কলকাতা: বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা ও তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ফের সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন থেকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সোমবার (৮ জুলাই) নবান্ন থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের গঙ্গা চুক্তির সময় কেন্দ্র সরকারের সাথে কথা হয়েছিল যেন পশ্চিমবঙ্গ সমস্যায় না পড়ে। এজন্য গঙ্গা ড্রেজিং করা হবে এমন কথাও হয়েছিল। এখন গঙ্গার পাশে যে ভাঙন ধরেছে তাদে অনেকের বাড়ি ঘর নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। এলাকার উন্নয়নের জন্য ৭০০ কোটি রুপির একটি প্যাকেজ তৈরি হয়েছিল। যখন এসব কথা হয়েছিল, তখন আমি সংসদ সদস্য ছিলাম। ফলে পুরো বিষয়টাই আমি জানি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের দেয়নি।
তিনি বলেন, এখন আমাদের না জানিয়ে আবার বলা হচ্ছে ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন হবে। কিন্তু, গঙ্গার চুক্তির বিষয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে আলোচনা হলো- তা আমাকে জানানোই হলো না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এর মধ্যেই আবার বলছে, তিস্তার পানি দিয়ে দেবে। তিস্তায় কি পানি আছে যে দেবে? বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দিলে বাংলার উত্তরবঙ্গের একটি মানুষও খাবার পানি পাবে না।
কেন্দ্রীয় সরকারকে মমতা মনে করিয়ে দেন, তিস্তায় এই সময় (বর্ষায়) যেমন পানি থাকে তা গ্রীষ্মে থাকে না। এই সময় বর্ষার পানি দেখে সবকিছু যেন বিবেচনা না করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী সিকিমের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, সিকিমে ১৪টি বাঁধ দিয়ে হাইড্রেল পাওয়ার করা হলো। কেন্দ্র সরকারের দেখা উচিত ছিল। কেন্দ্র জানে, আমাদের দেশের জন্য সিকিম বর্ডার কতটা ভয়ানক। অরুণাচল বর্ডার কতটা ভয়ানক। কিন্তু কোনো মনিটরিং সিস্টেম নেই। অথচ, আমরা বারবার ইনফর্ম করেছি। কিন্তু তারা কোনো অ্যাকশন নেয়নি। যে কারণে বাংলার মানুষকে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
আত্রাই নদী নিয়েও মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, আত্রাই নদীতে বাংলাদেশ ও চীন মিলে যে বাঁধ দিয়েছে, সেটা করার সময়ও আমাদের জানানো হয়নি। যে কারণে রাজ্যের ওই অঞ্চলের বহু মানুষ খাবার পানি পাচ্ছে না। সেখানে খাবার পানির সংকট তৈরি হয়েছে। আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টা অনেকবার বলেছি। আগে ইন্দো বাংলাদেশের মিটিংগুলোয় আমাকে ডাকা হতো। সেখানে এই সমস্যার কথা আমি বারবার তুলে ধরেছি। তারপরেও সেখানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জলপাইগুড়ির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাশে ভুটান, যে কারণে সেখানকার পানি এ সময়ে (বর্ষায়) পশ্চিমবঙ্গের করলা নদীতে আসে। সেই পানিতে আলিপুরদুয়ার ভেসে যায়। জলপাইগুড়ি ভাসে। তার সাথে যুক্ত হয় মৌসুমের বৃষ্টির পানি। সবকিছু মিলে উত্তরবঙ্গের ওই জেলাগুলোয় বন্যা হয়। নদী কেন্দ্রিক বিষয়ে বাংলা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে।
গত ২২ জুন দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে দিল্লিতে বৈঠক হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের নরেন্দ্র মোদীর। সে সময় তিস্তা নিয়ে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়। গত ২৪ জুন এ বিষয়ে সরব হন মমতা। কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন সে সময়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ জুলাই ৮, ২০২৪
ভিএস/এমজে