ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার ‘ভুটিয়া বাজারে’ শীতবস্ত্রের পসরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৩
কলকাতার ‘ভুটিয়া বাজারে’ শীতবস্ত্রের পসরা

কলকাতা শহরে শীত তুলনামূলক কম অনুভূত হয়। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও যানবাহনের ধোঁয়া আর বেড়ে চলা দূষণ শহরকে অনেকটাই উষ্ণ রাখে।

শীত বাড়তে শুরু করলে চাহিদা বেড়ে যায় গরম কাপড়ের। নতুন ধরনের শীতের পোশাক বেচাকেনা করতে কলকাতায় আসেন নানা রাজ্য বা দেশের ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা।

মধ্য কলকাতার ওয়েলিংটন স্কয়ারের আশপাশে এবার শীতের পোশাকের পসরা বসেছে। নানা ধাঁচের নানা ডিজাইনের শীতের পোশাক বিক্রি হতে শুরু করেছে এসব বাজারে। সড়কের ফুটপাতের ধারে অস্থায়ী স্টল সাজিয়ে বসেছেন নেপালি, ভুটানিসহ ভারতের হিমাচলপ্রদেশ, কাশ্মীরের মতো একাধিক শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন জায়গা থেকে ওয়েলিংটন স্কয়ারে এসে যারা শীতবস্ত্র বিক্রি করেন তারা ‘ভুটিয়া’ নামে পরিচিত। যে জায়গায় তারা পোশাক বিক্রি করেন, সেটি ‘ভুটিয়া বাজার’ নামে পরিচিত। অতীতে কলকাতায় শীতবস্ত্রের বিশাল সম্ভার নিয়ে আসতো উত্তরবঙ্গের ভুটিয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন। তারাই অস্থায়ী স্টল বসিয়ে কাপড় বিক্রি করতেন। তবে পরবর্তীতে অন্যান্য অঞ্চল থেকে এসে এ বাজারে বহু বিক্রেতা ডেড়া গাড়েন। তাই তারাও ভুটিয়া হিসেবে পরিচিতি পান।

কলকাতায় রাত বাড়তে শুরু করলে উত্তরের শীতল হাওয়া গায়ে লাগে। সকালে শরীরে হালকা কাঁপুনি ধরে। শৈত্যপ্রবাহ বাদ দিলে মৌসুমের প্রায় প্রতিদিনই কলকাতায় শীতল হাওয়া বইতে থাকে। এর মধ্যেই জমে ওঠে ভুটিয়া বাজার। তিব্বত, হিমাচল প্রদেশ, ভুটান কাশ্মীর, দার্জিলিং থেকে এসে কম দামি, বেশি দাবি শীতের কাপড় বিক্রি করেন।

তাদের বোনা বা তৈরি করা শীতের কাপড়ও বেশ প্রসিদ্ধ। উল, চামড়া, মখমলসহ নানা জাতের কাপড়ের সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল, উলের টুপি, হ্যান্ড গ্লাভস, মাফলার, কার্পেট বিক্রি করেন ভুটিয়ারা।

ভুটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরটিকে তারা ভালোবাসেন। সেই টানে কলকাতায় পোশাক বিক্রি করতে আসেন তারা। পুরো মৌসুমের আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। শীতের কয়েকটা মাস কলকাতায় বেশ বেচাকেনা হয়।

আলেমা খাতুন নামে এক তিব্বতি নারী বাংলানিউজকে বলেন, চীনা আগ্রাসনের পর তার গোটা পরিবার ভারতে আশ্রয় নেয়। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে অনেকেই দিল্লিসহ অন্যান্য রাজ্যে বাস করছে। তিনি প্রতিবছর ভুটিয়া বাজারে শীতের পোশাক বিক্রি করতে আসেন। এ বছর শীত এখনও জেঁকে বসেনি। তাই বিক্রিও তেমন হচ্ছে না। তার বা তাদের ব্যবসা জমবে ডিসেম্বরে।

মনোজ, তেনজিন, সোনাম নামে তিন ব্যবসায়ী গত প্রায় ৩০ বছর ধরে কলকাতায় এসে শীতের কাপড় বিক্রি করেন। তারা জানিয়েছেন, শীতের আনাগোনা শুরু হয়েছে, ব্যবসা খারাপ হচ্ছে না। শহরবাসী খুবই ভালো। শতি পড়তে শুরু করলে তারাও ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।

শৈল শহর দার্জিলিং থেকে এসেছেন ফতেমা বিবি। তার স্বামী সোলেমানও পাশে আরেকটি দোকানে বসেছেন। ফতেমার পরিবার, ৩০ বছর ধরে ওয়েলিংটন স্কয়ারে শীতের পোশাক বিক্রি করে আসছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী তিন মাস ধরে তারা ভুটিয়া বাজারে ব্যবসা করবেন। শীত শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের ব্যবসা চলবে।

কলকাতার বাসিন্দা ও ভ্রমণে আসা বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গেও কথা বলেছে বাংলানিউজ। তারা ভুটিয়া বাজার থেকে শীতের কাপড় কিনছেন। কথা বলে জানা গেল, উলের তৈরি বিভিন্ন বস্ত্র পছন্দ করছেন তারা। দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় তাদের পোশাক কিনতেও সহজ হচ্ছে।

ওয়েলিংটন স্কয়ারের অন্যান্য সামগ্রীর দোকানিরা বলছেন, ভুটিয়ারা বাজার বসানোয় তাদেরও আয়-রোজগার বাড়ে। তা ছাড়া শীতের পোশাক বিক্রেতারা তাদের কাজ শেষ করে চলে যায়। এতে দোকানিদের কোনো সমস্যা হয় না। যুগ যুগ ধরে তারাও ভুটিয়াদের সাদরে গ্রহণ করে আসছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর  ২২, ২০২৩
ভিএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।