ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতা ফাঁসির দাবি তুললেও থামছে না ক্ষোভ, তদন্ত গেল কেন্দ্রীয় সংস্থায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
মমতা ফাঁসির দাবি তুললেও থামছে না ক্ষোভ, তদন্ত গেল কেন্দ্রীয় সংস্থায়

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে মৌমিতা দেবনাথ নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুরু হয়েছে আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সাধারণ জনগণও।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি তুলেছেন। কিন্তু তাদের ছাত্র-জনতার ক্ষোভ প্রশমন হচ্ছে না।

মৌমিতা দেবনাথের মৃত্যুর ঘটনায় মমতা বলেছেন, আমি কোনো মৃত্যুকে প্রশ্রয় দিই না। কিন্তু যেভাবে নৃশংস হত্যা করা হয়েছে, অপরাধীর ফাঁসির দাবি জানাই।

মুখ্যমন্ত্রী ফাঁসির দাবি তুললেও মৌমিতার হত্যাকারী কে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে পুলিশের। কারণ, এখনও হত্যাকারী সম্পর্কে কোনো ক্লু পায়নি তারা।

শুধু মৌমিতার হত্যাকাণ্ড নয়। এমন অনেক বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করছে কলকাতায়। যা প্রশমন করতে পারছে না মমতা সরকার।

মৌমিতার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ কাজ শুরু করলেও আন্দোলনকারীরা বাহিনীর ওপর ভরসা করতেন পারছেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে হত্যাকাণ্ড তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট।

রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় আদালত সন্তুষ্ট নন, সেটিও জানানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্নও তোলেন হাইকোর্ট। সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশের পাশাপাশি মৃতের পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছেন, তিন সপ্তাহের পর পরবর্তী শুনানি হবে। এদিন আদালতে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

গত ৯ আগস্ট সকালে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় মেডিকেল শিক্ষার্থী মৌমিতা দেবনাথের লাশ। জানা গেছে, মৌমিতা আগের দিন রাত ২টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগে ডিউটি করেছিলেন। এরপর কর্মরত দুই জুনিয়র চিকিৎসকের সাথে রাতের খাওয়া শেষ করে, পড়াশোনার জন্য সেমিনার হলে চলে যান তিনি। সেই সেমিনার হলের মেঝে থেকে উদ্ধার হয় তার অর্ধনগ্ন লাশ।

এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, মৌমিতার মৃত্যুর ঘটনাটি প্রথমে আত্মহত্যা বলে পরিবারকে জানায় পুলিশ। পরে চাপের মুখে পুলিশ স্বীকার করেছে, মৌমিতাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। তাকে নৃশংস অত্যাচারও করা হয়েছিল।

মৌমিতা উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের বাসিন্দা। তার মৃত্যুর ঘটনায় সঞ্জয় নামে পুলিশের নিচুস্তরের এক নিরাপত্তা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, ঘটনায় জড়িত আছে আরও অনেকে। যারা আসল অপরাধী তাদের আড়ালে নিয়ে যেতে একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

চিকিৎসকদের আন্দোলনে গত কয়েকদিনে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। আবার সাধারণ জনগণ যোগ দেওয়ায় এ আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। যে কারণে দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার (১২ আগস্ট) মৌমিতার বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই পুলিশকে দেওয়া বিশেষ নির্দেশে মমতা বলেন, দরকার হলে মৌমিতার বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে কথা বলুন। যিনি সেদিন ফোন করে পরিবারকে খবর দিয়েছিল সঙ্গেও কথা বলুন। কাউকে ছাড়া যাবে না। আমরা দ্রুত বিচার চাই। আমি ফাঁসির দাবি তুলছি।

পুলিশকে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, রোববারের মধ্যে এই তদন্ত শেষ করতে হবে।

এদিকে, আন্দোলনকারীদের দাবি, এত বড় একটা নৃশংস ঘটনায় রোববার অবধি সময় কেন লাগবে? সিসিটিভি ফুটেজ তো সবকিছুই প্রমাণ করছে। রোববার হলে দেরি হয়ে যাবে। প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে। আমরা চাই পুলিশ দ্রুত বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করুক।

মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ মামলার সমস্ত নথি খতিয়ে দেখে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থার সিবিআইকে দায়িত্ব দেন মামলা তদন্তের। শুধু তাই নয়, ঘটনার সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছিল পুলিশ, তাও সিবিআই’র হাতে তুলে বলেছেন বিচারক।

মৌমিতার পরিবারের আইনজীবী ও বামনেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মৃত্যুর পরে পরিবারকে ফোন করে প্রথমে বলা আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। তারপরে আবার ফোন করে বলায় আপনাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে পুলিশে স্বীকার করে বলেছে, আত্মহত্যা নয় করে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা এতে জড়িত ফোনে আমাদের কাছে সমস্ত নথি আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
ভিএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।