কলকাতার নাখোদা মসজিদ অবিভক্ত বাংলার অন্যতম মসজিদ। ঐতিহাসিক ভাবেও এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
১৯২৬ সালে মসজিদটির নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলেন কুচ্চি মেমন জামাত নামে একটি দলের উপর। সেই দলের নেতৃত্ব দেন আব্দুর রহিম ওসমান। অতীতে ওসমান ছিলেন এক বিখ্যাত নাবিক। সেই থেকেই এই মসজিদটি ‘নাখোদা মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
তৎকালীন সময় মসজিদটি নির্মাণ করতে ১৫ লক্ষ রুপি খরচ হয়। যার আজকের বাজার মূল্য কয়েকশ’ কোটি রুপি। ১৯২৬ সালে গুজরাটে কচ্ছের বাসিন্দা আব্দার রহিম ওসমানের পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমান মসজিদের কাঠামোটি নির্মিত হয়। তার আগে নাখোদা মসজিদটি ছিলো ছোটো আকারে।
মসজিদটি নির্মাণ করা হয় সম্রাট আকবরের সমাধির আদলে। এছাড়া মসজিদের প্রবেশ পথ অনেকটা আগ্রার ফতেহপুর সিক্রীর বুলন্দ দরওয়াজার মতো। একটি গম্বুজ এবং দু’টি মিনার রয়েছে। মিনার দু’টির উচ্চতা ১৫১ ফুট। দু’টি বড়ো মিনার বাদেও আরো ২৫টি ছোট মিনার আছে। যেগুলির উচ্চতা ১০০ ফুট থেকে ১১৭ ফুটের মতো। চাতালটি দুর্লভ গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি। এই পাথরগুলি সেই সময় বিহারের তোলেপুর থেকে আনা হয়েছিল। মসজিদটির অভ্যন্তর ভাগে চোখ ধাঁধানো অলঙ্করণ এবং সৃজনশীলতা বিত্তমান। যা দেখে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াতেই হয়।
চিৎপুর রোড, যেখানে মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে, সেটিকে কেন্দ্র করে এমন কিছু জিনিস পাওয়া যায়, যেগুলো কলকাতার অন্যান্য স্থানে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এখানেই সবচেয়ে ভালো আতর, মিষ্টি সুগন্ধি পানি পাওয়া যায়। পাওয়া যায় মিষ্টি জর্দা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক থেকে আসা নকশী করা নামাজি টুপির বড়ো মার্কেট এখানেই। দেশি-বিদেশি পাঞ্জাবি, সেরওয়ানির পাইকারি বাজারও এখানে। শুধু পোশাক নয়, কলকাতার সবচেয়ে বড়ো বাদ্যযন্ত্রর মার্কেটও এথানেই।
প্রতিদিন মসজিদকে কেন্দ্র করে নিজের অজান্তেই প্রদক্ষিণ করে চলেছে হাজারে হাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে পর্যটকের দল। আর এটাই বাস্তব। যাকে কেন্দ্র করে এতো আয়োজন, সে সাজবে না তাই কি হয়! ইতিহাসের পাতার আর এক অধ্যায়, ঈদের আগে নতুন ভাবে সেজে ওঠে প্রতিবার। যার নাম নাখোদা মসজিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, ২৪ জুন, ২০১৭
ভিএস/জেডএম