ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হালখাতার হালচাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
হালখাতার হালচাল ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা বছরের শুরুর দিনটিতে উৎসবের মধ্য দিয়ে এই পার্বণের সূচনা হয়।

যদিও গত কয়েক বছর করোনা ও বিভিন্ন কারণে ভাটা পড়েছে এ উৎসবের।  

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হালখাতা প্রথার রীতিও নেই আগের মতো।

তবুও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কিছু কিছু আড়তে এখনও দেখা মেলে হালখাতা খোলার আয়োজন। এছাড়া হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাংলা বছরের প্রথমদিন খোলা হয় হালখাতা।

পূর্বের বছরের সব দেনা-পাওনা মিটিয়ে নতুন বছর থেকে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন তারা। পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ ও নতুন খাতা খোলার আনন্দ-আয়োজন, আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিকতার নামই ‘হালখাতা’।

এ দিন পাওনাদার এলেও হাসিমুখে তুলে দেন মিষ্টি। বছরের পর বছর চলে আসা রীতি ছিল খাতুনগঞ্জেও। কিন্তু বর্তমানে সে আনন্দ নেই। জৌলুস হারিয়েছে খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ীদের হালখাতা অনুষ্ঠানের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতুনগঞ্জে হালখাতার সেই পুরনো ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারাতে বসলেও গত কয়েক বছর করোনা মহামারী এবং রমজানের কারণে অনেকটা ম্লান হয়ে উঠেছে এ অনুষ্ঠান। তবে অতীত ঐহিত্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন অনেকে।  

তারা বলছেন, ব্যবসাই যদি না থাকে তবে আনন্দ থাকবে কোত্থেকে। বিশ্ববাজারে মন্দায় লোকসান দিতে হচ্ছে। ফলে নতুন বছর শুরু হবে মনে কষ্ট নিয়েই।

খাতুনগঞ্জ চাক্তাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন  বাংলানিউজকে বলেন, ‘একসময় খাতুনগঞ্জে হালখাতা অনুষ্ঠানে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল। ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মিষ্টিমুখ করানো হতো সবাইকে। কিন্তু আগের সেই জৌলুস নেই। তবুও কেউ কেউ পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।  

যে কারণে জৌলুস হারাচ্ছে

আগে হালখাতা উৎসবে অন্যরকম একটা আনন্দ ছিলো। ব্যাপক পরিসরে হালখাতার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। কিন্ত বর্তমানে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা প্রায় সবাই ইংরেজি মাসের ওপর ভিত্তি করে আয়-ব্যয় করেন। নগদ বিক্রি অথবা বাকি লেনদেন সবই হয় ইংরেজি মাসের ওপর ভিত্তি করে। তাই ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখে হালখাতা উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া এখন কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনার হিসাব রাখা হচ্ছে।

অতীতে জমিদারকে খাজনা দেওয়ার অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পুণ্যাহ’ প্রচলিত ছিল। বছরের প্রথম দিন প্রজারা ভালো পোশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। জমিদারী প্রথা উঠে যাওয়ায় পুণ্যাহ বিলুপ্ত হয়েছে।  

এ প্রথার অনেকটা অনুকরণ দেখা যায় হালখাতায়। ধার-বাকির পুরনো খাতা ছেড়ে, হিসেব চলে যায় হালের খাতায়। বর্তমান সনের নতুন হিসেবের খাতা বাঙালি সংস্কৃতির ধারকমুদ্রা। শুধু হিসেব তো নয়, এটা আসলে বিক্রেতা-ক্রেতার পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার বিষয়। আর তাই ক্রেতাদের মন তুষ্ট করতে এখনও দোকানদারদের চেষ্টার কমতি নেই। আজ শপিংমল, অনলাইন শপিংয়ের যুগে হালখাতার রঙ অনেকটাই ফিকে। তবুও প্রতি পয়লা বৈশাখে পাড়ার দোকান সেজে ওঠে, নতুন খাতার কপালে পড়ে সিঁদুরের ফোঁটা।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।