ঢাকা, সোমবার, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিপদমুক্ত এমভি আবদুল্লাহ: মেরিটাইম খাতে স্বস্তি

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
বিপদমুক্ত এমভি আবদুল্লাহ: মেরিটাইম খাতে স্বস্তি ...

চট্টগ্রাম: ২৩ নাবিকসহ এক মাস সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা ‘এমভি আবদুল্লাহ’ বিপদমুক্ত হওয়ায় মেরিটাইম খাতে স্বস্তি নেমে এসেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাহাজটি জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজটির মালিকপক্ষকে বাহবা দিচ্ছেন শিপিং সংশ্লিষ্টরা।

 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার যে প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি তা প্রশংসার দাবি রাখে। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ অভিযান পরিচালনা করলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল।

এক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেভাবে নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ রুটে জাহাজ চালাতে হলে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে- এটাই হচ্ছে এ ঘটনার ম্যাসেজ।  

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, জাহাজটির মালিকপক্ষ নিরাপদে নাবিকসহ জাহাজটি জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত করতে ধৈর্য ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারও সার্বিক সহযোগিতা করেছে। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষ জানিয়েছে, ১৪ বছর আগে তাদের জাহাজ ‘জাহান মণি’ উদ্ধারে বেশি সময় লেগেছিল। কারণ তখন অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের অভাব ছিল। এবার আগের অভিজ্ঞতার আলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি, জিম্মি থাকাবস্থায় এমভি আবদুল্লাহর আশপাশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক যুদ্ধজাহাজ নজরদারি করছিল। আবার স্থলভাগে পুলিশও জলদস্যুবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। এতে জলদস্যুদের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল হয়তো। সে যাই হোক, আমাদের জন্য আনন্দের খবর হলো- বিপদমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে সন্ধিগ্ধ এলাকায় জাহাজ চালানোর সময় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। যদিও জলদস্যুরা হিংস্র এবং অভিজ্ঞ। এক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে ভারী অস্ত্রসহ পেশাদার আর্ম গার্ড নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জাতিসংঘ রিস্কি এলাকাগুলোতে টহল বাড়াতে পারে।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম’র সিইও মেহেরুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ায় জলদস্যুর কবলে পড়া একটি দুর্ঘটনা। পজেটিভ দিক হচ্ছে, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।  

তিনি বলেন,  বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর ১২টায় ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটি হাইরিস্ক এরিয়া পেরিয়েছে। ১২ নটিক্যাল মাইল স্পিডে জাহাজটি চলছে। ২২ এপ্রিল জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। এরপর নাবিকরা ওই জাহাজেই কিংবা ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন। এ পর্যন্ত দুইজন নাবিক ফ্লাইটে আসার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। বাকিরা ওই জাহাজেই দেশে ফিরবেন ইনশাআল্লাহ।  

ওই জাহাজে নাবিকরা দেশে ফিরতে কতদিন সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখান থেকে ভাড়া নিয়েই জাহাজটি দেশে আসবে। সব মিলে ২৬-২৭ দিন সময় লাগতে পারে।  

গত রোববার (১৪ এপ্রিল) কেএসআরএম গ্রুপের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমাদের জাহাজ হাইরিস্ক এরিয়ার বাইরে ছিল। ২০০ নটিক্যাল মাইল রিস্কি। আমরা ৬০০ নটিক্যাল মাইলে ছিলাম। তাই তখন আর্ম গার্ড নিইনি আমরা।  

গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করেছিল। মুক্ত হওয়ার সময় ওই জাহাজ থেকে নেমে যায় ৬৫ জন জলদস্যু।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।