ঢাকা: বাল্ক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে উৎপাদনেও দাম বাড়বে।
এ বিষয়ে নিট তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) কার্যনির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়বে এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এত অস্বাভাবিক প্রত্যাশা করিনি। যে দাম বেড়েছে তা স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায় নেই।
সরকারকে আমরা বলেছিলাম, প্রতি ইউনিট ২৫ টাকা করতে। যদিও এর থেকে উদ্ভূত মূল্য পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের চলে যেতো; তারপরেও আমরা বলেছিলাম গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ দিতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি ৩০ টাকা করেছে। এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে। আমরা সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাবো, গ্যাসের দাম কমিয়ে ২৫ টাকা করা হোক। পাশাপাশি আমাদের অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলো বাড়াতে হবে। যাতে আমরা টিকে থাকতে পারি।
বিকেএমইএ সভাপতি আরও বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে নিটের প্রসেসিং ব্যয় বাড়বে ১৫ শতাংশ। এর প্রভাব পড়বে উৎপাদনের ওপর। এ খরচ বৃদ্ধির ফলে আমাদের সক্ষমতা হারাবো। আমরা যদি বায়ারকে বলি গ্যাসের দাম বেড়েছে তাই উৎপাদন খরচ বেড়েছে, প্রতি ডজনে ৫০ সেন্ট বাড়িয়ে দাও; তারা দেবে না। এর পর যদি আমরা কম দামে অর্ডার না নিই তাহলে তারা বিকল্প সোর্সিংয়ে চলে যাবে। এতে আমরা কার্যাদেশ হারাবো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেটা এয়ারফ্রেইট হোক আর শিপপ্রেইট হোক-উভয় খরচ বেড়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্যা প্রকট করে তুলেছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সমস্যা আরও প্রকট হবে। ডাইস কেমিকেল থেকে শুরু করে সব ধরণের মেটা রিয়ালের দাম বেড়েছে। তারপর যদি গ্যাসের বিল বাড়ে তাহলে কস্ট অব ডুইং বেড়ে যাবে। যদিও এ সমস্যা বিশ্বজুড়ে। এর প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানি বাণিজ্য ঝুঁকি তৈরি হবে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সহ-সভাপতি এমএ রহিম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগিতার মধ্যে আছি। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মানে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া। আর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবো। আমরা তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবো না, তখন করা সম্ভব হবে না। এক সময় থেমে যাবো।
এখন সমস্যা হলো প্রয়োজন মতো গ্যাস পাচ্ছি না। আবার এই না পাওয়ার মধ্যে যদি গ্যাসের দাম বেড়ে যায় তাহলে মরার উপর খাড়ার ঘা অবস্থা তৈরি হবে। আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবো।
আ: রহিম ফিরোজ বলেন, আশপাশের দেশের তুলনায় আমরা বাড়তি চাপে আছি। ভারত ও পাকিস্তানে তুলা আছে। গত একশ বছরের বেশি সময় ধরে টেক্সটাইলে অভিজ্ঞতা আছে দুই দেশেরই। এ কারণে টেক্সটাইলের কাঁচামাল তুলা নিজের দেশেই পায়। আর আমরা কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করছি। এভাবে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলো, সাথে সাথে গ্যাস চাহিদা মতো দিতে পারবে না। আমাদের উভয়ের দিকে সমস্যা তৈরি হলো। এটা আমাদের জন্য একটা সুইসাইডাল ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। দাম বাড়িয়ে শতভাগ সরবরাহ করলে আমরা এটা ম্যানেজ করে নিতাম। আংশিকভাবে হলেও আমরা সেটা চেষ্টা করতাম।
উদ্যোক্তারা বলছেন, দাম বাড়ালেও প্রয়োজন মতো গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। এতে পুরো উৎপাদনে ঝুঁকি তৈরি হবে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানি আয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
জেডএ/এমজে