ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পাহাড়ধসে মৃত্যু রুখতে এডিসি’র অন্যরকম উদ্যোগ

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
পাহাড়ধসে মৃত্যু রুখতে এডিসি’র অন্যরকম উদ্যোগ ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: বর্ষা এলেই পাহাড়ধস। এটিই যেন নিয়মিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্দরনগরে।

এ ধসে বার বার ঘটছে প্রাণহানি। পরিবারের উপার্জনকারী হারিয়ে অনেকের স্বপ্ন ভাঙছে, বসছেন পথে।
 

প্রতিবছর পাহাড়ধসের ঘটনার পর নেওয়া হয় কিছু লোকদেখানো উদ্যোগ। কিছু বসতি উচ্ছেদ করে দায় সারে প্রশাসন। তাতে পাহাড়ধসের ঘটনা যেমন কমেনি, তেমনি কমেনি মৃত্যুর সংখ্যাও। এবার পাহাড়ধসের প্রাণহানি রুখতে দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসানের দফতরে অনুষ্ঠিত পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য গঠিত কমিটির সভায় অবৈধ স্থাপনার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

সভায় ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবৈধ সংযোগগুলো চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর শুরু হবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অবৈধ বসতি উচ্ছেদ।

মোহাম্মাদ নাজমুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ বসবাসকারীদের কোনোভাবেই সরানো যাচ্ছে না। একদিক থেকে উচ্ছেদ করলে অন্যদিকে বসতি গড়ে তুলে কিছু মানুষ। তারা আবার সেগুলো ভাড়া দেয়। পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনাগুলো যদি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায় তাহলে আর বসতি গড়ে উঠবে না। এজন্যে আগে সংযোগ বিচ্ছিন্নের উদ্যোগ নিয়েছি।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২০১৩-১৪ সালের হিসাবে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ছিল ২৮টি। তবে ২০১৯ সালে ১৭টি পাহাড়কে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ পাহাড়গুলোর মধ্যে ১০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং ৭টি সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের অধীনে। এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে ৮৩৫ পরিবারের প্রায় ৮ হাজার মানুষ বসবাস করছে। এসব অবৈধ স্থাপনায় আছে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ।

বর্তমানে একে খান অ্যান্ড কোম্পানি পাহাড়ে ২৬টি, হারুন খান সাহেবের পাহাড়ে ৩৩টি, কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনির পাহাড়ে ২৮টি, লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২২টি, আকবার শাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮টি, পরিবেশ অধিদফতর সংলগ্ন সিটি করপোরেশন পাহাড়ে ১০টি, পূর্ব ফিরোজশাহ ১ নম্বর ঝিল সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮টি, পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩টি, মধুশাহ পাহাড়ে ৩৪টি, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে নয়টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩৪টি, মতিঝর্না ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়ে ১৬২টি, লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়ে ১১টি, এমআর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৮টি, মিয়ার পাহাড়ে ৩২টি, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১টি ও ট্যাংকির পাহাড়ে ১৬টি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে।

মোহাম্মদ নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরতদের পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রম মনিটরিং কমিটির সভায় অংশ নেন বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম, ওয়াসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ্র নাথ ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোবাশ্বের এম হোসেন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক রাফাত হাসান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী তৌফিকুল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।