ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

অমর্ত্য সেনের ঘটনায় বিশ্বভারতী উপাচার্যকে ‘ধিক্কার’ পবিত্র সরকারের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
অমর্ত্য সেনের ঘটনায় বিশ্বভারতী উপাচার্যকে ‘ধিক্কার’ পবিত্র সরকারের পবিত্র সরকার। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাঙালি নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের প্রতি বিরূপ মনোভাবে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যকে ‘ধিক্কার’ জানালেন বাংলার বিশিষ্ট অধ্যাপক পবিত্র সরকার।  

অমর্ত্য সেনের প্রতি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ন্যাক্কারজনক ব্যবহারকে নিন্দা জানিয়ে পবিত্র সরকার বলেছেন, একজন বাঙালি হিসেবে আমার কাছে বিষয়টা খুবই লজ্জার।

অমর্ত্য সেনকে অপমানটাকে আমি নিজেও অপমানিত বোধ করছি। কারণ, ওনার মত একজন ব্যক্তিত্ব শুধু নোবেল জয়ী তা তো নয়, তার থেকে অনেক বড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন তার নোবেল জয়ীর থেকেও অনেকটা বড় মাপের। অর্মত্য সেনকে একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ হিসেবে বিশ্ববাসী স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই মানুষটাকে একটা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান যেভাবে পরপর অপমান করে চলেছে সেটা আমাদের জাতিগত লজ্জা। সারা পৃথিবীর কাছে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে।

পবিত্র সেন আরও বলেন, আমার খুব দুঃখ লাগে তিনি বিশ্বভারতীর মতো বিশ্বখ্যাত একটা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য। তাঁর যোগ্যতাও যথেষ্ট আছে। কিন্তু, তিনি এতটা নীচে নামলেন যেখানে অমর্ত্য সেনের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে চলেছেন। একজন বাঙালি এবং ভারতীয় হিসেবে লজ্জাবোধ করছি। যাইহোক, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই জমির মিউটেশন অমর্ত্য নামে করে দিয়েছেন। এটা দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের একটা তেতো স্বাদ বা তেতো স্মৃতি চিরকাল রয়ে গেল।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে, এরপরই দেখা গেছিল অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচী’ বাসভবন নিয়ে বিশ্বভারতীর জমি বিতর্ক। যা নিয়ে বারেবারে হুঙ্কার দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য ডক্টর বিদ্যুৎ সেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ নেওয়ায় অমর্ত্য সেন কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরিতার্থ হলেন?

জবাবে পবিত্র সেন বলেন,  হতে পারে।  নিশ্চয়ই এর নেপথ্যে কোনো কার্যকারণ থাকতেই পারে। কারণ অমর্ত্য সেন কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতির যে দর্শন, সেটাকে পছন্দ করেন না। হিন্দুত্ববাদীর এই বাড়াবাড়ি তিনি পছন্দ করেন না। সনাতন ধর্ম বলবো না, একটা ব্রাহ্মণ্যবাদী দর্শন যেখানে নারীরা ব্রাত্য, আদিবাসীরা ব্রাত্য, দলিত (ছোট সম্প্রদায়) তারা ব্রাত্য- বর্তমান সরকারের এরকম একটা সামাজিক শ্রেণি ভিভেদ বা জাতিভেদের দর্শনে বিশ্বাসী। এটাকে বরাবর অমর্ত্য সেন সমালোচনা করেছেন। যে কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই এর সমালোচনা করবে। তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের হয়তো গোস্যা হয়েছে, সেই রাগ বিশ্বভারতীর উপাচার্যের উপর বর্তেছে! তিনি হয়তো অদৃশ্য কোনো নির্দেশে অর্মত্যকে এইভাবে অপমান করেছেন।

যদিও অর্মত্য সেনের বিষয়ে পশ্চিবঙ্গের বিজেপির একাংশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছেন। তারা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যখন নোবেল জয়ীর পাশে রয়েছেন নিশ্চয়ই অমর্ত্য সেন সঠিক। তবে তার সঙ্গেও বিরোধীদের অভিমত ছিল, অমর্ত্য সেনই-বা কেনো বিশ্বভারতীর বাড়তি ১৩ ডেসিমিল (শতক) জায়গা দখল করে রেখেছেন? এ বিষয়ে পবিত্র সরকারের অভিমত, এই ১৩ ডেসিমেল জায়গা কি একটা বিশাল মাঠের মতো ভূখণ্ড? যাতে বিশ্বভারতী বিকল্প কিছু করতে পারত? একটা হাসপাতাল বা কলেজ অথবা জায়গাটায় স্কুল বানানো যেত। ১৩ ডেসিমিল সামান্য জায়গা। সেটা অমর্ত্য সেনের মতো ব্যক্তিত্বের কথা ভেবেই বিশ্বভারতীর উপেক্ষা করলে কি এসে যেত? কি এমন ক্ষতি হতো? এটা তো আমি বুঝতে পারি না।

সম্প্রতি লন্ডনে চলে যাওয়ার পরই অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ ধরিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ১৯ মার্চ শান্তিনিকেতনের 'প্রতীচী'র বাসভবনে পৌঁছে গেছে সেই নোটিশ। তাতে বলা হয়েছিল আগামী ২৯ মার্চ, ৯০ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদকে সশরীরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির থাকতে হবে অথবা তার প্রতিনিধি পাঠাতে হবে। নির্দেশিকায় উল্লেখ ছিল, বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতেই জমি বিতর্কিত শুনানি হবে। এরপরই আশুতোষের নামে থাকা জমি অমর্ত্যের নামে করে দেওয়া হয়েছে বলে সোমবার (২০ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গের ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলআরও)-এর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, সমস্যা মিটল।

কিন্তু, অমর্ত্যকে উচ্ছেদের দাবিতে অনড় বিশ্বভারতী। প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের মন্তব্য, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আশুতোষ সেনকে (অর্মত্য সেনের বাবা) ১ দশমিক ২৫ একর জমি লিজ় দিয়েছিলেন। তিনি আয়ত্বে রেখেছেন ১ দশমিক ৩৮ একর জমি। ফলে বাকি অংশটা দখল করাই বলা যেতে পারে। আর সেই মোতাবেক আমরা আগেই নোটিশ দিয়েছি। এবং আমরা অন্যান্য লিজ় হোল্ডারের ক্ষেত্রে যে ভাবে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া করে থাকি, এ ক্ষেত্রেও সেই একই কাজ করা হবে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আলাদা ভাবে যেমন কাজ করার তেমন চালিয়ে যাবেন। যা নিয়ে বাংলা বিশিষ্টরা সরব হলেও, মিটেও মিটছে না অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
ভিএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।