ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতার আশঙ্কা যোশীমঠের মতো হবে রানিগঞ্জ, মৃত্যু হবে ২০ হাজার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
মমতার আশঙ্কা যোশীমঠের মতো হবে রানিগঞ্জ, মৃত্যু হবে ২০ হাজার

কলকাতা: ভারতের উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠে ধস এবং ফাটলের ঘটনায় হাহাকার অবস্থা। ভুগর্ভে চলে যেতে পারে যোশীমঠ! এই পরিস্থিতিতে সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলছে সরকার।

সেখানে ভেঙে ফেলা হচ্ছে একাধিক বাড়ি-হোটেল। একই পরিস্থিতি হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার কয়লাখনি অঞ্চল রানিগঞ্জও। প্রাণ যেতে পারে প্রায় ২০ হাজার মানুষের।  

মোদি সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) এই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মেঘালয় সফরে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে যোশীমঠের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা উঠে আসে। সেই প্রসঙ্গে মমতা তুলে ধরেন রানিগঞ্জে ধসের ঘটনা।  

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রয়েছে যোশীমঠে। আগে বন্দোবস্ত করলে এই দিন দেখতে হত না। একই অবস্থা রানিগঞ্জে। গত ১০ বছর ধরে এটা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আমরা লড়াই করছি। যে অর্থ দেওয়ার কথা ছিল, কিছুই দেয়নি। যদি আমরা ঘর বানিয়ে না দিই ধস নামলে ২০ হাজার মানুষ মরে যেতে পারে। আজ পর্যন্ত কোনো অর্থই বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র সরকার। আমাদের যা ছিল তা দিয়েই বানিয়েছি। কিন্তু আরও টাকা লাগবে। অন্তত ৩০ হাজার মানুষ এই ধসে প্রভাবিত হতে পারেন।

প্রসঙ্গত, রানিগঞ্জ ধসপ্রবণ এলাকা। বেআইনিভাবে প্রচুর কয়লা উত্তোলন হচ্ছে এই অঞ্চল থেকে। কয়েক দশকে এই প্রথা চলে আসছে। সেই প্রথা পুরোপুরি বন্ধ না হলে সমূহ বিপদ বাড়তেই থাকবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে অবৈধ কয়লা পাচারে বারেবারে নাম জড়িয়েছে মমতার দলের সঙ্গে। এই নিয়ে মমতার ভাতিজা অভিষেকের বিরুদ্ধে তদন্তও চালাচ্ছে সিবিআই। সম্প্রতি যোশীমঠের ধসের দৃশ্য বারবার দেখা গিয়েছে রাজ্যের রানিগঞ্জেও। মাটির ফাটল থেকে ধোঁয়া এবং আগুন বেরোতেও দেখা গিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও প্রবল ধসও নেমেছে।

খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা রানিগঞ্জ জুড়ে কয়লাখনি রয়েছে। যে সব ধস দেখা গেছে তার একটাই কারণ অবৈজ্ঞানিকভাবে কয়লা উত্তোলন। কেবলমাত্র রেললাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং রানিগঞ্জের কিছু অংশ বাদ দিলে প্রায় সমস্ত এলাকাই এখন ধসপ্রবণ। সরকারের অবিলম্বে নজরে আসা উচিত।

রানিগঞ্জের বাসিন্দা তথা সে অঞ্চলের ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতা রামপ্রসাদের কথায়, উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তুলনা টানা ঠিক না। আমরা জানি, রানিগঞ্জ ধস কবলিত শহর। রোজ ধস নামছে শহরে। কিন্তু এটা মানতে হবে, গত কয়েক বছরে বেআইনিভাবে প্রচুর কয়লা উত্তোলন হয়েছে। আমরা চাই, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজ়িল্যান্ডের মতো এখানেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন হোক। আমাদের শহরটাকে বাঁচাতে হবে। আমরা জানি না কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার কিসের জন্য অপেক্ষা করছে?

একই সুর আসানসোলের সাবেক সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীরও। তিনিও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে জোড় দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঞ্চলে ধস নিয়ে কেন্দ্রে থাকা কোনো সরকারই কোনোদিনই মাথা ঘামায়নি। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উচিত এই এলাকার ভূতাত্ত্বিক রিপোর্ট অনুযায়ী ধস রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া। বৈজ্ঞানিকভাবে কয়লা তুলতে হবে। এসব বিষয় রাজ্য সরকারকে বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু রাজ্যজুড়ে যেভাবে বেআইনিভাবে কয়লা তোলা হচ্ছে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। তবে কয়লাখনির সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
ভিএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।