ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতার তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের বিপুল বিজয়

আনোয়ারুল করিম ও রক্তিম দাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১
মমতার তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের বিপুল বিজয়

কলকাতা থেকে: পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে জয় পেল মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। এ জয় নিরঙ্কুশ, বিপুল আর অভূতপূর্ব।

এর ফলে গত ৭টি নির্বাচনের মাধ্যমে বামফ্রন্টের দীর্ঘ ৩৪ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার নিরচ্ছিন্ন ইতিহাসে এবার ছেদ পড়ল। কমিউনিস্ট শাসন অবসানের পথ রচিত হল। দুর্গ ধসে পড়ল বামফ্রন্টের।


জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪৮ টি আসন। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক বেশি আসনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের অভূতপূর্ব জয় বলে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা ব্যানার্জী। তার নেতৃত্বেই গঠিত হতে যাচ্ছে পশ্চিবঙ্গের পরর্বতী সরকার।

এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য করেছেন পদত্যাগ। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন  ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব পালন করে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে মমতা ব্যানার্জিকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
 
আর মহাকরণে চলছে মিষ্টি বিতরণ আর বিভিন্ন অলিতে গলিতে চলছে রঙ ছিটানোর ধুম।

এ পর্যন্ত ঘোষিত সর্বশেষ ২৮৭টি আসনের ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২২৪ আসন, আর বামফ্রন্ট পেয়েছে ৫৮টি আসন আর বাকি দলগুলো পেয়েছে ৫টি আসন।

 শুক্রবার সকাল আটটায় ভোট গণনা শুরুর কিছু সময় পর থেকেই ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের প্রার্থীদের একে একে পরাজয়ের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ও এসইউসিআই জোটের প্রার্থীদের বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকার তথ্য আসে নির্বাচন কমিশনের কাছে।

দুপুরের মধ্যেই অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় বাম রাজত্বের অবসানের খবর। টেলিভিশনে এসব তথ্য জানতে পেরে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের উল্লসিত সমর্থকরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। এদের অনেকেই মোটরসাইকেল, গাড়িযোগে বিজয় মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে কালীঘাটে হরিশমুখার্জি রোডের মমতার বাড়ির দিকে।

মমতা বাড়ি থেকে বের না হলেও তার পরিবারের সদস্যরা রাজ্যের মানুষদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পার্থ চট্টপাধ্যায় দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে মমতা ব্যানার্জির বাড়ির সামনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘তৃণমূল নেত্রী এই জয়কে সাধারণ মানুষের জয় বলেই ঘোষণা করেছেন। ’

তিনি বলেন, ‘বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। নেত্রী নিজেই তা জানাবেন। ’

তিনি আরও বলেন, ‘জয় হলেও দলের সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। ’

এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে রাজ্যের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা সুনীল কুমার গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলগুলোকে সংযত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ’  

নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকারের মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ কয়েকজন জাঁদরেল কমিউনিস্ট নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রীরা নির্বাচনে ধরাশায়ী হচ্ছেন।

অন্যদিকে মৌলালীতে সিপিএমের কার্যালয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। বেলা সাড়ে দশটার দিকে মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু দলীয় কার্যালয়ে আসেন। কলকাতার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জরুরি বৈঠকে বসেন বলে জানা যায়।     

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যাদবপুর আসনে হেরে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মণীষ গুপ্তের কাছে। মণীষ গুপ্ত কয়েক বছর আগেও রাজ্য সরকারের চাকরি করতেন, ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব।

এছাড়া উত্তর চব্বিশ পরগণার খড়দহ আসনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত হেরে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী নেতা অমিত মিত্রের কাছে। অমিত মিত্র ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘ফিকি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বহুল আলোচিত সিপিএম নেতা ও আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব হারছেন নাট্যকার ব্রাত্য বসুর কাছে। গৌতম দেব বৃহস্পতিবারও বলেছেন, তিনিই জিতছেন। এই গৌতম দেবকে সিপিএমের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে মূখ্যমন্ত্রীও বিবেচনা করা হচ্ছিল।

উল্লেখযোগ্যভাগে বামদের দুর্গ হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকের পরিচিতি পাওয়া বর্ধমান, উত্তরের জেলাগুলো ও জঙ্গলমহলের মানুষ এবার পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। এই এলাকাগুলোতে হেরে যাওয়ার পথে থাকা বাম নেতারা হচ্ছেন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী, পৌরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র, শিল্পমন্ত্রী নিরূপম সেন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এই নির্বাচনে প্রার্থী নন। তিনি সংসদ সদস্য হয়ে ২০০৯ সাল থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে নির্বাচনে তার জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হবেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে ছয় মাসের মধ্যে কোনো একটি আসনে তাকে নির্বাচিত হতে হবে।

রাজ্যের ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেয় ২২৭টিতে, কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৬৫ এবং এসইউসিআই প্রার্থী দেয় ২টি আসনে।  

অপরপক্ষে ক্ষমতাসীন বাম জোটের মধ্যে সিপিএম ২১১, ফরোয়ার্ড ব্লক ৩৪, আরএসপি ২৩, সিপিআই ১৪, সমাজবাদী পার্টি ৫, ডিএসপি ২, মার্ক্সবাদী ফরোয়ার্ড ব্লক ২, বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস ১, আরজেডি ১ এবং আরসিপিআই ১টি আসনে প্রার্থী দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।