কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তোলপাড় বাংলার রাজনীতি। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের অস্থায়ী এক নারী কর্মীকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ নিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তৃণমূল।
তবে রাজ্যপালের দাবি, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এটি স্রেফ নির্বাচনী কৌশল। ভোটের মুখে তাকে অপদস্থ করতেই এ অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুক্রবার (০৩ মে) সেই রাজভবন কাণ্ডে মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, একটি ছোট মেয়ে রাজভবনে চাকরি করত। তার সঙ্গে কী ব্যবহার করেছেন রাজ্যপাল! আমার কাছে একটা নয়, হাজারটা ঘটনার খবর এসেছে। কিন্তু আমি কোনদিন কিছু বলিনি। কিন্তু গতকাল মেয়েটির কান্না আমার কাছে হৃদয়বিদারক লেগেছে।
মমতা জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের ওই মেয়েটি আর রাজভবনে কাজ করতে যাবে না। ও আর সেখানে কাজ করতে যেতে চাইছে না। ভয় পাচ্ছে, আবার যদি এমন কিছু হয়। যখন তখন ডেকে খারাপ ব্যবহার করবে, অসম্মান করবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, রাজ্যপাল পরপর দুবার ওই মেয়ের শ্লীলতাহানি করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মমতার বক্তব্য, আগে নিজের দিকটা দেখুন, তারপর সন্দেশখালি নিয়ে বলবেন।
মমতা এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করে বলেন, সেখানে তো কাল আপনিও থেকে এলেন। একটা কথাও তো বললেন না। আপনি আবার মা-বোনেদের সম্মান নিয়ে কথা বলেন! আপনার দাঁতের পাটিটাই খুলে পড়ে যাওয়া উচিত মিথ্যে বলার জন্য। তৃণমূলের দুর্নীতি তো আপনাদের কাছে চুনোপুঁটি।
এদিন বঙ্গে ভোট প্রচারণার কারণে বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার রাজভবনের রাত্রি যাপন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তার ঠিক আগে গত সন্ধ্যায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে কলকাতার হেস্টিং থানায় অভিযোগ জানায় এক নারী। নিজেকে তিনি রাজভবনের অস্থায়ী কর্মী বলে দাবি করেন। থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। লিখিত নারীর সেই বয়ান ইতোমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে।
তাতে লেখা রয়েছে, ‘আমি রাজভবনের কোয়ার্টারে থাকি। রাজভবনের ইপিএ বিএক্স (পিসরুম) ডিপার্টমেন্টে কন্ট্রাক্টচুয়াল পোস্টে কাজ করি। ১৯ এপ্রিল গভর্নর স্যার আমাকে বলেন সময় করে সিভি নিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করতে। ২৪ এপ্রিল এ দুপুরে আমি দেখা করি। তিনি তার অফিস রুমে ডেকে বিভিন্ন আলোচনার পর কুপ্রস্তাব দেন, গায়ে হাত দেন, সেদিন কোনোরকম তার হাত সরিয়ে বেরিয়ে আসি। ২ মে তিনি আবারও ডাকেন। সঙ্গে আমি সুপারভাইজারকে নিয়ে যাই। কারণ আমি আগেই ভয় পেয়েছিলাম। কনফারেন্স রুমে কিছুক্ষণ কাজের বিষয়ে কথা বলার পর তিনি সুপারভাইজারকে বেরিয়ে যেতে বলেন। তারপর আমাকে চাকরির প্রমোশনের প্রলোভন দেখিয়ে কনভারসেশন বাড়ান। রাতে ফোন করবেন বলেছেন। তারপর তা প্রত্যাখ্যান করলে গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি প্রতিবাদ করে বেরিয়ে আসি। ’
যদিও সম্পূর্ণ অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যপাল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, সত্যের জয় হবেই। কোনো কৌশলের সামনে তিনি মাথা নত করবেন না। যদি বদনাম করে কেউ ভোটে ফায়দা তুলতে চান, ঈশ্বর তার মঙ্গল করুক। বাংলার দুর্নীতি এবং হিংসার বিরুদ্ধে তারর লড়াই থামাতে পারবেন না।
তার দাবি, তাকে অপদস্থ করতে রাজনৈতিক কারণে রাজভবনে আরও এক ব্যক্তিকে ঢোকানো হয়েছে। অডিও বার্তায় বোস বলছেন, এটি প্রত্যাশিতই ছিল। তবে এভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার লড়াই থামানো যাবে না।
পাশাপাশি বিবৃতিতে তিনি জানান, রাজভবন চত্বরে রাজ্য পুলিশ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ কোনোভাবেই রাজভবনের ভেতর পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রবেশ করতে পারবে না। একইসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকেও রাজভবনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ডায়েরি নিতে পারে না। যার জেরে বিপাকে পড়েছে কলকাতা পুলিশ। একদিকে নারীঘটিত সমস্যা। তার মধ্যে ভিভিআইপি রাজ্যপাল। ফলে কলকাতা পুলিশও বিপাকে।
পুলিশ কর্মকর্তা (ডিসি সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানান, তারা আইন এবং সংবিধানের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন। তদন্ত প্রক্রিয়া কীভাবে এগোবে তা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৪
ভিএস/আরএইচ