ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশে আদানির বিনিয়োগে সতর্ক হওয়া জরুরি

বাণিজ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
বাংলাদেশে আদানির বিনিয়োগে সতর্ক হওয়া জরুরি

ঢাকা: বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় আসা গৌতম আদানিকে নিয়ে আলোচনা এখন বিশ্বজুড়ে। তার এই শীর্ষে উঠে আসার পুরো অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ।

এই আর্থিক জালিয়াতির কারণে এখন ভারতের শেয়ারবাজারের পাশাপাশি পুরো ব্যাংকিং খাতে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে বড় ধরনের এই আর্থিক কেলেঙ্কারি ও লুটের পর এবার বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ চেষ্টা নিয়ে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা।

বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের চেষ্টা করছে আদানি গ্রুপ। বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছে জোর লবিংও চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিদ্যুৎ ও বন্দর খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রাথমিক সমঝোতা স্বাক্ষরও হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে আদানির বিনিয়োগের আগে সতর্ক হওয়ার জরুরি।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কে সব সময় বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিতে হয়। বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আদানি গ্রুপ হোক বা যে কোনো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের সম্পর্কে অর্থনীতিতে অভিযোগ থাকে, তাদের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ভুল পদক্ষেপ হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায় না। তাই যে কোনো বিনিয়োগে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

আদানি গ্রুপের লুটপাট নিয়ে আলোচনা এখন আর ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসেবে উঠে আসছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে আদানি গ্রুপ তার কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। গৌতম আদানির প্রায় ১৩ হাজার কোটি ডলার সম্পদের ১০ হাজার কোটি ডলারই অর্জিত হয়েছে গত তিন বছরে স্টক জালিয়াতির মাধ্যমে, অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানোর মধ্য দিয়ে।

আদানি গ্রুপের বাংলাদেশকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত হলেও এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে রফতানি করা হবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিদ্যুতের দাম ও ক্যাপাসিটি চার্জ তুলনামূলক বেশি বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।  

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে বিদ্যুৎ কিনতে হতে পারে এই আদানি গ্রুপ থেকে।

অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ও আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে আদানি গ্রুপ। এমনিতেই দেশের ভোজ্য তেলের বাজারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডে (বিইওএল) সিঙ্গাপুরের উইলমার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ভারতের আদানি গ্রুপ রয়েছে যৌথ মালিকানায়। কোম্পানিটি রূপচাঁদা, ফরচুন, কিংস, মিজান ও ভিওলা ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেল বিক্রি করে। এখন বাংলাদেশ ভোজ্য তেলের বাজার পুরোপুরি দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আদানি গ্রুপ। চাল প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত চাল বিক্রির পাশাপাশি রাইস ব্র্যান অয়েলের ব্যবসায়ও আসতে চায় তারা।

আবার চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জোন নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে আদানি গ্রুপ। এ ছাড়া আদানি গ্রুপ বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রকল্পে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি তুলে জমি ভরাটের কাজও করেছে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে বন্দরের জেটি ও টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আদানি গ্রুপ। এসব বিনিয়োগ বাংলাদেশে হলে সব প্রকল্পে অর্থ সরবরাহ করবে বাংলাদেশ সরকার। তাদের পুরো ডলার চাহিদা মেটাতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

এতে চলমান ডলার সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। সংকটে পড়তে পারে দেশের পুরো ব্যাংকিং খাত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
জেডএ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।