ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২৫ টাকাও এসেছিল বাবরের এভারেস্ট অভিযানের তহবিলে

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
২৫ টাকাও এসেছিল বাবরের এভারেস্ট অভিযানের তহবিলে ...

চট্টগ্রাম: বাবরের এভারেস্ট অভিযানের তহবিলে মাত্র ২৫ টাকা অনুদান পাঠিয়েছিলেন এক ভক্ত। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকাও এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাবে।

এভাবে দুইটি মোবাইল ফোন, একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব এবং পৃষ্ঠপোষকদের অনুদান মিলে তহবিলে জমা হয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এ অভিযানে খরচ হয়েছে ৪৫ লাখ টাকার বেশি।
 

সফল এভারেস্ট অভিযান শেষে দেশে ফেরার পর বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন বাবর আলীর এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানের সমন্বয়ক শরীফ মো. ফরহান জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অরাজনৈতিক সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছেন বাবর আলীর এভারেস্ট অভিযানের তহবিলে। যখন আমরা ক্রাউড ফান্ডিংয়ে যাই, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ সহায়তা করেছে। ২৫ টাকা পর্যন্ত বিকাশে পেয়েছি। যে টাকায় বাবার এভারেস্ট জয় করেছে। আমরা মনে করি বাবর আলী একা উঠেনি, তাদের সবাইকে নিয়ে উঠেছে। অভিযানে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

ফরহান জামান বলেন, অভিযানের তহবিলে ৩০ লাখ টাকার মতো জমা হয়েছিল সব মিলে। বাকি ১৫ লাখ টাকার মতো ঋণ করতে হয়েছে। আমরা তহবিল সংগ্রহের কাজটি এখনো বন্ধ করিনি। বুধবার (২৯ মে) দুপুরেও মোবাইল ফোনের হিসাবে দুই জন অনুদান পাঠিয়েছেন। একজন ১০০ টাকা, অপরজন ১ হাজার টাকা।  

অভিযানের তহবিল সংগ্রহ প্রসঙ্গে বাবর আলী বাংলানিউজকে বলেন, এর আগে জীবনে যত অ্যাডভেঞ্চার করেছি নিজের সঞ্চয়ের টাকায় করেছি। আমি খুব কমে সন্তুষ্ট। আমার জীবনে বিলাসিতা কখনো ছিল না। যখনি যে চাকরি করেছি কিছু সঞ্চয় করেছি। এবারই প্রথম চেষ্টা করলাম পৃষ্ঠপোষকতা খোঁজার। কারণ টাকার পরিমাণ বেশি। সত্যিকার অর্থে টাকা জোগাড় করা একটি আর্ট। কীভাবে টাকা জোগাড় করতে হয় জানতাম না। পৃথিবীব্যাপী যারা অ্যাডভেঞ্চার করে তারা পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। আমার মাথায় আসলো এ বছর এভারেস্ট সামিট করবো। কিছু পৃষ্ঠপোষক পেয়েছি। কিন্তু টাকাটা ওঠেনি। চিন্তা করলাম এত টাকা তো আমার নেই। ক্রাউন্ড ফান্ডিং বা লোকের কাছে হাত পাতা শুরু করি। যারা আমাকে বিশ্বাস করেন তারা টাকা দিয়েছেন। এত কিছুর পরেও ১৫-১৬ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছে।  

কেন এ অভিযানের চ্যালেঞ্জ নিলেন জানতে চাইলে বলেন, পর্বতারোহন হচ্ছে খেলার রাজা। ফুটবলে ভুল করলে গোল খেলেন। ক্রিকেটে হেরে গেলেন। কিন্তু পর্বতারোহনে ভুল হলে মৃত্যু। আমি বার্তা দিতে চেয়েছি, স্বতন্ত্র খেলায় আমরাও পারি। আমি সেটি প্রমাণ করেছি। আগামীতে আরও পর্বতারোহনের ইচ্ছে আছে। আত্মবিশ্বাস ছিল এভারেস্ট ও লোৎসের চূড়ায় পৌঁছানোর পর আবার দেশে ফিরে আসব। সেটিই হলো। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ, প্রচেষ্টা, আকাঙ্ক্ষা—সবই পূরণ হলো। দেশের মানুষ যেভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে, এতে আমি আনন্দিত।

গত ১৯ মে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন বাবর। যিনি পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহী। এর দুই দিন পর ২১ মে নেপাল সময় সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৬টা ৫ মিনিট) লোৎসে পর্বতের শীর্ষে (৮ হাজার ৫১৬ মিটার) ওঠেন ৩৩ বছর বয়সী বাবর। দুই পর্বতে সঙ্গে ছিলেন নেপালের গাইড বাইরে তামাং। নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামের ট্রেকিং ও পর্বতাভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে নতুন একটি অধ্যায় রচনা করেন বাবর।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।