ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভয়াবহ বন্যার কবলে আসাম, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৮

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২৪
ভয়াবহ বন্যার কবলে আসাম, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৮

কলকাতা: ভারতের আসামে বন্যা পরিস্থিতির কারণে রাজ্যটি ১১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সরকারি তথ্য মতে, বন্যা পরিস্থিতির ২৩টি জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত।

বুধবার (৩ জুলাই) রাজ্যটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তরফে, বন্যা সম্পর্কিত প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী জানা যায়, তিনসুকিয়া জেলার সাদিয়া এবং ডুমডুমা রাজস্ব এলাকায় একজন প্রাণ হারিয়েছেন। ধেমাজি জেলার জোনাইতে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে একজনের। সবমিলিয়ে চলতি বর্ষায় বন্যা, ভূমিধস ও ঝড়ের কারণে এখন অবদি মৃতের সংখ্যা ৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

রাজ্যটির সরকারি তথ্যে মতে, বারপেটা, বিশ্বনাথ, কাছাড়, চরাইদেও, চিরাং, দারাং, ধেমাজি, ডিব্রুগড়, গোলাঘাট, জোড়হাট, কামরূপ মেট্রোপলিটন, কার্বি আংলং, করিমগঞ্জ, লখিমপুর, মাজুলি, মরিবাগাঁও, নগাঁও, নলবাড়ি শিবসাগর সনিতপুর তামুলপুর তিনসুকিয়া এবং উদালগুড়ি জেলার প্রায় ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৪শ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা লক্ষিমপুর জেলায়। ওই জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরে রয়েছে দাড়াং জেলা। সেখানে ১ লাখ ৪৭ হাজার জন এবং গোলাঘাট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার।

সোমবার (১ জুলাই) পর্যন্ত রাজ্যটির ১৮টি জেলাজুড়ে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রশাসনের তরফে ২১টি জেলায় ৪৮৯টি ত্রাণ শিবির এবং বিতরণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। মোট ২ লাখ ৮৬ হাজার ৭৭৬ জনকে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে।

বেসামরিক প্রশাসন, আসাম রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ), কেন্দ্রীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ), জরুরি পরিষেবা এবং বিমান বাহিনী উদ্ধার কাজ চালিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রায় ২হাজার ৮৫০ জনকে উদ্ধার করেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষর তরফে বন্যায় দুর্গতদের মধ্যে ১০ হাজার ৭৫৪ কুইন্টাল চাল, এক হাজার ৯৫৮ কুইন্টাল ডাল, ৫৫৪ কুইন্টাল লবণ, ২৩ হাজার ৬১ লিটার সরিষার তেল বিতরণ করা হয়েছে।

বর্তমানে গোটা রাজ্যটির ২ হাজার ২০৮টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ৪২ হাজার ৭৪৬ হেক্টর আবাদি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ, সড়ক, সেতুর মতো অবকাঠামোগুলোও। রাজ্যজুড়ে ব্যাপক বন্যার কারণে ৮ লাখ ৩২ হাজার গৃহপালিত পশু এবং হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজ্যের নিমাতিঘাট, তেজপুর, গুয়াহাটি এবং ধুবড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুবানসিরি, বুরহিডিহিং, ডিখোউ, ডিসাং, ধানসিরি, জিয়া ভারালি, পুথিমারি, কপিলি এবং বেকির মতোসহ বেশ কয়েকটি উপনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। বরাক নদী এবং এর উপনদী কুশিয়ারা ও ধলেশ্বরী বিভিন্ন পয়েন্টে লাল সর্তকতা চিহ্নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মঙ্গলবারই গোলাঘাট জেলার বন্যাকবলিত অঞ্চল, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন ও দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। পরে তিনি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে গতি আনতে নির্দেশ দেন। রাজ্যের উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।

বন্যার কবলে আসামের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানও। পার্কের একটা বিশাল অংশ প্লাবিত হয়ে রয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে একটি শিশু গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই উদ্যানের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি উদ্যান কর্তৃপক্ষকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বন্যপশুর ক্ষতি এড়াতে জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আনতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২৪
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।