কলকাতা: পড়ন্ত বিকেল। পাখিদের বাসায় ফেরার তাড়া।
মানুষের তৈরি কাঁটাতারের রাজনৈতিক সীমান্ত কি বিষয়, তা তো জানে না পশুপাখিরা। জানলেও মানে না আকাশ-জল-জঙ্গল। তাই তো অগ্রহায়নের মাঝামাঝি শীতের আমেজ পড়তেই দুই বাংলার সুন্দরবন সীমান্তে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাতে শুরু করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলার পাখিরালয় গ্রাম লাগোয়, ভারতের শেষ ভাগের ফরেস্ট ঝিঙেখালি। অপর পাড়ে বাংলাদেশের কৈখালি, কুঁড়েখালি, কালমঞ্চি জঙ্গল।
সারাবছরই নানান প্রজাতির পাখিদের বাস এই সীমান্তবর্তী জঙ্গলে। তারই সুবাদে কালীতলা পঞ্চায়েতের অংশ গ্রামটির নাম রাখা হয়েছিল পাখিরালয় গ্রাম। বিশেষ করে শীত মৌসুম এলেই দেশি-বিদেশি পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায় দুই বাংলার এই জঙ্গলজুড়ে।
এই মৌসুমে সুন্দরবনের ঝিঙেখালি ফরেস্ট লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্তঘেষা কালীতলা গ্রামের পাখিরালয়ে পর্যটকরা ভিড় জমান পাখিদের সংসার জীবন দেখতে। শীতের সময় দেশ-বিদেশের নাম না জানা বহু পাখির দেখা মেলে এই জঙ্গলে।
তারা দিনভর মনের আনন্দে এদিক - সেদিক ওড়ার পর বিকেল গড়াতেই জঙ্গলে ফিরে যায় এসব পাখিরা। তাদের চলন-বলন, নানান অঙ্গভঙ্গী, পরিবার নিয়ে সংসার, প্রেমজীবন ফ্রেমবন্দী করার জন্য পাখিপ্রেমীরা ক্যামেরা হাতে অপেক্ষায় থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
তবে পাখিদের আনাগোনার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য ভোরবেলায়। ওই সময় তারা বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে পড়ে জঙ্গল ছেড়ে। বিনা বাধায় পার করে এক দেশ থেকে আরেক দেশের সীমান্ত। ‘নো ভিসা - নো পাসপোর্ট’। পাখি প্রেমীদের কাছে সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
পাখিপ্রেমী পর্যটক ছাড়াও শীতের সময় সুন্দরবনের এই জঙ্গলের পাশে পিকনিক করতেও আসতেন বহু মানুষ। তারস্বরে সাউন্ড সিস্টেম বা বক্সের আওয়াজে একসময় বন্যপ্রাণী ও পাখিরা সমস্যায় পড়ত। কিন্তু এখন তা আর হয় না। কারণ স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি নিষেধ করা হয়েছে জোরে বক্স বাজানো নিয়ে।
তবে চড়ুইভাতি করতে আশা মানুষরা মিউজিক বাজান না এমনটা নয়। তবে তা কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসারে। কারণ পিকনিকে টিমের ওপর প্রশাসনের কড়া নজর থাকে।
এবারে করোনার প্রভাবে দূষণের মাত্রা অনেকখানি কম। সেই কারণেই পাখিদের আনাগোনাও অনেকখানি বেড়েছে। আর সে কারণে পর্যটকরাও ভিড় জমাচ্ছেন সুন্দরবনের পাখিরালয় জঙ্গলে। সাধারণত পরিযায়ী পাখিরা পৌষের দিকে ভিড় জমায়। এমনটাই মত গ্রামবাসীদের।
ওই অঞ্চলে রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্তা পরিমল বিশ্বাস বলেন, পাখিরালয়ে এবার পাখিদের আনাগোনা অনেকটাই বেশি। কারণ অন্যান্য বারের তুলনায় বাতাসে দূষণের মাত্রা কম।
এর পাশাপশি তিনি জানান, পাখিদের দেখার জন্য হিঙ্গলগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জঙ্গলের পাশ বরাবর কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সুন্দরবনের পাখিরালয় দেখার জন্য গেস্টহাউসও তৈরি করা হয়েছে। মানুষের ভিড় বাড়লে আগামী দিনে গেস্টহাউস আরও বাড়াবে।
ফলে চলমান করোনা উপেক্ষা করে, জলে-জঙ্গলে রাত কাটাতে এক বা দুইরাতের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। হয়ত এরপর সময় নাও মিলতে পারে। কারণ আগামীবছর বিধানসভা নির্বাচন। আর তার উষ্ণতা শীতের মধ্যেই ভালোই টের পেতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২০
ভিএস/এমকেআর