কলকাতা: ‘ডার্বি’ শব্দটা ঘোড় দৌড়ের মাঠের পরিচিত শব্দ। কিন্তু ইদানীংকালে কলকাতার ফুটবল মাঠের অন্যতম উত্তেজনাময় শব্দ এই ‘ডার্বি’।
‘ডার্বি’ শব্দটা কলকাতা ময়দানে আমদানি হয়েছে ইউরোপ থেকে। ইউরোপিয়ান লিগগুলোতে যখন একই শহরের দু’টি দল কোনো ম্যাচে মুখোমুখি হয় তখন তাকে ডার্বি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তবে কলকাতার ডার্বির আবহাওয়াটা বিশ্বের যেকোনো ফুটবল ম্যাচের থেকে আলাদা।
ইস্ট বেঙ্গল বনাম মোহনবাগান, কলকাতায় এই বড় ম্যাচ ঘিরে প্রতিবারই উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। দৈনিক কাগজের খেলার পাতা থেকে পাড়ার চায়ের দোকান হয়ে অফিসের কেবিন পর্যন্ত উত্তেজনায় ফুটতে থাকে। সমর্থকদের খেলা নিয়ে তর্ক বিতর্ক , খেলার পরিসংখ্যান কোচের মস্তিষ্ক সর্বোপরি জ্যোতিষের ভবিষ্যৎবাণী সব কিছুই চলে আসে ফুটবলের আলোচনায়।
আসলে কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান মানে শুধু ফুটবল খেলা নয়, এই খেলায় জুড়ে আছে আবেগ, আছে ইতিহাস, আছে ভূমিহীন, উদ্বাস্তু মানুষের লড়াই করে জায়গা করে নেওয়া আর সেই লড়াই করতে করতে পথের প্রান্তে হারিয়ে যাওয়া বহু মানুষের স্মৃতি।
অন্যদিকে আছে পশ্চিমবঙ্গের আদি বসিন্দাদের ঐতিহ্য, নিজেরদের জায়গা ধরে রাখার লড়াই। আর সেই লড়াই আবর্তিত হয়েছে ফুটবলকে ঘিরে। খালি পায়ে ফুটবল খেলে ব্রিটিশ বুট পরা খেলোয়াড় হারানো ক্লাব মোহনবাগানের শ্বাসে প্রশ্বাসে মিলে আছে ১০০ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্য আর স্বাধীনতার লড়াইয়ের দিনগুলির স্মৃতি।
দিন বদলেছে, তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের উত্তর পুরুষরা মিশে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের সঙ্গে। সময়ে সাথে সাথে মিলে মিশে গেছে কথা বলার ভাষা। গোটা কলকাতা ঘুরলে কোন ভাবেই খুব মোটা দাগে ঘটি বাঙালের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন কি কলকাতার কলোনি অঞ্চলের হেঁসেলে উঁকি মারলেও সেই পার্থক্য বর্তমানে খুঁজে পাওয়া একটু কঠিনই।
কিন্তু যখন লাল হলুদ ইস্টবেঙ্গল বনাম সবুজ মেরুন মোহনবাগান হয়ে যায় তখন সরাসরি কলকাতা ভাগ হয়ে যায় দুটি ভাগে। লাল হলুদের বাঙাল আর সবুজ মেরুনের ঘটিরা গলার শিরা ফুলিয়ে নিজেদের দলের সমর্থনে গলা ফাটাতে থাকে।
ফুটবল নিয়ে কলকাতার উন্মাদনা দেখে অবাক হয়ে যান কলকাতায় খেলতে আসা বিদেশি ফুটবল খেলোয়াড়রা। ফুটবলে গোটা বিশ্বের মধ্যে ১৬৩ নম্বরে থাকা একটি দেশ ভারত এবং তার একটি শহর কলকাতার ফুটবল উন্মাদনা অবাক করেছে পেলে এবং মারাদোনাকেও।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার দর্শকদের সামনে আয়োজিত হতে চলেছে ডার্বি ম্যাচটি। আর টেলিভিশনের সামনে দেখবেন অন্তত আরও ৪৫ মিলিয়ন মানুষ।
একদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন অন্যদিকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি, তাই মনে করা হচ্ছে উপচে পড়বে গ্যালারি। আর এই উপচে পড়া গ্যালারির সামনেই তাদের সমর্থকদের জন্য জয় ছিনিয়ে আনতে চেষ্টা করবে দুই দল। আর সেই খেলা দেখার জন্য অপেক্ষায় গোটা কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
ভি.এস/আরআই