ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতায় বড় আকর্ষণ মন্ত্রীদের পূজা

স্মিতা সাহা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
কলকাতায় বড় আকর্ষণ মন্ত্রীদের পূজা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: রাজনীতিতে উৎসব একটি বড় মাধ্যম। উৎসবের মধ্য দিয়ে সহজে জনসমুদ্রে মিশে যাওয়া যায়। ব্যতিক্রম না কলকাতাতেও। পশ্চিমবঙ্গে নেতা কিংবা মন্ত্রীদের উদ্যোগে আয়োজিত পূজা-পার্বণ আকর্ষণে নতুন মাত্রা যোগ করে। 

এবার রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস ও বিধায়ক সুজিত বসুর পূজা কলকাতার সেরা তালিকায় রয়েছে। এখানে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ও কাজ করে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

 
 
মন্ত্রী ফিরাদ হাকিমের পূজা:
 ছবি: বাংলানিউজ
উৎসব সর্বদাই মিলনের রূপ নেয়। ১৯৭০ সালে চেতলা অগ্রণীর কালীপূজায় অংশ নিয়েছিলেন দশ বছরের কিশোর ববি হাকিম হিন্দু সহপাঠীদের সঙ্গে।  

এরপর পেরিয়ে গেছে কয়েক দশক। নব্বইয়ের গোড়ায় ববি হাকিমের শুরু চেতলা অগ্রণীর দুর্গাপূজা দিয়ে। যেখানে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন যুবক ববি হাকিম। সেই পথ চলা শুরু। ববি হাকিম ভালো নাম ফিরাদ হাকিম। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগোরন্নয়ন মন্ত্রী।
 
কলকাতার সেরা পূজার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চেতলা অগ্রণীর পূজা। পূজাটি কোনো থিম বা সাবেকি ঘরনায় হয় না। প্রতিবার এখানের পূজায় একটা বিশেষ শিল্পের ছোঁয়া থাকে।  এবারেও তার ব্যাতক্রম হয়নি। প্রতিমাটি তৈরি করা হয়েছে ১৫ ফুটের একটি মেহগনী গাছ খোদাই করে। এছাড়া এই পূজার আরও একটি বিষেশত্ত্ব আছে। মহালয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতিমার চোখ নিজ হাতে আঁকেন। যেটা এখানে বলা হয় চক্ষু দান। এ বছর পূজাটি ২৫ বছরে পদার্পন করলো। চেতলা অগ্রণী ক্লাবের টোটাল পুজো বাজেট অফিসিয়ালী ৩৫ লাখ রুপির কাছাকাছি।  
 
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অরূপ বিশ্বাসের পূজা:
 
ছবি: বাংলানিউজএ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখ। দর্শক টানতে একজনের ভরসা হাইটেক প্রযুক্তি। অন্যজনের ভরসা বাঁশের কারুকাজে। পূজা সেরা হওয়ার লড়াইয়ে যুযুধান নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘ বনাম নাকতলা উদয়ন সংঘ।  

সম্মুখ ‘সমরে’ তৃণমূলের দুই নামজাদা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অরূপ বিশ্বাস। কলকাতার অন্যতম হাই প্রোফাইল পূজা নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের নামের আগে উচ্চারিত হয় ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নাম।  

একই সঙ্গে নাকতলা উদয়ন সংঘের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
 
গত কয়েক দশক ধরেই কলকাতার সেরা পূজার তালিকার প্রথম একাদশে জায়গা পাকা করে ফেলেছে সুরুচি সংঘ। সেই সম্মান ধরে রাখার ব্যাপারে এবারও আত্মবিশ্বাসী তারা। এ বছর সুরুচি সংঘের পুজোর থিম ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’।  

পূজার প্রধান কর্মকর্তা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কথায়, ‘দেশের চারিদিকে অসহিষ্ণুতার বার্তাবরণ তৈরি হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তার বিরুদ্ধে মানুষকে দিক নির্দেশনা দিতেই ভাবনায় সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছি আমরা। সেই সঙ্গে সুর শুনতে পাওয়া যাবে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা থিম সং -এ। ’

ছবি: বাংলানিউজসুরুচি সংঘের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ , বেত ও ধুঁধুল দিয়ে। মৌমাছির আদলে গড়ে উঠছে মণ্ডপ। মণ্ডপ জুড়ে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের তৈরি হস্তশিল্পের নিদর্শন।  

১৫টি প্রজাতির বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ত্রিপুরা, আসামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সব বাঁশ ও বেত সংগ্রহ করা হয়েছে।  সুরুচি সংঘের টোটাল বাজেট ৩০ লাখ রুপির মতো।
 
পূজার থিমে টেক্কা দিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলা উদয়ন সংঘের থিম ‘অসু অন্ত ’। বেদে আছে, অগ্নি বায়ুকে পোড়ালে একটা বিন্দুর উৎপত্তি হয়। সেটাই সৃষ্টি, জন্ম - জীবন।  

আবার বায়ু অগ্নিতে নিজেকে সমর্পণ করলে, তা হয় মৃত্যু। যার মর্মার্থ, জীবন ও মৃত্যু একই বিন্দুতে বাঁধা।  জীবনের এই ধ্রুব সত্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রযুক্তির সাহায্যে। নাকতলা উদয়নের কর্মকর্তা তথা পৌরপিতা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানান, কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই। প্রেস্টিজ ফাইটের ব্যাপারও নেই। আমরা শুধু পুজো করি না, নতুন শিল্পকলা সৃষ্টি করি।

নাকতলা উদয়ন সংঘের টোটাল বাজেট ৩৫ লাখ রুপি।
 
বিধায়ক সুজিত বসুর পুজো:
 
লেক টাউনে মাহিষ্মতী!  সেই কোনো প্রাচীনকালের একটা দক্ষিণের রাজ্য। যার রাজা ছিলেন অমরেন্দ্র বাহুবলী। যাকে নিয়ে তৈরি হয়ে গেল দুই দুইটা সুপারহিট সিনেমা। সেই রাজ্য আর রাজপ্রাসাদই এবার উঠে এসেছে লেক টাউনের বিখ্যাত শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে।
 ছবি: বাংলানিউজ
প্রাসাদের সুউচ্চ চূড়া দেখা যাচ্ছে বেশ দূর থেকেই। মণ্ডপের কাছে এসে বোঝা গেল আয়োজনও বিশাল।  ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু কিশোর গোস্বামী বলেন, বাহুবলীর বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে ক্লাব সভাপতি তথা বিধায়ক সুজিত বসুই বাহুবলী-২ থিম করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই মতো কাজ করেছি।  
 
মণ্ডপে ঢোকার মুখেই দর্শকদের স্বাগত জানাবে দু’টি সুবিশাল হাতি। প্রধান ফটক পেরিয়ে যতো এগোনো যাবে, ততই যেন দর্শকদের মনে হতে থাকবে সাক্ষাৎ মাহিষ্মতীর রাজবাড়িতে এসে পড়েছেন তারা। রাজপ্রসাদের মধ্যে সপরিবারে দশভূজা দুর্গা।
 
প্রতিমার সাজেও রয়েছে চমক। সোনার গয়নায় সজ্জিত অসূরদলনী ও তার সন্তানেরা।  প্রতিমার মুকুটেও বাহুবলী ফিল। সম্পূর্ণ সোনার গয়না স্পন্সর করেছে সেনোকো গোল্ড।

যার বাজার মুল্য সাড়ে চার কোটি রুপি। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুরো পূজার বাজেট ২০ কোটি রুপি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।