ঢাকা, শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঋণ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা: আইএমএফ প্রতিনিধিরা এখন ঢাকায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
ঋণ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা: আইএমএফ প্রতিনিধিরা এখন ঢাকায় আইএমএফের ডিএমডি আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহের

ঢাকা: বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করতে ঢাকায় এসেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, শনিবার আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় পৌঁছেছে। আইএমএফ মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দসহ প্রতিনিধি দলে আরও চারজন রয়েছেন। সফরকালে প্রতিনিধি দলটি রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ১০টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করবে। এরপর রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক ও নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

পরের দিন সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে প্রতিনিধি দলটি। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্লফা কামাল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, যুগ্মসচিব আবু দাইয়া মোহম্মদ আহসানউল্লাহর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিন বিকেলে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবে আইএমএফ প্রতিনিধিরা।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) প্রতিনিধি দলটি যাবে জাতীয় সংসদে। সেখানে স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করবে তারা। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ আয়োজিত মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন আইএমএফের ডিএমডি। এছাড়া সফরকালে প্রতিনিধি দলটি মেট্রোরেল এবং একটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করবেন বলেও জানা গেছে। পদ্মাসেতু ভ্রমণ শেষে ১৮ জানুয়ারি রাতে তারা ঢাকা ছাড়বেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত বছরের জুলাইয়ে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তারের সঙ্গে বৈঠক করে রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের  একটি প্রতিনিধি দল। সে সময় প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ছাড়ার আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ৯ নভেম্বর একটি বৈঠক করে।

ওই বৈঠকের পর এক আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ অস্থিরতা যাতে কোনো ধরনের সংকটে ঘনীভূত না হয় তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম।

তিনি বলেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে আইএমএফের ঋণ পেতে যাচ্ছি। আগামী ফেব্রুয়ারি (চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি) মাসে ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সালের মধ্যে সব ঋণ পাওয়া যাবে। আইএমএফ তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা এবং চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদন করবে। ঋণটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি। এ ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। মোট ঋণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৬৮ বিলিয়ন এসডিআর, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণের মোট তিনটি অংশ। এর মধ্যে প্রথম অংশের ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয় এসডিআরের জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। ঋণের বাকি অংশের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৫ দশমিক ৬৪ এসডিআরের সুদ হার নির্ধারিত হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে এক শতাংশ যোগ করে। আর বাকি ১ বিলিয়ন এসডিআরের সুদ হার হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে।

তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর অর্থ ছাড় করবে। বাকি ঋণ প্রতি ছয় মাস ৫১৯ মিলিয় এসডিআর হিসেবে ছয়টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে। বর্তমান এসডিআর ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী ঋণের গড় সুদ হার ২ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪,২০২৩
জিসিজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।