ঢাকা, বুধবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাহবুবুল হকের জীবন আলোকিত : অনুপম সেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৩
মাহবুবুল হকের জীবন আলোকিত : অনুপম সেন

চট্টগ্রাম: ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভক্ত অনুরক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন খ্যাতিমান ভাষাবিজ্ঞানী একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক গবেষক ড. মাহবুবুল হক।  

শনিবার (৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেছেন, অধ্যাপক মাহবুবুল হকের পঁচাত্তর বছরের যে জীবন, তা বহুবিধ ও বিচিত্র কর্মে আলোকিত।

তাঁর কৈশোর ও যৌবনে তিনি চট্টগ্রাম শহরে বাম রাজনীতির একজন অগ্রগণ্য কর্মী ও সংগঠক হিসেবে নিজের পরিচয়কে বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি অধ্যাপনাকে কর্মজীবনের পাথেয় করেছেন।
তিনি এখনো এই কর্মে সম্পূর্ণভাবে নিমগ্ন। গবেষক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। পেয়েছেন স্বীকৃতি। তাঁর পিএইচডি অভিন্দর্ভের গবেষণার বিষয় ছিল : তিন বাম কবি- সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সুকান্ত ভট্টাচার্য। এই তিন কবিই নিপীড়িতজনের কবি, তাঁর যৌবনের রাজনীতির ভালোবাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই কবিরা বাংলার কাব্যক্ষেত্রে বিশেষ এক ধারার সৃষ্টি করেছিলেন। পরম যতেœ মাহবুবুল হক তাঁদের কবিতার বৈশিষ্ট্য উদ্‌ঘাটন করার চেষ্টা করেছেন।

ড. মাহবুবুল হক সংবর্ধনা পরিষদের আহ্বায়ক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক সভাপতি ড. মহীবুল আজিজ, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম, চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর রীতা দত্ত। স্বাগত বক্তব্য দেন ড. মাহবুবুল হক সংবর্ধনা পরিষদ'-এর সচিব সাংবাদিক সাহিত্যিক রাশেদ রউফ।  

আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম একাডেমির মহাপরিচালক প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী, লেডিস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট খালেদা আউয়াল, বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রি কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান।  

 এম এ মালেক বলেন, ড. মাহবুবুল হক আমার প্রিয়ভাজনদের মধ্যে অন্যতম। তার সবচেয়ে বড় গুণ, সে অত্যন্ত পরিশ্রমী। তার ধৈর্য আছে। সহ্য করার ক্ষমতা আছে। আছে রসবোধ। সুন্দর করে কথা বলে। ভদ্র রুচিশীল আচরণের জন্য সে বিশিষ্ট। মিষ্টভাষী এই মানুষটার মধ্যে নানা সুন্দর ও অপূর্ব গুণের সমন্বয় ঘটেছে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে। সৃজনে মননে সবসময় সে ক্রিয়াশীল। ঝঞ্ঝাটমুক্ত তাঁর পথচলা। শান্ত জীবনধারায় সে সচল। এক কথায় অনন্য ব্যক্তিত্ব ড. মাহবুবুল হক।  

একজন গবেষক, ভাষাবিদ ও অধ্যাপক হিসেবে বিশিষ্টতা অর্জন করেছে অনেক আগেই। অধ্যাপনায় অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেছে দেশে- বিদেশে। বাংলাদেশ, ভারত ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় শ’খানেক বই। পেয়েছে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল পদক, মধুসূদন পদক, চট্টগ্রাম একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা। আমি দেখেছি ড. মাহবুবুল হকের মধ্যে সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য আছে গভীর মমত্ববোধ। কাজের প্রতি নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সততার গুণে সে আজ এ অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তার মেধার সঙ্গে সমন্বয় ঘটেছে তার শ্রম। মাহবুব বর্তমানে অসুস্থ শরীর নিয়েও তার লেখালেখির কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি তার সুস্থ ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি।

 মফিদুল হক বলেন, ভাষাতাত্ত্বিক হিসেবে ড. মাহবুবুল হক দুই বাংলায় সমাদৃত। তিনি একজন অদম্য মানুষ। তিনি পদাতিকের সাধক। জ্ঞানের অনুসন্ধানের তিনি আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, সম্পৃক্ত থেকেছেন জাগরণী কাজপ।  

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সংবর্ধেয় ব্যক্তিত্ব শিক্ষাবিদ ড. মাহবুবুল হক বলেন, নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমার বেড়ে ওঠা। শিক্ষকরা আমাদের রাজনীতি শেখান নি। তারা আমাদের জীবনবোধ শিখিয়েছিলেন। তারা আমাদের মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। তারা আমাদের দেশব্রতী ও বিশ্বব্রতী হওয়ার প্রেরণা দিয়েছিলেন। এই প্রেরণা আমি আজও বহন করে চলেছি।  

তিনি আরো বলেন, আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশে অনেক উন্নতি হচ্ছে। সেই উন্নতি হচ্ছে বস্তুগত উন্নতি। কিন্তু মনোজাগতিক উন্নতিতে আমরা পিছিয়ে আছি। তিনি বলেন, কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে একটি সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দেশ চতুর্থ বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।  

একুশে পদকপ্রাপ্ত গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. মাহবুবুল হকের সংবর্ধনা উপলক্ষ্যে দুটো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একটি প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে, ‘মাহবুবুল হক সংবর্ধনাগ্রন্থ’। সম্পাদনা করেছেন রাশেদ রউফ। সহযোগী সম্পাদক শাকিল আহমদ, নিজামুল ইসলাম সরফী ও ইসমাইল জসীম। অন্যটি প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা থেকে, ‘মাহবুবুল হক সম্মাননাগ্রন্থ’। সম্পাদনা করেছেন ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ ও ড. সৈয়দ আজিজুল হক।  
সংবর্ধিত ব্যক্তিত্ব ড. মাহবুবুল হককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধান অতিথি ড. অনুপম সেন। উপহার তুলে দেন প্রাবন্ধিক শাকিল আহমদ এবং ড. মাহবুবুল হকের ওপর প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যাটি তুলে দেন ড. মাহবুবুল হক সংবর্ধনা পরিষদ'-এর সমন্বয়ক, প্রাবন্ধিক নিজামুল ইসলাম সরফী।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৩
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ