কলকাতা: কলকাতার পর পশ্চিমবঙ্গের ১০৮টি পুরসভায় ভোট।
বৃহস্পতিবার(৩ ফেব্রুয়ারি) রাজ্য নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে জানিয়েছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮টি পুরসভায় (পৌরসভা) ভোট।
তৃতীয়বার পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভা ক্ষমতা পাওয়ার পর শাসক দলের প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাকি পুরসভার নির্বাচন নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। কারণ বাংলা দখলের পর মমতার লক্ষ্য ভারতের মসনদ। ২০১৯ সালের পর ২০২৪ এ ভারতের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ফের ৪২-এ বিয়াল্লিশ এর ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদিও এ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে লড়াই করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে দ্বিতীয়বার মোদী ঝড়ে সেই আশা পূর্ণ হয়নি মমতার। বরং পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ১৮টি আসন। ২২টি আসন নিয়ে থেমে থাকতে হয়েছিল মমতাকে। পাশাপাশি ভারতের আর কোনো রাজ্য থেকে ভোটের ময়দানে নামেনি তার দল। তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের পরিস্থিতির অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। পাশাপাশি ছোট ছোট রাজ্যে বিধানসভায় প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। তাই ফের একবার পশ্চিমবঙ্গের শক্তিটা পরখ করতে চাইছেন মমতা।
তবে অভিজ্ঞ মহলের একাংশের মতে, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ দখলের পর নতুন করে কি আর পরখ করার আছে মমতার? তবে বাকি অংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার এক নয়, ফলে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বঙ্গবাসীর মধ্যে নানান ইকুয়েশন থাকে। আর সেটাই পরখ করতে চাইছেন মমতা। এছাড়া একবার হয়নি বলে লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়ার নারী যে তিনি নন সে কথাও আবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৪ সালের পর ২০১৯ সালেও বাংলাসহ ভারতে মোদী হাওয়া অনেকটা প্রভাব ফেলেছিল। তাছাড়া গত লোকসভা নির্বাচনে দলের অন্দরে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’দের শনাক্ত করতে পারেননি নেত্রী মমতা। সে সময় দলের বহু নেতানেত্রী বিজেপিতে যোগ না দিয়েও মোদী বাহিনীকে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ব্যাপক সক্রিয় হয়েছিলেন মমতার এক সময়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়। তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে। সেই মুকুল আবার মমতার দলে ফিরেছেন। এখন তার দয়িত্ব ত্রিপুরা রাজ্যের।
রাজনৈতিক সূত্র মতে, সেই সময় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিতে চাওয়া নেতৃত্বদের দিল্লি বলেছিল, দল বদলানোর দরকার নেই। ওখানে থেকেই মমতার অন্দরের খবরা-খবর দাও। এখন দল বদলালে চিহ্নিত হয়ে যাবে। ফলে তার ফল যা হওয়ার হয়েছিল। এবার অন্তত সেই পরিস্থিতি নেই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির মধ্যে এখন বড় ধরনের চির ধরেছে। যেই ফাটল দিল্লি থেকেও সম্ভবত দেখতে পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া মোদী-শাহ জুটি বাংলা দখলে বড়মাপের ফ্লপ! তা তারা জানেন। এমনকি এ মুহূর্তে তাদের ঊর্ধ্বে কেউ নেই, তাও তারা জানেন। ফলে বিজেপির সেই সাংগঠনিক হাল দেখে ফের ৪২ এ ৪২ (বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ) স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তৃণমূল প্রধান। তবে মোদী মানেই চমক! তা ভালো হোক বা মন্দ। ফলে শেষবেলায় তার ঝুলি থেকে কি ম্যাজিক থাকবে, তা তো সময় বলবে। কারণ ২০২৪, মানে আরও দু’বছর। ফলে মোদী না মমতা, কাকে বেছে নেবে বাংলাসহ ভারত, তা সময় বলবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
ভিএস/এসআই