ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

হাতুড়ির শব্দে উদ্বোধন হলো ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
হাতুড়ির শব্দে উদ্বোধন হলো ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা

কলকাতা: হাতুড়ির শব্দে পশ্চিমবঙ্গে উদ্বধোন হলো ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) উদ্বধোন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বইমেলা কর্তৃপক্ষ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীরা এবং স্পেন ও বাংলার কবি, সাহিত্যিক, গুনীজনরা। এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি স্পেন। সে কারণে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের মন্ত্রী মারিয়া খসে গেলভেজ সালভাদর-সহ সে দেশের বিশিষ্টরা।

এদিন বইমেলা উদ্বোধন হলেও সর্বসাধারনের মেলার দ্বার উন্মুক্ত হবে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে। মেলা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা। প্রবেশ অবাধ। কলকাতা বইমেলায় সরাসরি ও যৌথভাবে অংশ নিয়েছে ২০টি দেশ এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের প্রকাশনা সংস্থা। থাকছে লিটল ম্যাগাজিনের স্টল। বইমেলার আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ, ৯ম কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল, যা অনুষ্ঠিত হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি।

মমতা বলেন, আমি অভিনন্দন জানাই এবারের বইমেলার পার্টনার কান্ট্রি স্পেনকে। এবার তারা তাদের সাহিত্যসম্ভার নিয়ে কলকাতায় হাজির করেছে। একইসঙ্গে অভিনন্দন জানাই -ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা, কিউবা, পানামা, মেক্সিকো, গোয়াতেমালা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, ডমিনিকান রিপাবলিক এবং থাইল্যান্ডকে।  

প্রসঙ্গত, এবার প্রথম অংশ নিল থাইল্যান্ড।

মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত, সারা পৃথিবী যেনো এই বইমেলা প্রাঙ্গণে মিলিত হয়েছে। একই সঙ্গে মিলিত হয়েছে ভারতের দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, বিহার এবং পাঞ্জাব। এবারে এই অংশগ্রহণ দেখে আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। আক্ষরিক অর্থেই আন্তর্জাতিক বইমেলা। এটাই কলকাতার ঐতিহ্য। কলকাতায় যেমন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হয়, আন্তর্জাতিক বিজনেস সামিট হয়। তেমনভাবে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা হচ্ছে বিশ্ব বাংলার দরবারে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের পোশাকি নাম বিশ্ববাংলা। যা মমতাই দিয়েছেন।  

তিনি আরও বলেন, এখানে যারা আসবেন তারা মনে রাখবেন বইমেলা সবার। এখানে বড় লেখকদের পাশাপাশি ছোট লেখক, উদীয়মান লেখক, লিটিল ম্যাগাজিন সবার। সবার মূল্য আছে। অনেক অজানা ছোট লেখকও দারুণ লেখেন। আমি এখনো কেউ যদি আমাকে ছোটপত্র ক্রোড়পত্র বা ম্যাগাজিন দেয় তা আমি পুরো পড়ি। তাতে অনেক তথ্য থাকে।

বইমেলার স্থায়ী ঠিকান নিয়ে মমতা বলেন, আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত এবং যখন আমি সরকারে ছিলাম না তখন থেকে আলাপ বইমেলা কর্তৃপক্ষ সুধাংশু শেখর এবং ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তারা একটা স্থায়ী জায়গার জন্য সবার কাছে ঘুরে বেরিয়েছেন। কিন্তু আজকে সে চাওয়া-পাওয়া সার্থকতায় রূপান্তরিত হয়েছে। বইমেলা তার নিজস্ব প্রাঙ্গণ পেয়েছে। আমার জানা মতে, গত বছর বইমেলায় ২৪ কোটির রুপির ব্যবসা হয়েছে। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ এসেছিলেন। এবারেও প্রচুর মানুষ আসবেন তাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র চেতনা এবং বইয়ের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে।

স্বাগত ভাষণে বইমেলা কর্তৃপক্ষ সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবস্থাপনায় ৪৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যার নাম দিয়েছেন বইমেলা প্রাঙ্গণ। যে কারণে আমরা আপ্লুত এবং আনন্দিত।  এবারের মতন এতবেশি প্রকাশক, পুস্তক বিক্রেতা, লিটল ম্যাগাজিন এবং দেশি-বিদেশিদের অংশগ্রহণ বইমেলার ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি। আশা করি এবারে বইমেলায় পাঠকদের উপস্থিতি সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে।  

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় ৭০০ ছোটবড় প্রকশনা এবং ২০০ লিটল ম্যাগাজিন মিলিয়ে মোট ৯০০টি প্রকশনা অংশ নিয়েছে।

স্পেনের কালচার অ্যান্ড স্পোর্টস মিনিস্টার মন্ত্রী মারিয়া খসে গালভেজ সালভাদর জানান, আমি  গর্বিত কলকাতার সাহিত্যের সঙ্গে স্পেনের নাম জড়াতে পেরে। খুবই আনন্দ বোধ করছি। কলকাতা হলো গোটা বিশ্বের সাহিত্য নগরী। যে কারণে আমাদের কাছে প্রিয় শহর, এই কলকাতা। ১৪ দিনের বইমেলায় স্পেনের প্যাভিলিয়নে, আমরা আমাদের সাহিত্য এবং সংস্কৃতি তুলে ধরব। স্পেনের মিউজিক, ফিল্ম, কমিক্স, সাহিত্য কবিতাসহ আরও অনেক ধরনের বই থাকছে। বইমেলার মধ্য দিয়ে কলকাতার সঙ্গে স্পেনের সাহিত্য এবং সংস্কৃতির সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আমি মনে করি।

উদ্বোধনী মঞ্চে কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের (সিএসসি) তরফে আরপিজি সৃষ্টি সম্মান তুলে দেওয়া হয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের হাতে। সাহিত্যিক বলেন, সম্মান মানুষকে আনন্দিত করে। কিন্তু ক্ষণিকের এই আনন্দে পেছনে কারো যদি নিরলস পরিশ্রম থাকে, যে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি থাকে তার ইতিহাস মানুষ জানতে পারে না। কিন্তু মাঝেমধ্যে আমি যখন আপনাদের মুখোমুখি হই এক আলোর বিচ্ছুরণ মুখে এসে পড়ে, তখন ভালো লাগে। মনে হয় এতকাল ধরে যে পরিশ্রম করেছি সেটা খুব বৃথা হয়তো যায়নি।

সম্মননা তুলে দিয়ে মমতা বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই শ্রদ্ধেয় শীর্ষেন্দু দাকে। তিনি অনেক লিখেছেন, অনেক কথা বলেছেন, আমাদের অনেক শিখিয়েছেন। তাকে সম্বর্ধিত করতে পেরে আমরা কৃতজ্ঞ। তার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
ভিএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।