ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সালতামামি-২০২১

বছরজুড়ে বিতর্ক সিডিএর ভূমিকায়

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
বছরজুড়ে বিতর্ক সিডিএর ভূমিকায় ...

চট্টগ্রাম: প্রাণহানি থেকে শুরু করে ফ্লাইওভারে ফাটল সবকিছু নিয়ে বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সেবা সংস্থাগুলো দায়িত্বে অবহেলা, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হলেও দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ রুখতে পারেনি বিতর্কের পথ।

সংস্থাগুলোর এমন সমন্বয়হীনতার সমাধান করতে না পারলে নগরবাসীকে আরও খেসারত দিতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, প্রতিটি সংস্থা যদি প্রতি বছর নিজেদের কাজের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারতো তাহলে কাজের গুণগতমান এবং সেবা সংস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পেতো।

 

চট্টগ্রামে বছরব্যাপি চলা উন্নয়ন প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজই বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল, বাকলিয়া এক্সেস রোড উল্লেখযোগ্য।  

নালায় পড়ে ৫ জনের মৃত্যু 

চট্টগ্রামে এক বছরে নালায় পড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জুন নগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেট মেয়র গলিতে বৃষ্টির সময় সিএনজি অটোরিকশা সরু সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় খালে পড়ে যায়। এটিকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলা হলেও খালের পাশে কোনও ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকাকে সেবা সংস্থাগুলোর অবহেলা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  

এছাড়া গত ২৫ আগস্ট দুপুরে মুরাদপুর মোড়ে পা পিছলে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমদ নামের সবজি বিক্রেতা। প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও খোঁজ মিলেনি এ ব্যক্তির। গত ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদে নালায় পড়ে মারা যান এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। চলতি মাসের ৪ ডিসেম্বর নালায় নেমে স্রোতে ভেসে যায় ৬ বছরের এক শিশু। ৩ দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ জুন চান্দগাঁও থানাধীন বি-ব্লক এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সিএনজি অটোরিকশা উল্টে নালায় পড়ে যায়। তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও যেতে হয় হাসপাতালে। এসব দুর্ঘটনার পর একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সেরেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এনিয়েও দুই সংস্থার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়।
 
ফ্লাইওভারে ফাটল

গত ২৫ অক্টোবর রাতে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের ওপরে কালুরঘাটমুখী র‌্যাম্পের একটি পিলারে ফাটল দেখা দেয়। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও সিডিএর প্রকৌশলীরা এটিকে ফাটল নয় বলে দাবি করেন। এ ঘটনার মাস ঘুরতেই আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে ফাটলের ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই নিয়েও কোনও বক্তব্য দেয়নি সিডিএ ও ওয়াসা। এছাড়া দেওয়ান হাট ব্রিজও ঝুঁকিপূর্ণ বলে উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
   
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা নিয়ে দ্বন্দ্ব

গত ৮ জুন সিডিএ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয় সভায় এক্সপ্রেসওয়ে শুরুর প্রান্ত অর্থাৎ লালখান বাজার অংশের নকশা চূড়ান্ত করা হয়। এ নকশা অনুযায়ী পতেঙ্গা থেকে আসা চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির দুই লেন নেমে যাবে লালখান বাজার মোড়ের আগে। বাকি দুই লেন রাস্তার ডান পাশ (পূর্ব) দিয়ে সোজা জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সঙ্গে যুক্ত হবে। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শুরুর প্রান্তের নকশা নিয়ে আপত্তি তুলে চসিক। এ নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠান দফায় দফায় আলোচনায় বসেও সমাধানে আসতে পারেনি।
 
চসিকের দাবি, এ নকশা অনুযায়ী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে টাইগারপাস এলাকার পাহাড়ি সৌন্দর্য নষ্ট হবে। এনিয়ে সিডিএকে দুই দফা চিঠিও দেয় সিটি করপোরেশন। তবে কোনও চিঠিরই উত্তর দেয়নি সিডিএ।

বাকলিয়া এক্সেস রোড

বাকলিয়া এক্সেস রোডের অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে গড়ে ওঠা আলোচিত ১০ তলা ভবনের বিষয়ে সমাধান আসে। বাড়ির মালিক ১৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করার পর টাকা বাঁচাতে উদ্যোগী হয় সিডিএ। শেষ পর্যন্ত সড়কটির নতুন অ্যালাইনমেন্টের ডিজাইন করে গত ১২ জুলাই সিডিএর প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি ও বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়। নতুন ডিজাইন প্রস্তুত হলেও নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়তে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
 
বঙ্গবন্ধু টানেল

দেশের বড় কয়েকটি প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল অন্যতম। চলতি বছরের ৮ অক্টোবর টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজ শেষ হয়। এতে দুই পারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন দৃশ্যমান হয়। এ বছর টানেলের কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হলেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরও ৬ মাস বেশি মেয়াদ বাড়াতে চায় কর্তৃপক্ষ।

হেলেপড়া ভবন

এবছর চট্টগ্রাম শহরে ভবন হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। ১১ এপ্রিল নির্মাণ কাজের ত্রুটি থাকায় নগরের গোয়ালপাড়ায় একটি ৫ তলা ভবন হেলে পড়ে। ভূমিকম্পের কারণে গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর সাবানঘাটা এলাকায় একটি ৪ তলা ভবন হেলে পড়ে। এছাড়া চলতি মাসের ২২ ডিসেম্বর রাতে নগরের সদরঘাট ফকিরপাড়া এলাকায় একটি মন্দিরসহ ৩টি বাড়ি হেলে পড়ে।  

সিডিএর ক্ষমতা থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ না করা এবং গ্রাহকরা ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদনের আবেদন করলে তা যাচাই না করে অনুমতি দেওয়ার কারণে এভাবে ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটছে বলে মত বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।