ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এখন চেয়ারম্যান প্রার্থী!

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এখন চেয়ারম্যান প্রার্থী! পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সমীর। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রবিউল আলম সমীর। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও অস্ত্র ও গুলিসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সমীর। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসীর তালিকায় থাকা সমীরের বিশাল বাহিনী রয়েছে মগধরা ইউনিয়নে। এছাড়া স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখন তারা সবাই মিলে নেমেছেন ভোটের মাঠে। নিয়মিত সমীরের হয়ে তারা এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। এতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সাধারণ ভোটারের মধ্যে।

স্থানীয়দের দাবি, দাগী সন্ত্রাসী সমীর শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকলে যেকোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে। এ কারণে সমীর ও তার বাহিনীর প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আলাদা নজরদারি চালাতে হবে। একই সঙ্গে ভোটের আগেই তার হাতে থাকা অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর। আগে তিনি একই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। এখন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে সমীর কিশোর গ্যাং পরিচালনা, অস্ত্র দিয়ে হুমকি ও ছোটখাট ঘটনায়ও অস্ত্র ব্যবহার করেন। এছাড়া সন্দ্বীপের দক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগর অংশে জলদস্যু বাহিনী নিয়ন্ত্রণ, সাগর রুটে ইয়াবা বাণিজ্যের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, জায়গা দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  

গত ২৪ ডিসেম্বর পুলিশের চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে সমীরসহ একাধিক জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এই মামলায় গত ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে মগধরায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে সমীরকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় সমীরের কাছ থেকে ওয়ান শুটার, শাটার গান ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সন্দ্বীপ থানায় একটি মামলাও করা হয় তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া সমীরের ভাই জাহাঙ্গীর সন্দ্বীপ উপজেলার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। এ মাদক ব্যবসার টাকায় তিনি চট্টগ্রাম শহরে ফ্ল্যাট, সন্দ্বীপে ইঁট ভাটা, গ্রামে বহুতল ভবন ও একাধিক ট্রাকের মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার মাদক ব্যবসার এসব কালো টাকা ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনে এ ধরনের সন্ত্রাসী প্রার্থী হলে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনী মাঠে সন্ত্রাসীদের ফিরে আসা চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কের বিষয়। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার স্বার্থে নির্বাচন কর্মকর্তাদের উচিত সন্ত্রাসীদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। যাতে নাগরিকরা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মগধরা ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভোটাদের সমীর ও তার ভাই জাহাঙ্গীর হুমকি দেওয়া শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে মারধর করে। সমীর ও তার ভাই জাহাঙ্গীর মিলে ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।  

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রবিউল আমল সমীর বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী আমি একা নয়, অন্য প্রার্থীও রয়েছে। আমার অবস্থান ভাল বলে, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। আমার বিরোধীরাই এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। ইয়াবার কারবারের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা ইয়াবার সঙ্গে জড়িত নয়, যারা বলছেন তাদের আমার ভাইকেসহ ধরিয়ে দিতে বলেন।  

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেবাশীষ দাশ বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে। এখনও নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। মোট ৪ জন প্রার্থী ছিল। এর মধ্যে ২ জন প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাইনি। আশা করছি নির্বাচন পর্যন্ত পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে। প্রার্থী রবিউল আলমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেননি। কেউ অভিযোগ দিলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।  

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মগধরা ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।  

সমীরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা ও আরেকটি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে। তবে আর কোনো মামলার আসামি কি না সেটার পিসিআর দেখতে হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, মগধরার সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য পদত্যাগ করায় পদটি শূন্য হয়। এই পদে আগামী ২৭ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।