ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফলাফল নিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর অভিযোগ অসত্য, দাবি চবি আইন বিভাগের

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
ফলাফল নিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর অভিযোগ অসত্য, দাবি চবি আইন বিভাগের ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীর করা অভিযোগটি সত্য নয় বলে দাবি করেছে বিভাগটি।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে চবির আইন অনুষদের ডিন অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন আইন বিভাগের সভাপতি।

 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী। এছাড়া বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহা এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

 

এর আগে, গত ৩ অক্টোবর আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন বিভাগটির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোলাইমান বাদশা। সেসময় তিনি নির্মল কুমার সাহার উদাসীনতায় ৯ বছর ধরে স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল আটকে আছে বলে অভিযোগ করেন। অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলের সাথে টিউটোরিয়াল পরীক্ষার ফল যোগ না করায় এই দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে বলে দাবি করেন সুলাইমান।  

তবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর অভিযোগ সত্য নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে বিভাগটি। সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী বলেন, মোহাম্মদ সোলায়মান বাদশার সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি আইন বিভাগের ভাবমূর্তি এবং বিভাগের শিক্ষকের মান মর্যাদার সঙ্গে যুক্ত।  

এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল জটিলতা নিয়ে বলা হয়, চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা-২০১৪ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের মে-জুন মাসে এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফলাফলে দেখা যায় মোহাম্মদ সোলায়মান বাদশা ১০৪, ২০২, ২০৩, ৩০৬, ৪০২ নম্বর কোর্স ও সেশনালে অকৃতকার্য হয়েছে। অর্থাৎ সে প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় তখন পর্যন্ত উত্তীর্ণ হতে পারেনি। পরবর্তীতে চতুর্থ বর্ষ আইন স্নাতক সম্মান পরীক্ষা, ২০১৫ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের মে-জুন মাসে এবং ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। সেই ফলাফলেও দেখা যায় সোলায়মান বাদশা ১০৪, ২০২, ২০৩, ৩০৬ নম্বর কোর্স ও সেশনালে অকৃতকার্য হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৫ সালের পরীক্ষাতেও সে প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও সেশনালে অকৃতকার্য ছিল। ২০১৫ সালে পরীক্ষা দিয়ে সব বিষয়ে পাস করেছে বলে যে দাবি সে করেছে তা সত্য নয়। কারণ আইন বিভাগের অনার্সের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে প্রত্যেকটা বর্ষের প্রত্যেকটা ক্রেডিট অর্জন করতে হয়, না হলে তাকে অকৃতকার্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের টিউটোরিয়ালে একজন শিক্ষার্থী কত নম্বর পেয়েছে তা সে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার ফলাফল সম্বলিত মার্কশিট থেকেই জানতে পারে। উক্ত তিন বর্ষের টিউটোরিয়াল মার্কস সর্বমোট কত ছিল এবং চতুর্থ বর্ষে টিউটোরিয়াল মার্কস কত প্রয়োজন এটা নিশ্চয়ই তার জানা থাকার কথা।  

আইন বিভাগের সভাপতি আরও বলেন, চতুর্থ বর্ষ আইন স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষা, ২০১৫ এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ। উক্ত ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিভাগের সভাপতি হিসেবে নির্মল কুমার সাহার কাছে টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় বসার অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। কারণ ২০১৬ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত নির্মল কুমার সাহা আইন বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মোহাম্মাদ সোলায়মান বাদশার বক্তব্য শুনলে মনে হবে যে সে আইন স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামের সকল বর্ষের সকল টিউটোরিয়াল ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।  

ওই শিক্ষার্থী বলেছে, ২০১৭ সালে টিউটোরিয়ালসহ সব বিষয়ে পাস করেছে এবং পাশের পর অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহাকে অনার্স এর ফাইনাল রেজাল্ট পাবলিশ করার জন্য বললেও ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি তার রেজাল্ট পাবলিশ করেননি। এক্ষেত্রে প্রকৃত সত্য হলো, মোহাম্মদ সোলায়মান বাদশা প্রথম বর্ষের সকল কোর্স একাধিকবার বিশেষ পরীক্ষা দিয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে, দ্বিতীয় বর্ষের সকল কোর্স একাধিকবার বিশেষ পরীক্ষা দিয়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং তৃতীয় বর্ষের সকল কোর্স একাধিকবার বিশেষ পরীক্ষা দিয়ে ২০২৩ সালের মে মাসে উত্তীর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফল যেখানে ২০২৩ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় সেখানে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরীক্ষার ফল নির্মল কুমার সাহা প্রকাশ করেননি এ কথাটি মোটেও সত্য নয়।

তিনি আরও বলেন, চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রক্রিয়া মূলত অন্য তিনটি বর্ষের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার উপর নির্ভর করে। উক্ত তিনটি বর্ষের ফলাফল চূড়ান্ত হওয়ার পরপর চতুর্থ বর্ষের টিউটোরিয়ালের বিশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া এবং টিউটোরিয়ালের মার্কস প্রাপ্তির উপর ভিত্তি করে চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষা কমিটি ফলাফল চূড়ান্ত করতে পারে। উক্ত প্রক্রিয়া চলমান ছিল।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ সোলায়মান বাদশার সংবাদ সম্মেলন করার দিন পর্যন্ত তিনটি বিষয়ের টিউটোরিয়াল মার্কস না পাওয়ায় ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। পরীক্ষা কমিটি কোনো শিক্ষককে টিউটোরিয়াল পরীক্ষার নেওয়ার জন্য শুধুমাত্র অনুরোধ করতে পারে, বাধ্য করতে পারে না।

আইন বিভাগের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে ৬ বছরের মধ্যে তার অনার্স কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু, সোলায়মান বাদশাহ ১৫ বছরেও তার অনার্স সম্পন্ন করতে পারেনি। বিভাগের আন্তরিকতা ও পরীক্ষা কমিটির সার্বিক সহযোগিতার ফলে অদ্যাবধি তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়নি। অতএব, সোলায়মান বাদশাহর প্রেস কনফারেন্সে নির্মল কুমার সাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। চবি আইন বিভাগের সকল শিক্ষক এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর আনীত আভিযোগ সত্য নয়। আমরা আজ আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করলাম। তার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে যে জটিলতা ছিল সেটা তার কারণেই হয়েছে। বর্তমানে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা কমিটি তাদের চূড়ান্ত ফলাফল তৈরির কাজ করছে।  

অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহা বলেন, সে যেই অভিযোগ করেছে, এর বিপরীতে ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। তাই দেরিতে হলেও আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। তবে সে এখন পর্যন্ত ১৫ বার স্পেশাল পরীক্ষা দিয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় যে আমরা তাকে সবসময় সহযোগীতাই করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।