কলকাতা: বৃষ্টির দেখা নেই, প্রবল তাপদাহে পুড়ছে কলকাতা। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি গরম থাকলেও অনুভূত হচ্ছে ৫০ ডিগ্রির কাছাকাছি।
শহরের বেলঘরিয়া, নিমতা, দক্ষিণেশ্বর, সিঁথিমোড়, হরিদেবপুর, বাঘাযতীন ও বেহালার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাসিন্দাদের নাজেহাল অবস্থা। পাশাপাশি কলকাতার আলিপুর, দমদম, বেলগাছিয়া, গড়িয়া, ডোভার লেন, কসবা এবং শহর সংলগ্ন হাওড়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ আসছে কলকাতা পুলিশের কাছে।
যদিও এই পরিস্থিতিকে লোডশেডিং বলে মানতে রাজি নন সিইএসসি কর্তৃপক্ষ। ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের (সিইএসসি) মতে, তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এর জেরে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট।
সিইএসসির মতে, সাধারণ মানুষের এমনিতে যতটা পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তার থেকে বাড়তি ব্যবহার করছেন। যারা একটি এসি চালান, তারা একাধিক এসি ব্যবহার করছে।
ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের কাছে তথ্য নেই এমন বহু এলাকায় একাধিক এসি বা ওই জাতীয় বৈদ্যুত্যিক যন্ত্র ব্যবহার করছে। সেই কারণে এই বিদ্যুতের এই ঘাটতি।
সংস্থাটির মতে, কলকাতায় বিদ্যুৎ চলে নির্দিষ্ট এলাকায় লোড অনুযায়ী। যেমন কোনো মহল্লায় প্রয়োজন হয়তো এক হাজার ওয়াট, সেখানে হঠাৎ ব্যবহার শুরু হয়েছে ১১শ ওয়াট। সে কারণেই এই বিভ্রাট।
প্রসঙ্গত, কলকাতার কোনো বাসায় এসি ইন্টেল করতে হলে আগে ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিসকে জানাতে হয়। তার সরেজমিন করার পর সেই অনুযায়ী, হিসাব করে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোড সাপ্লাই করে সিএসসি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট এলাকায় হঠাৎ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে অথচ সংস্থাটির কাছে এর কোনো তথ্য নেই। তখনই ধাপে ধাপে লোডশেডিং শুরু হচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়, এমনটাই মত সিএসির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেহালার এক বাসিন্দা জানান, তার ঘরে দুটি দুই টনের এবং একটি একটনের এসি চলছে। অথচ তার অনুমতি নেওয়া আছে চার টনের। তার মতে, যতদিনে অনুমতি মিলবে ততদিনে আমরা বাবা-মা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। এতদিন বাসায় আমার আর ভাইয়ের রুমে এসি চলত। এখন উপায় নেই তাই বাবা-মার ঘরে এসি বসাতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) কলকাতা পুলিশের মতে, বুধবার (৭ জুন) থেকে শহরের পাঁচটি জায়গায় তাদের যেতে হয়েছে। লোডশেডিং নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বুধবার বেহালা, আলিপুর, দমদম, বেলগাছিয়া, গড়িয়া, ডোভার লেন এবং কসবায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ এসেছে। এখন তো আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্চ করা যায় না। মানুষকেও তো সচেতন হতে হবে। সবাই নিজেদের কথা ভাবছে। সবার বাসায় তো আর এসি নেই। বাড়তি এসি কিনে তারা সাধারণ মানুষের বিপদ ডেকে আনছে। এবার বাধ্য হয়ে পথে নামতে হচ্ছে আশা করি। খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্যার সমাধান মিলবে।
সিইএসসির এক কর্তা অভিজিৎ ঘোষ বলেছেন, বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু এত মানুষ আমাদের না জানিয়ে এসি ব্যবহার করছেন যে, সিইএসসির কাছে অনেক এলাকার লোড সম্পর্কে আগাম ধারণা নেই। সেই কারণেই সমস্যা হচ্ছে। আমরা সবার কাছে আবেদন করছি, নিয়ম মেনে আমাদের জানিয়ে এসি ব্যবহার করুন। তবে এটা লোডশেডিং বলা ঠিক নয়, ফিউজিং হচ্ছে বলতে পারেন। অর্থাৎ, যখনই নির্ধারিত লোডের বেশি ব্যবহার হয়ে যাবে তখন নিজে থেকে ‘ফিউজি ট্রিপ’ হয়ে যাবে। তখনই লোড সামলাতে না পেরে এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অবশ্য আমরা খবর পাওয়া মাত্র কাজ করছি। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণে হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে আমরাও সামাল দিতে পারছি না। বিশেষ করে রাত ৯টা থেকে দুটোর মধ্যে লোডশেডিংয়ে হচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৭ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২৩
ভিএস/এএটি