গলিতে। ডেঙ্গুর বিষয়ে মৌসুমের শুরু থেকে সচেতন ছিলেন তিনি। তারপরও সপরিবারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন সম্প্রতি। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাত ৯টার দিকে ওআর নিজাম রোডে বেসরকারি মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে শ্রাবন্তীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তার মা বিটু সরকার ও ভাই কমার্স কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র সৌভিক সরকার মেহেদিবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত থাকার পর গত ৩ জুলাই চিকিৎসকের পরামর্শে শ্রাবন্তী ও তার ভাইয়ের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরদিন নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে তাদের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। শ্রাবন্তীর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ও সৌভিকের ১ লাখ ৬০ হাজার উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। প্লাটিলেটের পরিমাণ যাতে বাড়ে সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শে পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলের জুস দেওয়া হচ্ছিল। সঙ্গে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রাবন্তীর জ্বর কমে আসে। বুধবার নিয়মিত ব্লাড টেস্টের কথা ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকে তার পেট ফুলে যায়। রাত ৮টার দিকে যখন কাঁপুনি চলে এল, তখন মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক দ্রুত এনআইসিইউতে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে মেয়ে আর বেঁচে নেই।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসের প্রথম চার দিনেই ডেঙ্গুতে মারা গেছে শিশুসহ ৩ জন। জুন মাসে ৬ জন মারা গেছে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে  ৬৬১ জন। এর মধ্যে নগরে ৪৬১ জন, বিভিন্ন উপজেলায় ২০০ জন। মোট মারা গেছে ১২ জন।     

এদিকে গত ২২ জুন চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং কলেজ চত্বরে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে ১০০ দিনের ‘মশক নিধন ক্রাশ প্রোগ্রাম’র উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। এর আগে ৪ জুন পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্ক চত্বরে বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আফরোজা জহুর। যদিও নগরের সচেতন মানুষের অভিযোগ মশক নিধন কর্মীদের যেমন খুব একটা দেখা যায় না তেমনি মশার প্রজনন, উপদ্রবও কমছে না। বরং দিন দিন বাড়ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।