ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মেলায় মশগুল দুই বাঙলার হ্যারি পটাররা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
মেলায় মশগুল দুই বাঙলার হ্যারি পটাররা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: শূন্য থেকে পাখি, কিংবা হাতের চেটোয় মিলিয়ে যাওয়া কয়েন। কোথাও ইন্দ্রজালের রহস্য, কোথাও ‘গিলি গিলি গে’ মন্ত্রে খাল খাঁচায় হাজির এক জোড়া পায়রা।

একটা মেলা যার পুরোটাই অবাক করা কাণ্ড কারখানায় ভরা। একটাই মেলা যার সবটাই বাস্তব আবার অবাস্তবও। এমনই এক মেলা বসেছে কলকাতায়।

আর যাদু মেলায় মিশেছে দুই বাঙলা। মেলার মূল থিম ‘বাংলাদেশ’। ১২ জনের একটি দল এসেছে বাংলাদেশ থেকে। সেখান থেকেও এসেছে যাদুকররা। মেলার তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে মিলে গেছে গঙ্গা আর পদ্মার স্রোত। এমন কি সুদূর জার্মানি থেকেও যাদুকর এসেছেন এই মেলার টানে।

‘হ্যারি পটারের বিদ্যালয়’ কিংবা ‘ভানুমতীর রাজসভা’ যেটাই বলা হোক কলকাতার নন্দন- রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গণ এখন জাদুর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে রং, না রাজনীতির নয়, যাদুকরের হাতে ধরা ফুলের। ভোটের উত্তাপে ফুটতে হয়ে থাকা শহরের বুকে বর্তমানে নন্দন- রবীন্দ্র সদন চত্বর  যেন এক মায়াবী জগৎ। আর এই মায়াবী জগতের নাম ‘যাদু মেলা’।

শুধু মঞ্চের যাদুকররাই নন। প্রতিদিন বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে হাজির হচ্ছেন হারিয়ে যাওয়া ‘মাদারি’ থেকে শুরু করে পুতুল নাচের শিল্পীরা। মেলার আয়োজক ‘ফিমা’। ‘ফিমা’র সম্পাদক শান্তনু সেন এবং সভাপতি সঞ্জয় চ্যাটার্জ্জী জানালেন ,প্রাণ ৫০০ জন প্রতিনিধি মেলায় এসেছে। যাদুর সঙ্গে আছে জাগ্লিং, বালি চিত্র, ছায়া শিল্প (শ্যাডো আর্ট) প্রভৃতি। তারা আরও জানালেন এটি বিশ্বের একমাত্র ‘যাদু মেলা’। কলকাতায় এই মেলার বয়স তিন বছর।

বিগত কয়েক বছর ধরেই কলকাতায় পালিত হচ্ছে এই যাদু মেলা। ইট কাঠ পাথরের শহরে এই মেলায় হাজির কল্পনার রং। যেন পরীদের দেশ থেকে নিয়ে আসা সোনার কাঠির ছোঁয়ায় অসম্ভব পরিণত হচ্ছে সম্ভবে। আর সেই দেখে আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠছে ছোটদের মুখ।

যেন শূন্য থেকে শুধু সাদা হাঁসেদের পালক কিংবা টুপি থেকে বেড়িয়ে আসা তারাদের মত  রঙিন কাগজের ফোয়ারা নয় মেলায় হাজির যাদুকররা অন্য কোন দুনিয়ে থেকে হাজির করছেন রাশিরাশি খুশি, হাসি আর ব্যাগ ভর্তি মজা। আর সেই মজাতে মশগুল শুধু শিশুরা নয় তাদের সঙ্গে আসা বড়রাও। যাদু মেলা যেন বলছে এই শহরেই পরীরা থাকতো কোন এক সময়। রূপকথা যেন লেখা হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার উপরে মেঘদের দেশে।

পরীরা যেন আজও নেমে আসে কলকাতা ময়দানে, গঙ্গার ধারে, কবিতা শোনায় তিনশ’ বছর পেরিয়ে আসা এক তরুণ জনপথকে। সেই রূপকথাই পা রেখেছে ২০১৬ বসন্তে। তিলোত্তমার বুকে।

কলকাতার নন্দন-রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গণে ‘যাদু মেলা’ উপলক্ষে বসেছে জাদু সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিসের স্টল। কোন স্টলে জাদুকর দেখাচ্ছেন তাদের অদ্ভুত রকমের খেলা। একটি স্টলে দাঁড়িয়ে পড়লে পা সরতে চায় না। চোখে সামনে অবাস্তব হয়ে উঠছে বাস্তব। মগজ বলছে  এর পিছনে আছে যাদুকরের কৌশল। কিন্তু চোখ যেন বিশ্বাস করতে চায় না।

মেলায় হাজির যাদুকররা বার বার বলছেন সমস্ত যাদুর পিছনেই আছে বিজ্ঞান। আর আছে দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। নতুন প্রজন্মকে তারা উৎসাহিত করছেন, যাদু শিল্প প্রচারের জন্য।

কোন স্টলে শিশুদের সেখান হচ্ছে জাদুর কিছু কৌশল। হাতে কলমে শেখাচ্ছেন যাদুকররা। রয়েছে যাদু নিয়ে বই ,সিডি সহ আরও নানা রকম জিনিস।

মঞ্চে অবাক করা যাদু দেখাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের যাদুকররা। বিশেষ করে বয়সে শিশু যাদুকরদের প্রদর্শনী দেখে অবাক হতে হয়। অভিনব এই মেলার আয়োজক ‘ফিমা’র পক্ষে জানান হয়েছে , ভারতীয় উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যাদু ঐতিহাসিক সময় ধরে নিজের একটি আলাদা জায়গা ধরে রেখেছে। যাদুর প্রসার এবং প্রচারের জন্য এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে।

যাদুর যে একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে সেটা বোঝা যায় জন সমাগম এবং উৎসাহীদের ভিড় দেখে। জানিয়েছেন আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে এই মেলা করবার পরিকল্পনা আছে তাদের। মেলা চলবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
ভি.এস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।