চট্টগ্রাম: ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নির্মাণাধীন ভবনের নিচে, ফুলের টব, ড্রাম ও ছাদে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা পেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।
চসিক এলাকায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভা বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) নগরের নন্দনকাননে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেয়র বলেন, মশা নিধনে নিয়োজিত স্প্রেম্যানের সংখ্যা ২২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৩০০টি স্প্রে মেশিন ও ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে ১০ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৫,০০০ লিটার ন্যাপথা মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাদলের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামীয় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এডাল্টিসাইড হিসেবে ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড, লার্ভিসাইড হিসেবে টেমিফস ৫০ ইসি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ এলডিও এবং এইচএসডি (কালো তেল) কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিটিআই ও নেভোলিউবণ ওষুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ডেঙ্গু বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও ডেঙ্গু চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেয়র রেজাউল গত ১১ জুলাই সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে সভা করে ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমা পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন পর পর সভা করে কর্মপন্থা নির্ধারণপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সব সংস্থাকে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, জ্বর দেখা দিলে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ডেঙ্গু আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মশার জীবনপদ্ধতি বদলে যাচ্ছে, তাই মশা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী চট্টগ্রামের সব স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর আহবান জানান।
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চসিকের পক্ষে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণ দেখা দিলেই টেস্ট করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে ডেঙ্গু ভালো হয়।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, রেডক্রিসেন্ট ও আরবান ভলান্টিয়ারের যৌথ টিমের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে ও নগরের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিদিন লিফলেট বিতরণ ও হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে, বাজানো হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষায় সচেতনতামূলক গান। এছাড়া ৫টি মাইকের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
উৎস থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ড্রোন ব্যবহার করে যেখানে পানি জমে আছে এবং লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে জরিমানা করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পানি জমে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত ৫ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১২৭টি মামলায় ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সিভিল সার্জনের কাছ থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে রোগীর কর্মস্থল ও বসবাসস্থলের আশপাশে বিশেষ মশানিধন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ লক্ষ্যে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চসিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজালা রানী চাকমা নগরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এডিস মশার উৎসস্থল বাসা বাড়ির ছাদ বাগান ও নির্মাণাধীন ভবন ড্রোন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অভিযানে ৪ ভবন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু পূর্বক ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সহায়তা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি