কলকাতা: দক্ষিণ ভারতীয় গীতা বালাকৃষ্ণান জন্মসূত্রে কলকাতাবাসী। পঞ্চাশোর্ধ গীতা পেশায় একজন স্থপতি।
সেই গীতা বালাকৃষ্ণান নেশা ও পেশাকে একসঙ্গে যুক্ত করে বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলী দেখতে কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এগিয়ে এসেছে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস।
শনিবার (২২ অক্টোবর) এক ছোট্ট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গীতার এই পদযাত্রায় শুভকামনা জানান বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস সহ কর্মকর্তারা। এদিন গীতার পদযাত্রার সূচনা হয় কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস প্রাঙ্গণ থেকে।
কলকাতা টু ঢাকা, ৩০৬ কিলোমিটার পথ ১৭ দিনে পার হবেন গীতা। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা হাঁটবেন। তারপর যাত্রা বিরতি, পরদিন আবার সেই পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করবেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এইভাবে তিনি ভেঙে ভেঙে কলকাতা থেকে ৭ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছাবেন।
গীতা জানান, ২৬ অক্টোবর সীমান্ত পার হয়ওয়ার পর বেনাপোল হয়ে যাবেন খাগজপুর, লাওজানি, দরাজহাট, নড়াইল, লোহাগরা, গোরাখোলা, ভাঙা, শিবচর।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় না আমাকে পদ্মা সেতু হেঁটে পার হতে দেবে। তাই সেটুকু ফেরি পার করে মাওয়া, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকায় জাতীয় সংসদে পৌঁছাব। তবে আমি যশোরের ঝিনাইদহে একটা দিন কাটাবো। আমি শুনেছি ওখানে যে প্রজেক্ট, খুব ভালো কাজ হচ্ছে। ওখানে একদিন থাকবো, পুরোটা সার্ভে করবো, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলব। ওখানকার স্থানীয় মেয়রের সঙ্গে আমার একটা সভা হবে।
অস্পষ্ট বাংলায় গীতা বলেন, আমি একজন আর্কিটেক্ট। আমার সময়টা কাটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। আমি রিয়েলাইজ করেছি আমার জীবনযাত্রার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ হয় না। সেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, গ্রাম শহরের স্থাপত্যশৈলী দেখতে এবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল, আমি কলকাতা টু দিল্লি ১৭০০ কিলোমিটার হেঁটেছি।
তাতে আমি লক্ষ্য করেছি, কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় এই বাড়িটা, এই বিল্ডিং বা মন্দির-মসজিদ এসবের আর্কিটেকচার (নির্মাতা) কে? সবাই বলে ডেভেলপার দিয়ে বানিয়েছি। আমি বুঝেছি এগুলো কোনোটাই ভালো মানের বা গুণসম্পন্ন স্থাপত্য নয়। এর সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, মানুষ পুরনো ঐতিহ্য ভুলে অর্থাৎ তার পুরনো বাড়ি মেরামত না করে তারা ডেভলপাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। যা মোটেও ভালো নয়। আমার মনে হয়, আর্কিটেকচার এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটা যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজন। তবেই একটা ভালো স্থপতি গড়ে উঠতে পারে।
গীতা আরও বলেন, বাংলাদেশে এবার আমি প্রথম যাবো। আমি দেখতে চাই, আমাদের এক ভাষা, এক সংস্কৃতির মানুষ হয়েও এত বৈচিত্র্য কিভাবে। আমি তাদের আর্কিটেকচার দেখেছি। কলকাতার থেকে একটু আলাদা। কেন তারা আলাদা? কি তার ইতিহাস? সেসব দেখতেই আমার ঢাকার উদ্দেশে রওনা।
ডেপুটি হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, এটা আমাদের কাছে একটা সিম্বলিক বিষয়। কারণ, উনি শুরু করছেন বাংলাদেশ থেকে শেষ করছেন বাংলাদেশে গিয়ে। বাংলাদেশ দূতাবাস হলো বাংলাদেশেরই একটি অংশ। পাশাপাশি এই দূতাবাস কলকাতার একটি ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য। মিশনের এই বাড়িটির বয়স প্রায় ১৬০ বছর। আর সেখান থেকে তিনি যাত্রা শুরু করছেন। যে শেষ করবেন আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন। যেটিও স্থাপত্য অনন্য নিদর্শন।
বাংলাদেশ দূতাবাস এগিয়ে আসার কারণ হিসেবে আন্দালিব বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অসম্ভব ভালো একটা সম্পর্ক বিদ্বমান। সেটাকে আরও দৃঢ় করতে গীতা যাওয়ার পথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হবে। আমরা যেটা বলি, পিপল টু পিপল কন্টাক্ট, সেটা আমরা আশা করছি মিসেস গীতার জার্নির মধ্য দিয়ে আরও শক্ত হবে। গীতার উদ্দেশ্য শুভ। তার মূল উদ্দেশ্য, একটা ভালো স্থাপত্য বা স্থাপত্য চিন্তা কি করে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে পারে সেটা নিয়ে বালাকৃষ্ণান ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এই পদযাত্রা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ২২ আগস্ট, ২০২২
ভিএস/এসএ