ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৪ মাস ধরে উধাও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি, অফিসকর্তা বলছেন চিকিৎসা ছুটি!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৪
৪ মাস ধরে উধাও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি, অফিসকর্তা বলছেন চিকিৎসা ছুটি! ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. এরাদুল হক নিজামী ভুট্টো। তিনি আবার চাকরি করেন চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী পদে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ভুট্টো অফিসে আসছেন না। ভুট্টো চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটনের বিভিন্ন থানা ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার আসামি।
অভিযোগ রয়েছে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি অফিসে আসছেন না। তবে গত ৪ মাস ধরে চিকিৎসা ছুটিতে আছেন দাবি চট্টগ্রাম জেলার রেজিস্ট্রার মিশন চাকমার। এদিকে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা-পরিদর্শক ভুট্টোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও উল্টো পুরস্কৃত করে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে সংযুক্তি করা হয়। কিন্তু এই সংযুক্তি করার পরও অফিসে যোগদান না করলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।  

সদর রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারীদের  অভিযোগ, কোনো অনুমতি ছাড়াই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ মাস ৪ দিন অফিস করেননি ভুট্টো। জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা ভুট্টোকে বাঁচাতে চিকিৎসা ছুটির কথা বলছে। আসলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছুটির আবেদনই করা হয়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে ভুট্টো পলাতক রয়েছেন।  

ভুট্টো সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সখ্য থাকায় একাধিক অভিযোগ থাকার পরও গত ১৫ বছর প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হলেও মন্ত্রী ও সচিবদের দিয়ে তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে ফোন দিয়ে সবকিছু ধামাচাপা দিতেন।

জানা যায়, ভুট্টো চট্টগ্রাম সাব রেজিস্টার অফিসে ১৯৯৬ সালে চাকরি নেওয়ার আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সূত্র ধরে এমপি, মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে তার ভালো সখ্য থাকায় ১৯৯৬ সালে নকলনবিশ হিসেবে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে চাকরি নেন। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর টিসি মোহরার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বদলি হন। সেখান থেকে যোগদানের মাত্র ২ মাস পর সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তদবির করে চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বদলি হয়ে আসেন।

আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের সুপারিশে ২০১৬ সালে জাল-জালিয়তি করে অফিস সহকারীর স্থায়ী পদে পদোন্নতি নিয়ে পুনরায় চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করেন। সেখানে ১০ বছর চাকরি করার পর ২০২০ সালে সন্দ্বীপ উপজেলায় বদলি করা হলেও তিনি একাধিক অসুস্থতার ছুটির আবেদন করে অফিস করেননি। সেখান থেকে ১০ মাস পরে ভুট্টোকে মীরসরাই সাব রেজিস্ট্রার অফিসে থাকে বদলি করা হয়। তিনি প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগর থেকে মীরসরাইয়ের বিভিন্ন আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে উপস্থিত থাকলেও ছুটি বিহীন এক বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাকরিতে অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মীরসরাই সাব রেজিস্ট্রার অফিসে অফিস সহকারী পদ থেকে চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বদলি করা হয়। সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে হলে তিনি আবার নিয়মিত অফিস করতেন, কিন্তু অন্য অফিসে বদলি করা হলে তিনি অসুস্থ হয়ে যেতেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সবকিছু ভুট্টোর নিয়ন্ত্রণ চলতো। কোনটি রেজিস্ট্রি হবে কোনটা হবে না, সেটা তিনি নির্ধারণ করে দিতেন। সেখানে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি করে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।  

এদিকে এই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মচারীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টম্বর নিবন্ধন মহ-পরিদর্শক মো. আল-মামুন চট্টগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী ভুট্টোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবিলম্বে অত্র কার্যালয়কে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করেন। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিপরীতে উল্টো তাকে একরকম পুরস্কৃত করে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে সংযুক্তি  করা হয়। কিন্তু সেখানেও ৩ মাসে তিনি যোগদান করেননি।

জেলা রেজিস্ট্রারের পূর্বানুমতি/ছুটি গ্রহণ/দপ্তর প্রধানের অনুমতি ব্যতীত ২০২৪ সালের আগস্টের ৫ তারিখ থেকে চট্টগ্রাম সদর সাব- রেজিস্ট্রার ও সর্বশেষ কর্মস্থল চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারের দপ্তরে আজ পর্যন্ত কখনোই উপস্থিত ছিলেন না ভুট্টো। সবশেষ চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত  তিনি যোগদান না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

অফিস সহকারী মো. এরাদুল হক নিজামী ভুট্টোর চিকিৎসা ছুটির আবেদনের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার সঞ্জয় কুমার আচার্য্যের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।  

চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পর সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত করার আগে সদর সাব রেজিস্ট্রার থেকে মেডিক্যাল (চিকিৎসা) ছুটিতে আছেন।  

তিনি আরও বলেন, অফিস সহকারী মো. এরাদুল হক নিজামী ভুট্টো সংযুক্তি দেওয়ার পর থেকে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে একদিনের জন্যও আসেননি। দুই মাস মেডিক্যাল ছুটির জন্য মাধ্যম দিয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেটা এখনো মঞ্জুর করা হয়নি। যোগদান করার পর কাগজপত্র দেখে মঞ্জুর বা মঞ্জুর না হলে বিনাবেতনে মঞ্জুর করা হবে।

চার মাস চিকিৎসা ছুটিতে থাকা অফিস সহকারী মো. এরাদুল হক নিজামী ভুট্টোর বিষয়ে জানতে চাইলে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা-পরিদর্শক মো. নূর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত অফিস সহকারী মো. এরাদুল হক নিজামী ভুট্টোর সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৪
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।