ঢাকা, শুক্রবার, ২ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পরিবার ব্যবস্থাপনায় পশ্চিমাদের চেয়ে দুইশ বছর এগিয়ে আছি: শায়খ আহমাদুল্লাহ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
পরিবার ব্যবস্থাপনায় পশ্চিমাদের চেয়ে দুইশ বছর এগিয়ে আছি: শায়খ আহমাদুল্লাহ ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, তথ্য প্রযুক্তিতে পশ্চিমারা যদি আমাদের চেয়ে একশ বছর এগিয়ে থাকে, তাহলে পরিবার ব্যবস্থাপনায় আমরা পশ্চিমাদের চেয়ে দুইশ বছর এগিয়ে আছি। ইসলামের যে পরিবার ব্যবস্থাপনা, এটা পশ্চিমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।

একটু খোঁজখবর নিলেই সেটা বুঝতে পারবেন। তাই পশ্চিমাদের সংস্কৃতি মুসলমানদের আমদানি করার কোনো প্রয়োজন নেই।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে মিনার কর্তৃক আয়োজিত সীরাত মাহফিলে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে শায়খ আহমাদুল্লাহ এসব কথা বলেন।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ খালেদের সঞ্চালনায় সীরাত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন চবির আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম আবদুল কাদের। প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সীরাত একটি বিস্তর আলোচনা। তাঁর আগমনের পর পৃথিবীর সবচেয়ে অসভ্য মানুষগুলো সোনার মানুষে পরিণত হয়েছে। মানুষ তার স্রষ্টাকে খুঁজে পেয়েছে, সুখ ও শান্তি খুঁজে পেয়েছে। তাঁর দাওয়াতের ফলে যখন একের পর এক সাম্রাজ্য হস্তগত হওয়া শুরু করলো এমন পরিস্থিতিতেও তিনি সাধারণ একটি অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন নির্বাহ করেন।  

মক্কা বিজয়ের পরেও রাসুল (সা.) মুশরিকদেরকে মুক্ত ঘোষণা করে দেন। তাঁর জীবদ্দশায় ২৭টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সবমিলিয়ে মাত্র ১ হাজার ১৮ জন মানুষ মারা গেছেন। যার বড় একটি অংশ ছিলো ইয়াহুদি। এছাড়া সবগুলো যুদ্ধ মিলিয়ে মাত্র ১টি শিশু ও ১ জন নারী মারা গেছেন। অথচ ফিলিস্তিনের দিকে তাকান, মানবাধিকারের বুলি আউড়ানো আমেরিকার মদদে ইজরায়েলি হামলায় হাজার হাজার নারী ও শিশু খুন হয়েছে। তারা শিশুদের রক্ত দিয়ে নাস্তা করে। এখন একটা ছোট্ট অঞ্চল দখল করার জন্য শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়।  

তিনি আরও বলেন, মহানবীর দেখানো যাকাত ব্যবস্থা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, কোনো সমাজেই দারিদ্র্যতা থাকবে না। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের কাছে যে পরিমাণ সম্পদ  আছে, বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকা যাকাত আদায় করা সম্ভব। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যদি যাকাত সংগ্রহ এবং বণ্টন করা যায়, তাহলে মাত্র ৩ বছরে দারিদ্র্যতা জাদুঘরে যাবে। তাই আমাদের ইসলামী অর্থনীতির সৌন্দর্য বুঝতে হবে।

চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল হক বলেন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও রাসূলের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। রাসূল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম সাংবাদিক। তিনি আল্লাহর কাছ থেকে অহীর মাধ্যমে তথ্য নিয়ে মানুষের মাঝে প্রচার করতেন। তাই যখন কোনো তথ্য আসবে তা ভালোভাবে যাচাই করে এরপর সংবাদ প্রকাশ করতে হবে। সাংবাদিকতায় মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। কেউ পাশে থাকুক বা না থাকুক সত্য প্রচারের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে সাংবাদিকতা করতে হবে।  

অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার বলেন, রাসূল (সা.) হলেন আমাদের একমাত্র আদর্শ। আল্লাহ তার রাসূলকে আমাদের জন্য শিক্ষক এবং চিকিৎসক হিসাবে পাঠিয়েছেন। সভ্যতা মহানবী (সা.) থেকে শুরু হয়নি বরং এটা যুগে যুগে নবী রাসূলদের সময়ও ছিল। সভ্যতার প্রধান হলো মানুষ। এই মানুষের পরিচয় দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবীদের পাঠিয়েছেন।

বায়তুশ শরফ মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আবু নোমান বলেন, ১৬ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো যা করতে পারেনি তা ছাত্র সমাজ করে দেখিয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী শাসন থেকে ২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ছাত্রসমাজের ভূমিকা অতুলনীয়। রাসূল (সা.) যখন যুবক ছিলেন, সমাজের বৈষম্য দূর করার জন্য হিলফুল ফুজুল গঠন করেছিলেন। ন্যায় বিচার এবং শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে জালিম শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলা। তাই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জীবন দেওয়া সবাই শহীদ হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) শামীম উদ্দিন খান বলেন, যেখানে মানবতা হাহাকার করছিলো, সেই জাহেলি যুগ রাসূল (সা.) তাঁর আদর্শ দিয়ে বদলে দিয়েছেন। রাসূলের ৬৩ বছরের জীবন সীরাত আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তার জীবনীর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ে সমাধান দিয়েছেন। আমরা যদি রাসূল (সা.) কে আদর্শ হিসাবে মেনে নিই তাহলে জীবন আলোকিত হবে এবং আজকের আলোচনা সার্থক হবে। আমি ওয়াদা করছি, আমার ব্যক্তি জীবনে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে এমন কোনো কাজ করবো না, যেটা রাসুলের চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। আশাকরি আপনারা এ ক্ষেত্রে আমাকে সহযোগিতা করবেন।

মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ আলী, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন কাদেরী ও নাসিহা একাডেমির চেয়ারম্যান মাওলানা শরিফ উদ্দিন পাটোয়ারী।  

ইসলামী ব্যাংক, আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল লিমিটেডের অর্থায়নে অনুষ্ঠিত মাহফিলে সংগীত পরিবেশন করে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী ও আজাদী মঞ্চ।

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।