ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বুকিং বেশি হলেও আস্থায় পিছিয়ে ছোট কোম্পানি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
বুকিং বেশি হলেও আস্থায় পিছিয়ে ছোট কোম্পানি

ঢাকা: আবাসন মেলায় ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে মাঝারি ফ্ল্যাট। দাম বেশি হওয়ায় বড় ফ্ল্যাটের চাহিদাও কম।

এবারের মেলায় বড় কোম্পানিগুলোর তুলনায় ছোট কোম্পানির ফ্ল্যাটের বুকিং হয়েছে বেশি। তবে ক্রেতাদের আস্থার দিক থেকে এগিয়ে আছে বড় কোম্পানিগুলো।

কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে, এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত ৩৫০ কোটি টাকার বেশি ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেসের বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। এর মধ্যে রেডি ফ্ল্যাটের সংখ্যাই বেশি। এবারের মেলায় প্রতিটি কোম্পানিরই অন্তত চার থেকে পাঁচটি করে প্রজেক্ট বিক্রি হয়েছে। মধ্যবিত্তের জন্য কম মূল্যে ফ্ল্যাট কেনার এবারই সুবর্ণসুযোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও বড় কোম্পানিগুলোর ফ্ল্যাটের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। তবে বাজারে তাদের সুনাম সময়মতো ক্রেতাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার।

অন্যদিকে ছোট বিল্ডার্স কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন। সেদিক থেকে বুকিংয়ের পর ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে বেশির ভাগ ছোট কোম্পানির দেরি হয়। ছোট কোম্পানির প্রতি বাজারে এমন অভিযোগ থাকায় বেশির ভাগ ক্রেতাই আস্থা হারাচ্ছেন বলে জানান।

প্রতি বছর এই আবাসন মেলায় ছোট কোম্পানিগুলোর ফ্ল্যাট বুকিং এবং বিক্রি থাকে সবচেয়ে বেশি। মেলার প্রথম দিনে ছোট কোম্পানিগুলোর যে সব ফ্ল্যাট ছিল, চতুর্থ দিনে এসে তার বেশির ভাগই বুকিং হয়ে গেছে। সে তুলনায় মেলায় বড় কোম্পানিগুলোর বিক্রি হয়েছে কম। তবে বিক্রির চেয়ে প্রমোশনের দিকেই নজর বেশি ছিল বড় কোম্পানিগুলোর।



খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর এক হাজার থেকে ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বেশি পছন্দ। এই সাইজের ফ্ল্যাটগুলোতে সাধারণত তিনটি বেড, কিচেন এবং পৃথক টয়লেটসহ ড্রইং এবং ডাইনিং থাকে। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে এ ধরনের একটি ফ্ল্যাট কিনতে হলে মাসে ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা আয় করতে হয়। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এখন সবচেয়ে বড় সংকট মূল্যস্ফীতি। যার ফলে সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে নগদ টাকায় ফ্ল্যাট কেনা সাধারণের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়।

মেলার চতুর্থ দিনে ১৬০০ থেকে দুই হাজার বর্গফুটের রেডি ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন সাব্বির হোসেন নামে এক উদ্যোক্তা। তিনি একটি সফটওয়্যার ফার্ম পরিচালনা করেন। বাবা-মাকে নিয়ে থাকার লক্ষ্য নিয়ে দুই হাজার বর্গফুটের রেডি ফ্ল্যাট খুঁজছেন তিনি।

বাংলানিউজকে সাব্বির হোসেন বলেন, আগে একদিন মেলায় এসে ধারণা নিয়ে গেছি। আজকে কয়েকটা অপশন হাতে আছে, এগুলোর মধ্য থেকে যেটা ভালো মনে হবে সেই কোম্পানির ফ্ল্যাট বুকিং দেবো। টাকা একটু বেশি লাগলেও রেডি ফ্ল্যাট কেনাই ভালো। কারণ নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটগুলোর বেশির ভাগ সময়মতো বুঝিয়ে দিতে পারে না। ফলে ক্রেতাদের হয়রানিতে পড়তে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কোম্পানির মার্কেটিং সেলস ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় কোম্পানিগুলোর ফ্ল্যাটের দাম বেশি। ২০০০ থেকে ২৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম প্রায় সাড়ে তিন কোটি থেকে চার কোটি টাকার মতো। এসব ফ্ল্যাটের বুকিংও বেশি। এ টাকায় ডেভলপার কোম্পানি সহজেই সময়মতো কাজ শেষ করে কাস্টমারকে বুঝিয়ে দিতে পারে।

তিনি আরও জানান, অন্যদিকে ছোট কোম্পানিগুলো ফ্ল্যাটের দাম ও বুকিংয়ের টাকার পরিমাণ কম। এসব বিল্ডার্স কোম্পানিগুলো বুকিংয়ের টাকা এবং ব্যাংক ঋণের টাকার ওপর নির্ভর করে। যে কারণে তারা প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করতে পারে না। ফলে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে দেরি করে। ফলে বেশির ভাগ ক্রেতা এসব কোম্পানির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। যদিও সব কোম্পানি দাবি করে সময়মতো ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেবে।

আবাসন শিল্পের প্রতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতি বছরের মতো এবারও রিহ্যাব ফেয়ার-২০২২ এর আয়োজন করেছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ মেলার চতুর্থ দিন শনিবার (২৪ ডিসেম্বর)। অন্যদিনের তুলনায় এ দিন দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, সাধারণত মেলা শেষ দিন বেশ জমজমাট থাকে। কিন্তু আগামী ২৮ তারিখ মেট্রোরেল উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা জনিত কারণে ২৫ ডিসেম্বর মেলা দুপুর ২টায় শেষ হয়ে যাবে। যে কারণে শেষ দিন ক্রেতা তেমন না থাকার আশঙ্কা করছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। মেলায় শেষ দিনের আমেজ চতুর্থ দিনেই লক্ষ্য করা গেছে।

বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির স্টল ঘুরে দেখায় যায়, প্লট, নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের চেয়ে রেডি ফ্ল্যাটের প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে এবং ঝামেলা এড়াতে রেডি ফ্ল্যাটের প্রতি আগ্রহ বেশি বলে জানান ক্রেতা ও কম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা।

মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, মেলার চতুর্থ দিন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার উপরে ফ্ল্যাট, প্লট এবং বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। এর মধ্যে ফ্ল্যাট বিক্রি ও বুকিং হয়েছে প্রায় ১৭০ কোটি টাকার বেশি। প্লট বিক্রি ও বুকিং হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকার উপরে। বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি ও বুকিং হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকার বেশি। তবে মেলায় সর্বমোট কতগুলো ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি ও বুকিং হয়েছে, তা মেলা শেষে হিসাব করে জানানো হবে বলে জানায় মেলা কর্তৃপক্ষ।

রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (১ম) কামাল মাহমুদ বলেন, বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান যখন একটা প্রজেক্ট বিক্রি করে তখন তাদের মাথায় রাখা উচিত একজন ক্রেতা অন্য ক্রেতাকে ডেকে আনবে। তাই সময়মতো প্রজেক্ট হস্তান্তর করা কোম্পানির সুনামের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যারা রিহাবের সদস্য তাদের কাস্টমারের প্রতি একটা জবাবদিহিতার জায়গা থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদেরও কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। যদি একটা কাস্টমার সময়মতো সকল ইনস্টলমেন্ট পরিশোধ করেন তখনই আমরা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নিতে পারি। নিয়মনীতির মধ্যে যারা থাকে তাদের ব্যবস্থা আমরা করতে পারি।

তিনি বলেন, রিহ্যাবের সদস্য নয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে যারা প্লট বা ফ্ল্যাট কেনেন তাদের অভিযোগ করার জায়গা থাকে না। রিহ্যাবের বাইরে এমন শতাধিক কোম্পানি আছে। তারা একই প্রজেক্ট কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেন। তারা মানুষের স্বপ্ন নিয়ে খেলছে। এদের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।