কলকাতা: প্রয়াত হলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। দক্ষিণ ভারতে ‘আম্মা’ হিসেবেই বেশি পরিচিত তিনি।
রোববার (০৪ ডিসেম্বর ) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তামিলনাড়ুর সদ্য প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ওইসময় থেকেই তার অবস্থার অবনতির খবর আসতে থাকে।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জয়ললিতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর।
চলচ্চিত্রের নায়িকা থেকে রাজনৈতিক নেত্রী হয়ে ওঠা জয়ললিতার জীবন ছিলো অনেকটা ‘চলচ্চিত্রে’র মতোই। সেখানে পরতে পরতে ছিলো উত্থান আর পতন।
চলচ্চিত্রের জীবনে দক্ষিণের ছবির ‘এক নম্বর’ নায়িকা না হলেও রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন তাবড় নেত্রী।
শুধু তামিলনাড়ু নয়, যাকে সমীহ করতে বাধ্য হয়েছিলো গোটা ভারতের রাজনৈতিক মহল।
জয়ললিতার জনপ্রিয়তার বিষয়টি বুঝতে হলে দক্ষিণ ভারতের রাজনীতি এবং সেখানকার চলচ্চিত্র জগতটি বোঝা দরকার।
না হলে বোঝা যাবে না, কেন একজন মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের মায়ের আসনে বসায় সে রাজ্যের মানুষ।
কেন একজন নেত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও তাকে বারবার ফিরিয়ে আনে ক্ষমতার কেন্দ্রে।
দক্ষিণ ভারতে নায়ক ও নায়িকাদের সর্বোচ্চ আসনে বসান সেখানকার মানুষ। তাদের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা তাদের প্রায় ঈশ্বরের (!) পর্যায়ে নিয়ে যায়।
এটা দক্ষিণ ভারতের প্রজন্মের পর প্রজন্মের রীতি। জয়ললিতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
ভারতীয় রাজনীতিতে তামিল নেতা এবং এআইডিএমকে দলের প্রতিষ্ঠাতা রামাচন্দ্রমের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন অভিনেত্রী জয়ললিতা।
১৯৮২ সালে তিনি এ দলের সদস্য হন। ১৯৮৩ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন। ১৯৯১ সালে তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।
এরপর জয়ললিতার রাজনৈতিক জীবনে আসে নানা ওঠাপড়া। ১৯৯৬ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন ২০০১ সালে।
শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। মোট পাঁচবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন জয়ললিতা।
রাজনীতিতে আসার আগে তামিল চলচ্চিত্র জগতের নায়িকা হিসেবে যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন জয়ললিতা।
ভারতনাট্যম, মনিপুরী, কত্থক নাচে পটু জয়ললিতার প্রথম তামিল চলচ্চিত্র ভেনুরা আদাই, ১৯৬৫ সালে নির্মিত হয়।
এরপর থেকে তার সাফল্যের গতি কখনই রুদ্ধ হয়নি। তিনি বহু পুরস্কারে সম্মানিত হন।
তবে চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারের মতো তার রাজনীতির ক্যারিয়ার সহজ সরল ছিলো না। সেখানে প্রতিটি মুহূর্তে ছিলো নানা ঘাত প্রতিঘাতে ভরা। এর মধ্যেই তিনি তামিলনাড়ু ছাড়িয়ে দিল্লির রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করেন।
এমন কি অনেক সময়ই দিল্লির ক্ষমতার ভারসাম্য তার হাতেই নিয়ন্ত্রিত হতো।
২০১৪ সালে আয় বহির্ভুত সম্পত্তি মামালায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ হারান। এমনকি রাজনৈতিক জীবনের শেষ ভাগে তাকে জেলেও যেতে হয়েছিলো।
যদিও জেলে থেকে ফিরে এসে তিনি আবারও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। এর থেকেই বোঝা যায় দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে ‘আম্মা’র জনপ্রিয়তা।
এই জনপ্রিয়তার কারণেই ‘আম্মা’র শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলেই তামিলনাড়ুতে নামানো হয় আধাসামরিক বাহিনী।
আশঙ্কা করা হয়েছিলো জয়ললিতার ভক্তদের আবেগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
আম্মা’র অসুস্থ হবার খবর পাওয়ার পরেই তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় পূজা। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে গোটা ভারতের প্রায় সব রাজনীতিকরা টুইট করে জয়ললিতার সুস্থতা কামনা করেন।
কিন্তু শেষমেষ সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আম্মা। দক্ষিণ ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে শেষ হয়ে গেলো একটি অধ্যায়।
এদিকে গভীর রাতে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তামিলনাড়ুর রাস্তায় নামে শোকার্ত মানুষের ঢল। শীত উপেক্ষা করে চেন্নাইয়ের অ্যাপেলো হাসপাতালের সামনে জড়ো হয় হাজারে হাজারে মানুষ।
একজন রাজনীতিকের মৃত্যুতে এ ধরনের আবেগ ভারতের ইতিহাসে খুবই কম দেখা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জয়ললিতার প্রয়াণ তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলে সেটাই বর্তমানে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে দেখার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
ভিএস/এমএ