ঢাকা, সোমবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু: বছরে মোট আক্রান্তের ৮৩ শতাংশই জুলাইয়ে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৩
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু: বছরে মোট আক্রান্তের ৮৩ শতাংশই জুলাইয়ে ...

চট্টগ্রাম: ভাইরাসজনিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে সাধারণত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবছর নির্ধারিত সময়ের আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে।

 

চলতি বছরের মোট আক্রান্তের প্রায় ৮৩ শতাংশই জুলাই মাসে শনাক্ত হয়েছে। যা উদ্বেগজনক- বলছেন চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কোনও ব্যক্তিকে কামড়ালে চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।

চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনই জুলাই মাসে মারা গেছেন। যা অন্যান্য বছরের এ সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে কেউ মারা না গেলেও ২০২১ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে মারা গেছেন ৪১ জন। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, গত বছর জুলাই পর্যন্ত মাত্র একজন মারা গেলেও এ বছর জুলাই পর্যন্ত মারা গেছেন ২৫ জন। শক সিনড্রোম ও হেমোরেজিক অবস্থা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৭৬ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসে আক্রান্ত ২ হাজার ৩১১ জন। যা এ বছর মোট আক্রান্তের ৮৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল মাত্র ২৮৩ জন। এছাড়া মে মাসে ৫৩ জন, এপ্রিল মাসে ১৮ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন এবং জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত পাওয়া যায় ৭৭ জন।  

অন্যদিকে, গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ৫ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে ৭৩০ জন। নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৭ জন। অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৬১ জন। তাছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে ৬০১ জন, আগস্ট মাসে ১১৪ জন, জুলাই মাসে ৬৪ জন ও জুন মাসে ছিল ১৯ জন। তবে মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত না থাকলেও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে ডেঙ্গুতে যথাক্রমে ৯, ৪, ১ ও ৩ জন আক্রান্ত পাওয়া যায়।  

এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনগুলোতে এর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা জানান, ভরা বর্ষায় সাধারণত এ রোগের প্রকোপ থাকে না। বর্ষা শেষ হওয়ার পরপরই এর প্রকোপ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ, জুলাই থেকে পরের মাসগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। যদিও এবছর খুব তাড়াতাড়িই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। এ প্রকোপ অব্যাহত থাকলে এ বছরের পরের মাসগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।  

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার রাখা আমাদের দায়িত্ব। কোথাও পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। জরিপে দেখা গেছে, নগরের আকবর শাহ, ষোলশহর, পাঁচলাইশ এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। তবে চট্টগ্রামের অন্য এলাকায় এডিস মশা পাওয়া যাবে না বা ডেঙ্গু রোগ ছড়াবে না তা কিন্তু নয়। একটি মশা এক কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। সুতরাং মানুষকে সচেতন হতে হবে।  

তিনি বলেন, নগরে মশার লার্ভা ধ্বংসের ক্রাশ প্রোগ্রাম এবং মশার ওষুধ ছিটানো হয় দিনের বেলায়। কিন্তু মশার ওষুধ ছিটানোর উপযুক্ত সময় হলো সন্ধ্যা। এসময় ওষুধ ছিটালে অধিক মশা মারা যায়। দিনের বেলা এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে তেমন কোনো সুফল আসবে না বলেও জানান তিনি।  

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।  

তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে খাবারের প্রতিও বিশেষভাবে মনযোগী হতে হবে। এছাড়া সবার আগে সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হওয়া জরুরি। যেকোনও সময় ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।  

 বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৩
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।