ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি: নতুন কমিটি ঘিরে বাড়তে পারে বিরোধ

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৮ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি: নতুন কমিটি ঘিরে বাড়তে পারে বিরোধ ...

চট্টগ্রাম: মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করার ২৪ দিন পর ফের দুই সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ ও সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজিমুর রহমানকে।

কমিটি ঘোষণার পর থেকেই কমিটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।  

অভিযোগ রয়েছে, অতীতে নগর রাজনীতিতে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের উল্লেখ করার মতো কোনো ভূমিকা ছিল না।

এরশাদ উল্লাহ নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে ভাবেন না। সচিব নাজিমুর রহমানও একই ধারায় রাজনীতি করে আসছেন। নগরের রাজপথে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেও ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। আংশিক কমিটির ক্ষেত্রে মামলায় জর্জরিত ও পদায়নের ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র না মানায় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে। মূলত আংশিক কমিটিতে শক্তিশালী শাহাদাত-বক্করের তুলনায় তাদের অবস্থান নেই বললেই চলে। তবে একটি অংশের অভিযোগ, জেলার বাইরের নেতাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় একটি অংশ আগের কমিটি বিলুপ্ত করে এ কমিটি গঠনে অন্দরমহলে নিয়ামকের ভূমিকা রেখেছেন।  

মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা যায়,  এরশাদ উল্লাহকে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দলের ভেতর কোন্দল, সংঘাত এবং বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় বহিষ্কার করা হয়েছিল। একই বছরের ১২ মার্চ ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচির প্রচারণার অংশ বোয়ালখালী উপজেলার ফুলতলায় বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খানের গাড়ি ভাংচুর করে এরশাদ উল্লাহর সমর্থকরা। ওই গাড়িতে দলের তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারও ছিলেন।  

এছাড়াও ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হরতালের সময় নগরের চান্দগাঁও থানা এলাকায় পিকেটিং করার সময় তৎকালীন চান্দগাঁও ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি মোশারফ উদ্দীন, সহ-সভাপতি ফরমান রেজা লিটন ও তৎকালীন নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিজিএমইএ নেতা এরশাদ উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে ছিল পুলিশ। বিজিএমইএ’র নেতাদের অনুরোধে এরশাদ উল্লাহ জীবনে রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। মোশারফ উদ্দীন ও ফরমান রেজা লিটন দীর্ঘদিন কারাবাসে থেকে মুক্তি পান। এছাড়া এরশাদ উল্লাহ জীবনে ছাত্রদল ও যুবদল এবং বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ১৯৯৪ সালের মীর নাছির উদ্দীন ও গোলাম দস্তগীর নগর বিএনপির কমিটিতে তৎকালীন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের অনুরোধে সরাসরি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন।

দলটির বিভিন্ন সূত্র জানায়, এক যুগ আগে নগর বিএনপিতে কয়েকটি গ্রুপে জর্জরিত ছিল রাজনীতি। ওই সময়ে রাজনীতির চেয়ে গ্রুপিংয়ের কারণে আলোচনায় বেশি ছিল নগর বিএনপি। সে সময় কমিটি গঠন নিয়ে মারামারি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তবে ২০১০ সালে অনেক সিনিয়র নেতাকে টপকিয়ে তরুণ নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন সাধারণ সম্পাদক এরপর ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক যুগের বেশি সময় ধরে গ্রুপিং মুক্ত রেখেছেন আবুল হাশেম বক্কর মিলে। পাশাপাশি শাহাদাত-বক্কর দুজনই চট্টগ্রামের বাসিন্দা হওয়ার কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন দলের এই ক্রান্তিকালীন সময়েও।  

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির মতো বড় দলে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটির পরিবর্তন হওয়া উচিত। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আংশিক কমিটিতে পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন হয়নি। আগামীতে নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করা এবং সেখানে বড় ধরনের সাফল্য পেতে হলে পরীক্ষিত-যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। যারা রাজপথে কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে ছিল, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। পদায়নের ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র না মানায় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কমিটিতে চট্টগ্রামের বাইরে নাজিমুর রহমানকে রাখা হয়েছে, তার বাড়ি চাঁদপুর। মূলত তাকে কমিটিতে ভেড়ানোর জন্য চট্টগ্রামের নেতাদের একটি অংশের পাশাপাশি ঢাকার নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পক্ষান্তরে মামলায় জর্জরিত এবং পরীক্ষিত নেতাদের কমিটির মূল পদে স্থান হয়নি। তাদের চাওয়া, শুধু পুনর্গঠন হলে হবে না, এমন পুনর্গঠন প্রয়োজন, যেখানে সবাই সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে রাজনীতি করতে পারেন।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপির এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ঘোঘিত কমিটিতে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। অথচ বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে মানা হয়নি সিনিয়র-জুনিয়র চেইন অব কমান্ড। নগর বিএনপিতে এক ধরনের অভিভাবক ছাড়া কমিটি হয়ে গেছে। সেটার প্রমাণ সামনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভা-সমাবেশে পাওয়া যাবে।  

কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি হয়েছে। নতুন কমিটি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে আশা করি। যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, তাদের মূল্যায়ন করা দরকার। জেলে থাকা নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখা ও অনেক নেতাকর্মী মামলা পরিচালনা করতে পারে না, তাদের পাশে থাকতে হবে। আমি দীর্ঘ ১৮ বছর চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রেখেছিলাম।

কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতে ব্যালেন্স করা হয়েছে। কোনো ধরনের পক্ষের কমিটি হয়নি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি হয়েছে। কমিটির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের পাশে থাকবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সচিব নাজিমুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দল নেতাকর্মীদের বহিস্কার ও মূল্যায়নও করতে পারে। দল থেকে যেকোনো সময় যে কেউ বহিস্কার হতে পারে, এটা দলে নীতি নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত। নতুন কমিটিতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা নগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে দলীয় কর্মসূচি পালন করবো।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।