ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

চতুর্থ দফায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি

ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১১
ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ

কলকাতা: বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভার চতুর্থ দফার ভোট শেষ হয়েছে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ।

তারপরও বহু ভোটারকে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

সারাদিন ধরেই শাসকদল ও বিরোধীদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ইসির কাছে জমা পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে পোলিং এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগও এসেছে।

৯৮ বুথে এজেন্ট বসতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম।

ইসি জানিয়েছে, সকাল ৭টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর ও বর্ধমান জেলার একাংশে ভোট পড়ছে ৮৪.৭২ শতাংশ।

এর মধ্যে হাওড়ায় ৭৯.৮০, হুগলি ৮১.৯৭, পূর্ব মেদিনীপুর ৮৯.৪১ ও বর্ধমানে ৮৮.০৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভার ৫৯ বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্টকে বসতে দেয়নি তৃণমূল।

এই আসনের বিভিন্ন গ্রামে ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী পরমানন্দ ভারতীর গাড়ির চালককে সকালে হুমকি দেওয়া হয়।

৫৩ নম্বর বুথে তৃণমূলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দারুস সালামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।

এদিকে ওসমানপুরে একজন সিপিএম এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ সময় তাকে মারধোর করা হয়।

এ জেলার পটাশপুর ও খেঁজুরিতেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উত্তর কাঁথির ৪টি বুথেও একই ঘটনা ঘটেছে।

পটাশপুরে চকগোপালপুর গ্রামে ব্যাপক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

এসব ঘটনা নিয়ে সিপিএম অভিযোগ করেছে, বারবার বলা সত্ত্বেও বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীর কুমার রাকেশ ঘটনাস্থলে আসেননি। জেলার মোট ৭৪টি বুথে তারা এজেন্ট বসাতে পারেননি।

হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া কেন্দ্রের তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে সিপিএমের সংর্ঘষ বাধে দলীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায়। দফায় দফায় ব্যাপক সংর্ঘষ হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লাঠি চার্জ করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে নিতে হয়।

এখানে একজন সিপিএম সমর্থক আহত হন।

উত্তরপাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী গায়ক অনুপ ঘোষালের বিরুদ্ধে ভোটের লাইনে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ এসেছে। পুড়শুড়ার পাড়াশ্যামপুরে ১২৯ নম্বর বুথে প্রিজাইডিং অফিসারকে পক্ষপাতিত্ব করার জন্য বদলি করা হয়েছে।

এখানে ৩৬ নম্বর বুথে প্রিসাইডিং অফিসার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এই বিধানসভার অরুন্ডা গ্রামে ১৮৭ নম্বর বুথে দু’বার ভোট যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্য ভোটদান স্থগিত রাখা হয়।

এই কেন্দ্রের দু’টি বুথে বৈদ্যুতিক যন্ত্র খারাপ থাকার কারণে বদল করতে হয়।

খানাকুলের ঘোষপুকুরে ৬৯ নম্বর বুথে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে একজন সিপিএম কর্মী গ্রেপ্তার হন।

এই কেন্দ্রের ৪টি বুথে সিপিএম এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়া হয়।

গোঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথের তৃণমূল পোলিং এজেন্ট নিখোঁজ হয়ে যান ভোট চলাকালে।

শ্রীরামপুর কেন্দ্রে মাহেশ লাইব্রেরি বুথে ভোটযন্ত্রে প্রার্থীর মার্কার পাশে কালি দিয়ে চিহ্নিত করা দেখা গেলে দুপুর ১২টা থেকে ভোট বন্ধ হয়ে যায়।

এ কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচন দাবি করা হয়েছে।

বহু আলোচিত সিঙ্গুর কেন্দ্রে ৬৬ নম্বর বুথে ভোট কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে বুথ জ্যামের অভিযোগে।

এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে ভোট চালু করে।

চন্দননগর কেন্দ্রে নবগ্রাম প্রাথমিক স্কুলে ৪২ এ বুথে তৃণমূল প্রার্থী অশোক সাউ ভোট যন্ত্রে তার নাম ও মার্কার উপর স্টিকার আটকে দেন। এ অবস্থায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে যায়। এরপর ভোট বন্ধ করা হয়।

এই বুথসহ চন্দননগরে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছে সিপিএম।

বর্ধমান শহরে ৯ ওয়ার্ডে নকল বৈদ্যুতিক যন্ত্র নিয়ে প্রচার চালানোর অভিযোগে একজন সিপিএম কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে সিএমএস স্কুলে বহিরাগতদের হঠাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি চার্জ করে।

এই জেলার কেতুগ্রামে সিপিএম প্রার্থী ও তার পোলিং এজেন্টকে ব্যাপক মারধোর করা হয়।

পুলিশ এই ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

৭০ নম্বর বুথে সিপিএম কর্মীদের বুথে আটকে রাখা হয়।

এই অঞ্চলের কয়েকটি বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে জেলার কাটোয়া বিধানসভার মালঞ্চ অঞ্চলে সড়কের দাবিতে ভোট বয়কট করে স্থানীয়রা।

জামালপুরে ১৬২ নম্বর বুথে প্রিসাইডিং অফিসার ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে বৈদ্যুতিক ভোট যন্ত্রটি বন্ধ করে দেন।

পরে নতুন যন্ত্র দিয়ে সেখানে আবার ভোট শুরু হয়। মেমরিতে দু’টি বুথে বৈদ্যুতিক যন্ত্র খারাপ থাকার কারণে বদলাতে হয়। হাওড়া জেলার উদয়নারায়ণপুরের কানকাটে বুথ জ্যামের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার হয়।

এখানে ১৬টি বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম। সাকরাইলে ৪৬ ও ৪৭ নম্বর বুথে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। এর পরে ভোট প্রায় একঘণ্টা বন্ধ থাকে।

ইসির পর্যবেক্ষক ঘটনাস্থলে এলে তাকে ঘেরাও করে সিপিএম কর্মী ও সমর্থকরা।

এই কেন্দ্রেরই ৫৭ ও ৫৮ নম্বর বুথে একদম শেষ বেলায় সিপিএমের এজেন্টকে ব্যাপক মারধোর করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান।

এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে সাধারণ মানুষের ওপর লাঠি চার্জ করা হয়।

এই জেলার বালি কেন্দ্রে রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা সুলতান সিং এর বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

আজ যাদের ভাগ্য নির্ধারণ হল তাদের মধ্যে রয়েছেন- রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নিরূপম সেন, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন রায় চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী নরেন দে, দমকলমন্ত্রী প্রতিম চ্যাটার্জি, খাদ্যপ্রকিয়াকরণ মন্ত্রী মহন্ত চ্যাটার্জি, কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী চক্রধর মাইকাপ ও তথ্যসংস্কৃতি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সৌমেন্দ্রনাথ বেরা।

অন্যদিকে বিরোধী প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- গায়ক অনুপ ঘোষাল, রাজ্যের সাবেক দুই পুলিশ কর্তা রচপাল সিং ও সুলতান সিং।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।