আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরার মাটিতে ড্রাগনের ফলন ভালো হওয়ায় রাজ্য সরকার ফলটি চাষে চাষীদের উৎসাহ দিচ্ছে। এদিকে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দফতরের আওতাধীন উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে বিপুল পরিমাণে ড্রাগন চাষ হচ্ছে রাজ্যে।
বছর তিনেক আগেও রাজধানী আগরতলার বিভিন্ন শপিংমলের ভেজিটেবল ব্লক অথবা হাতে গুনা কয়েকটি ফলের দোকান ড্রাগন ফল দেখলে কৌতুহলী মানুষ অবাক বিস্ময়ে নাড়াচাড়া করত। এর নাম, কিভাবে খেতে হয়- ইত্যাদি প্রশ্ন করত তারা। আবার কেউ কেউ ইন্টারনেটের সাহায্যে এই ফলের বিষয়ে জানার চেষ্টা করত। তবে এই কিছুদিনে চিত্রটা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। এখন রাজধানী আগরতলা এমনকি রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষ ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানে। এমনকি অনেকের বাড়িতে শখের বসে চাষ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো রাজ্যে ড্রাগন ফলের চাহিদার একটা বড় অংশ আমদানি করতে হয়। তবে ধীরে ধীরে এর আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে ত্রিপুরা রাজ্য।
খুব অল্প সময়ে রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে ড্রাগন ফল পৌঁছে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দফতরের নাগিছড়া এলাকার উদ্যান এবং ফল গবেষণা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে একদিকে ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এখানে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে চারা উৎপাদন করে সরকারের বিভিন্ন যোজনার মাধ্যমে চাষীদের হাতে ড্রাগন ফলের চারা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বছরের বিভিন্ন সময় আগ্রহী চাষী ও ক্রেতারা এসে তাদের ড্রাগন ফলের বাগান ঘুরে দেখে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিচ্ছে।
উদ্যান এবং ফল গবেষণা কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সুব্রত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রের প্লটে ড্রাগন ফল চাষ শুরু হয়েছে। প্রথম অবস্থায় ৩০টি পিলার দিয়ে চাষ শুরু করা হয়। ড্রাগন ফলের গাছ লতানো এবং পাতাবিহীন, তাই এই গাছগুলোকে উপরের দিকে বেড়ে ওঠার জন্য মজবুত কিছু আশ্রয় দিতে হয়। গাছগুলো প্রায় ২০ বছর স্থায়ী হয় বলে সিমেন্ট ও কংক্রিটের পিলারের উপর তুলে দেওয়া হয় সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার জন্য। প্রতিটি পিলারে তিন থেকে চারটি করে চারা লাগানো হয়েছিল। এগুলোতে ফলন শুরু হওয়ার পর চারা উৎপাদন করা হয়।
প্রথম থেকে ফলন ভালো হয় পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে আবার দ্বিতীয় ধাপে ড্রাগনের বাগান বড় করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে আরো ১৩০ পিলারে চারা লাগানো হয়। সব মিলিয়ে এখন তাদের প্লটের মোট ১৭০টি ড্রাগনের পিলার রয়েছে।
গাছগুলো থেকে এখন প্রতিবছর মে মাসের শেষ অথবা জুন মাসের শুরু থেকে ফল সংগ্রহ করা শুরু হয়। ফল সংগ্রহের কাজ চলে অক্টোবর মাস; এমনকি নভেম্বর মাসের প্রথম পর্যন্ত।
তিন বছরের পুরাতন গাছগুলোতে এখন মৌসুমে ৮ থেকে ১০ কেজি ফল সংগ্রহ করা যাচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে লাগানো গাছগুলো থেকে বছরে তিন থেকে চার কেজি ফল ধরছে। আগামী দিনে এই গাছগুলিতে আরও বেশি ফলন হবে।
ত্রিপুরা রাজ্যের আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের উপযোগী, তুলনামূলক ভাবে এই ফলের গাছের যত্ন কম নিলেও চলে। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এই গাছগুলি বাঁচতে পারে এবং দীর্ঘ বছর ধরে ফল পাওয়া যায়। এসব কারণে এই ফল চাষ অনেক বেশি লাভজনক বলে জানান তিনি।
বাজারে ড্রাগন ফলের চাহিদা রয়েছে। তাই রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দফতর ড্রাগন ফল চাষের জন্য চাষীদের উৎসাহিত করছে। এসব কারণে ত্রিপুরা সরকার মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার দুজন প্রকল্পের মাধ্যমেও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চাষীদেরকে ড্রাগন ফলের বাগান তৈরি দিয়েছে। এসব বাগানে ইতোমধ্যে ফল আসতে শুরু করেছে। আগামী দিনে ব্যাপক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ হলে চাষিরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২
এসসিএন/এসএ