ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আড়তে তরমুজের পাহাড়, চাষির মুখে হাসি নেই

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২৪
আড়তে তরমুজের পাহাড়, চাষির মুখে হাসি নেই ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: মৌসুমের শুরুতে অপরিপক্ব তরমুজ বেশি দামে বিক্রি করায় ঝড় উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ‘বয়কট’র ডাক দিয়েছিলেন নেটিজেনরা।

ক্রমে বাজারে সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কমতে থাকে রসালো ফলটির। এখন ফিরিঙ্গিবাজারের আড়তগুলোতে তরমুজের পাহাড়।
হাটবাজার, অলিগলির ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে ফলের দোকানে তরমুজ আর তরমুজ। তবে চাষির মুখে হাসি নেই! 

বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, আমানত ফার্ম, মদিনা ফার্ম, ঢাকা ফার্ম, বোয়ালখালী ফার্ম, নোয়াখালী ফার্ম, চিটাগাং ফার্ম, পরান ট্রেডার্স, ইসলাম ট্রেডার্স, শাহজালাল এন্টারপ্রাইজ, রহমান ট্রেডার্স, আল মক্কা ফার্ম, নাজিম ট্রেডার্স, আল্লাহর অলি হাফেজ নগর ফার্ম, আল্লার দান ফার্ম ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব আড়তে নোয়াখালী, রাঙামাটি, ভোলা, বরিশাল, খুলনা থেকে নিয়মিত তরমুজ আসছে।  

বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে ফিরিঙ্গিবাজারের আড়তে কথা হয় সুবর্ণচরের চাষি মো. আবদুল্লাহর (৭০) সঙ্গে। তিনি ১৫ টাকায় কাভার্ডভ্যান ভাড়া দিয়ে আড়াই হাজার ছোট বড় তরমুজ এনেছিলেন আড়তে। জায়গা খালি না থাকায় আড়তের সামনেই তরমুজ বোঝাই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রথম দিকে বেশি দামের আশায় কিছু চাষি অপরিপক্ব তরমুজ বাজারজাত করেছিল। আকারে বড় হলেও ভেতরে ছিল সাদা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবার তরমুজের বাজারে। তবে এখন বেশিরভাগ তরমুজই পরিপক্ব এবং ভেতরে লাল, মিষ্টি।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আট কানি জমিতে তরমুজ লাগিয়েছি এবার। গোল হরি বীজ ৬-৭ হাজার টাকা, জাম্বু বীজ ২ হাজার ৬০০ টাকা, বাংলালিংক তরমুজের বীজের প্যাকেট ১২০০-২০০০ হাজার টাকা। মোটর দিয়ে দুইবার পানি সেচ দিছি। কলের লাঙল দিয়ে জমি চাষ দিয়েছি। ৬০০ টাকা দরে দিনমজুর দিয়ে জমিতে চার হাত পর পর বীজের গর্ত করেছি। এক গর্তে তিনটি করে বীজ দিয়েছি। কানিপ্রতি ২০ হাজার টাকা ওষুধ খরচ গেছে। সার খরচ গেছে প্রচুর। এখন তরমুজ তোলার জন্য ৬০০ টাকা দামের দিনমজুর দিছি। তাদের এক বেলা খাওয়াতেও হয়। ১৫ হাজার টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে প্রথমবার আড়তে আনলাম তরমুজ। আশানুরূপ দাম নেই। ক্রেতাও কম।  

তিনি বলেন, তরমুজের আকার ভেদে ১ থেকে ৪ নম্বর ভাগ করা হয়। ১০০টি বড় তরমুজ  ১৬-২০ হাজার টাকা। সবচেয়ে ছোট তরমুজ প্রতিশ’৩ হাজার টাকা। আড়তদারের কমিশন ১০ শতাংশ। লেবারদের দিতে হয় তরমুজ প্রতি ৩ টাকা।  

অভিজ্ঞ এ তরমুজ চাষি বলেন, এবার সুবর্ণচরে তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। এক কানি ক্ষেতের তরমুজ আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু জাহাইজ্জাচরে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এক কানি ৫ লাখ টাকাও বিক্রি হয়েছে। মূলত যারা কানি হিসেবে তরমুজ কিনে তারা ছোট বড় পরিপক্ব, অপরিপক্ব সব তরমুজ তুলে ফেলে। তাই কোনোটা সাদা থেকে যায়।  

ঢাকা ফার্মের ব্যবস্থাপক তানজিদ জানান, তরমুজ চাষিরা ভালো নেই। কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, খরা, পোকা, শিলাবৃষ্টি, পরিবহন সমস্যাসহ নানা প্রতিকূলতা জয় করে তরমুজ ফলান তারা। ন্যায্যমূল্য পান না। অনেকে দাদন নিয়ে যান, আর ফেরেন না।  

সুবর্ণচর থেকে কাভার্ডভ্যানে তরমুজ নিয়ে এসেছেন চালক মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তরমুজের মৌসুম ঘিরে সেখানে একশ্রেণির দালালের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ১৫ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে ৩ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে। আমাকে দিয়েছে ১২ হাজার টাকা। সরকারি প্রকল্পের পণ্য নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে জোর করে তরমুজের ভাড়া গছিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার ইফতারের সময় রওনা দিয়েছিলাম। আড়তে পৌঁছি রাত দেড়টায়। এখনো তরমুজ নামানো হয়নি গাড়ি থেকে।  

রাঙামাটি থেকে এক ট্রাক তরমুজ নিয়ে ফিরিঙ্গিবাজার আড়তে এসেছিলেন আবদুর রহমান। তিনি জানান, আড়াই হাজার তরমুজ এনেছি। ভাড়া দিয়েছে ১৪ হাজার টাকা। সকাল ১১টায় রওনা দিছি, বিকেল সাড়ে ৩টায় ফিরিঙ্গিবাজার।  

বায়েজিদ এলাকায় খুচরা তরমুজ বিক্রি করেন মো. হারুণ। তিনি বিভিন্ন আড়তে ঘুরে তরমুজ দেখছিলেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ১০০ তরমুজ কিনলে ১০টি পচা, ভেতরে সাদা পড়বেই। তা ছাড়া আড়তদারি দিতে হয় ৩০০ টাকা, লেবার চার্জ ১০০ টাকা। সিএনজি বা পিকআপ ভাড়া ৪০০-১০০০ টাকা। তারপরও শান্তি নেই। ক্রেতারা ন্যায্য দামই দিতে চায় না।  

শুধু ফিরিঙ্গিবাজারের আড়তে নয়, স্টেশন রোডের ফলমণ্ডির সামনে ফ্লাইওভারের নিচে, বহদ্দারহাট, সিইপিজেড, কাপ্তাই রাস্তার মাথার কামালবাজারসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে তরমুজের স্তূপ দেখা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।