ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগের আবহে বাংলায় মোদি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৪
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগের আবহে বাংলায় মোদি

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে নিয়ে তোলপাড় রাজ্যের রাজনীতি। তারই মাঝে বাংলায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বৃহস্পতিবার তিনি রাত্রি যাপন করেন কলকাতার রাজভবনে।

বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে কলকাতার থানায় অভিযোগ জানান এক নারী। নিজেকে তিনি রাজভবনের অস্থায়ী কর্মী বলে দাবি করেছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল।  

তিনি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, সত্যের জয় হবেই। কোনো কৌশলের সামনে তিনি মাথানত করবেন না। এ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বোস বলেছেন, আমার বদনাম করে যদি কেউ ভোটে ফায়দা তুলতে চান, ঈশ্বর তার মঙ্গল করুক। কিন্তু বাংলার দুর্নীতি ও হিংসার বিরুদ্ধে তার (রাজ্যপাল) লড়াই থামানো যাবে না।

তবে মুখে যাই বলুন না কেন, বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েছেন বোস। তা তার বিবৃতিতেই বোঝা গেছে। তিনি এক বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজভবন চত্বরে রাজ্য পুলিশ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ কোনোভাবেই রাজভবনের ভিতর পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রবেশ করতে পারবে না। একইসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকেও রাজভবনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ডায়েরি নিতে পারে না। এর জেরে বিপাকে পড়েছে কলকাতা পুলিশ। একদিকে নারীঘটিত সমস্যা। তার মধ্যে আবার ভিআইপি রাজ্যপাল। ফলে কলকাতা পুলিশও বিপাকে।  

পুলিশ কর্তা (ডিসি সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তারা আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন। তদন্ত প্রক্রিয়া কীভাবে এগোবে, তা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর এ আবহে ভোট প্রচারণায় বাংলায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

শুক্রবার (০৩ মে) একই দিনে তিনটি প্রচারণা রয়েছে তার। শুরু করেন বর্ধমান আসন থেকে। এরপর কৃষ্ণনগর। তা শেষ করে বীরভূম জেলার বোলপুরে প্রচারণা করবেন তিনি। সেখান থেকেই তিনি ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশে রওনা দেবে।

এদিন মোদি বর্ধমানে এসে নিজের ভাষণের শুরুটা অন্যরকম করেন। কোনো রাজনৈতিক কথা না বলে নিজের স্বপ্নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, তিনি নিজের জন্য বাঁচতে চান না। দেশবাসীর সেবা করার কারণেই তার জন্মগ্রহণ। দুবারের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেও ইতিহাসের পাতায় নাম উঠেই যায়। কিন্তু তিনি এরপরও আরাম না করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।

জনসভার উদ্দেশে তার বার্তা, আমি ফুর্তি করার জন্য জন্মাইনি। আমি নিজের জন্য বাঁচতে চাই না। আপনাদের সেবা করার সংকল্প নিয়ে ভারত মাতার পায়ে মাথা পেতে ১৪০ কোটি দেশবাসীর সেবা করতে চাই। বাংলার নারীদের উদ্দেশে মোদি বলেন, আমার সামনে-পেছনে কেউ নেই। আমার জন্য আপনারাই পরিবার। দেশের সব পরিবারের সন্তান আমার সন্তান। নিজের বলতে কেউ নেই, যাদের জন্য কিছু করব।

এরপরই মোদি বিস্ফোরক দাবি করেন। তিনি বলেন, তৃণমূলের সরকারের আমলে হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রেখেছে।

প্রসঙ্গত, ভোট প্রচারণায় সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীরের বিরুদ্ধে। সামাজিক মাধ্যমে তার এক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, মুর্শিদাবাদে ৩০ শতাংশ লোক (হিন্দু) মসজিদ ভাঙলে মুর্শিদাবাদ জেলার ৭০ শতাংশ লোক (মুসলিম) বসে থাকবে না। মূলত, জেলাটি মুসলিম অধ্যুষিত। সেখানে সম্প্রতি রামনবমী (রামের জন্মতিথি) নিয়ে অশান্তি ছড়ায়। যদি বর্তমান পরিস্থিতি সরকারের আয়ত্তে।

বিধায়কের সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনেই এদিন মোদি বলেন, বাংলায় কী হচ্ছে? দেখে মনে হচ্ছে, হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রেখেছে তৃণমূল। পাশাপাশি জয় শ্রীরাম স্লোগানের বিরোধিতার ইস্যু নিয়েও সুর চড়ান মোদি।

তৃণমূল দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, বাংলায় এমন লোক আছে, যারা জয় শ্রীরাম শুনলে রেগে যায়। ওদের যেন জ্বর চলে আসে। অযোধ্যার রাম মন্দির নিয়ে তাদের আপত্তি, রামনবমীর মিছিল নিয়েও তাদের আপত্তি। মোদির কথায়, ভোটব্যাংকের জন্য সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করছে তৃণমূল।

একইসঙ্গে সিপিএম, কংগ্রেসকেও তুলোধুনো করতে ছাড়েননি নরেন্দ্র মোদি। বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস দিনরাত মোদিকে আক্রমণ করে চলেছে। বলছে মোদিকে গুলি করে দাও। আমি ভয় পাই না। যারা ভয় পায়, তাদের দলে আমি থাকি না। আমাকে যত আক্রমণ করা হবে, তত বিজেপির ভোট বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৪
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।