ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

'সম্ভাবনার শক্তিতে পূর্ণ' ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
'সম্ভাবনার শক্তিতে পূর্ণ' ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন

ঢাকা: ‘সম্ভাবনার শক্তিতে পূর্ণ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যাল। মানুষের দৃঢ়তা, সাহস ও এগিয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে ‘হোপ ফেস্টিভ্যাল’ বা আশার উৎসবের আয়োজন করেছে দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তিনটায় নারী উদ্দোক্তাদের নিয়ে আয়োজন ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স ক্লায়েন্টদের উদ্যোক্তা মনোভাব উদযাপন করা হয়। সেখানে চারজন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয়। তারা তাদের সফলতার গল্প সবার সামনে তুলে ধরেন।

তাদেরই একজন শারমিন আক্তার। খেলনা তৈরির শিল্পে এগিয়ে আসা গুটিকয়েক নারীর মধ্যে একজন এই নারী উদ্যোক্তা। কয়েক বছর একটি খেলনা তৈরির কারখানায় কাজ করার পর একসময় তিনি নিজেই হয়ে উঠলেন উদ্যোক্তা। আর ব্রাক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন এই নারী।

শারমিন আক্তার তার সফলতার গল্প শোনান বাংলানিউজকে। তিনি বলেন, শুরুতে আমি চাকরি করতাম। ছোট করে একটি ব্যবসা সুরু করি।  আস্তে আস্তে সেটা বড় আকার ধারণ করে। শুরুতে ব্রাক এর কাছ থেকে প্রথম ১০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। পরবর্তীতে ব্যবসা বড় করতে আরো কিছু লোন নেই। যা আমি সময় মত কিস্তি পরিশোধ করি।

তিনি বলেন, এই ব্যবসা দিয়ে আমি আল্লাহর রহমতে ২৫ কাঠা যায়গা রেখেছি। দুই মেয়ে কে আইয়ে পাশ (উচ্চ মাধ্যমিক) করিয়েছি। এখন অনেক ভাল অবস্থানে আছি। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ২০ জন কর্মী কাজ করছেন। সামনে আরো ৫০ জন কর্মী নেবার পরিকল্পনা করছি।

আরেক সফল নারী উদ্যোক্তা শাহনাজ বিলকিস তার সফলতার গল্পে জানান, তিনি নিজের পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিল। স্বচ্ছল পারিবারিক অবস্থা স্বত্ত্বেও আত্মনির্ভরশীল হয়ে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছেন তিনি।

৩০ জন শিশুর একটি স্কুল দিয়ে শুরু হয় শাহনাজ বিলকিসের স্বপ্নযাত্রা। পুঁজি জোগাতে ব্র্যাক থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ধীরে-ধীরে তার স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকল। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলে ২শ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হলো নিজ ঘরেই। বাইরের কাজে শাহনাজের এই সম্পৃক্ততা পরিবারের কেউ ভালো ভাবে নিতেন না।

শাহনাজ এবার সিদ্ধান্ত নিলেন কাপড়ের ব্যবসায় নামবেন। অনলাইনে পণ্য বিক্রি শুরু করে অভাবনীয় সাড়া পেলেন। এই সাফল্যই তাকে আবাসন ব্যবসায় নামার সাহস জোগালো। নিজ গ্রাম মানিকগঞ্জে আবাসন ব্যবসার কাজ শুরু করলেন তিনি। লাভজনক কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি আবাসন ব্যবসাতেও তিনি সফলতা অর্জন করেন।

মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা কর্মশালা:

বিকেলে ৪ টায় মানিসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে 'আসুন প্রান খুলে বলি মন দিয়ে শুনি' প্রতিপাদ্যে 'মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা' সেশনটি দর্শকরা উপভোগ করেন। নিজেকে ভালো রাখতে শরীরের পাশাপাশি মনেরও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন এই সেশনে অংশ নেয়া দর্শনার্থীরা।

সেশনটি শেষ করে দর্শকরা তাদের অনুভূতি জানান, যে মানসিক চাপে থাকলে তারা কি কি করেন চাপ মুক্ত হবার জন্য। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নওশিন নামের এক নারী কর্মী বলেন, আমি যখন মানসিক চাপে থাকি তখন বেশি বেশি করে ড্রইং করি। পাশাপাশি সময় সুযোগ থাকলে কোথাও ঘুরতে বের হই। কারণ কর্ম ক্ষেত্রে এবং গৃহে নারীরাই বেশি মানসিক চাপে থাকে।

রিকশা পেইন্টিং কর্মশালা:

বিকেল সাড়ে চারটায়  আড়ং ক্র‍্যাফট কর্নারে কারুশিল্পীদের কাছ থেকে 'রিকশা পেইন্টিং' শিখতে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। যেখানে ছোট-বড় অনেকেই অংশ নিতে পেরেছে।

এ বিষয়ে আড়ং লার্নিং এন্ড ডেভলপমেন্টের ডেপুটি মেনেজার রাশেদ-উজ-জামান ভূইয়া বাংলা নিউজকে বলেন, ১৯৫০ এর দিকে বাংলাদেশে রিকশা পেইন্টিং শিল্পটা শুরু হয়। সে সময় বিভিন্ন চিত্র নায়ক নায়িকাদের ছবি রিক্সার পেছনে পেইন্টিং করা থাকতো। তার পরবর্তীতে মুক্তি যুদ্ধের কিছু পেইন্টিং রিক্সার পেছনে তুলে ধরা হত। এই ধরণের শিল্প একসময় নিয়মিত দেখা যেত। তবে যুগের সঙ্গে রিক্সার অনেক পরিবর্তন আসায় এই ধরনের আর্ট আর দেখা যাচ্ছে না। এখন কার রিক্সায় শুধু মালিকের নাম আর একটি ফোন নাম্বার দেখা যাচ্ছে। আগের মত সাবান, রাজ্জাকদের মত চলচিত্র অভিনেতাদের ছবি দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা আড়ং এ রিক্সা পেন্টিং এর যে সকল প্রোডাক্টগুলো সেল করছি সেখানে আমরা রিক্সা পেইন্টাকে ফোকাস করছি। রিক্সা পেইন্ট নরমাল পেইন্টিং থেকে একটু ডিফারেন্ট। এর একটা বেইজ কালার থাকে। এই বেইজ কালারের উপর শেডের কাজ করা হয়। আমাদের এই ওয়ার্কশপের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সেই আগের অই রিক্সা পেইন্টিং এর ফিল টা দেয়া।

মানুষের সচেতনতা বাড়াতে জীবনে কিভাবে ভাল পরিকল্পনা নেবার মাধ্যমে সাফল্য আনা যায় এমন বিষয়ে এক খেলার আয়োজন দেখাগেছে। খেলাটির নাম 'শূন্য থেকে পূর্ণ'। ছোট বড় অনেকেই উতসাহ নিয়ে বিকেলের এই আয়োজনে অংশ নেয়।

'শূন্য থেকে পূর্ণ' খেলাটির পরিবেশক ব্রাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক এসকেন্দার আলী বলেন, আমরা যে গেমটা খেলছি এটা শূন্য থেকে পূর্ণ। আমরা যদি একটা অতিদরিদ্র পরিবারের কথা চিন্তা করি যার ইনকাম কম। এই পরিবারটির যত মৌলিক চাহিদা তা এই স্বল্প আয় দিয়েই মেটাতে হয়।  কোন পরিবার বা ব্যাক্তি যদি ভাল এবং সমৃদ্ধির পথে এগোতে চায় তাহলে পরিবার বা ব্যাক্তিকে ভাল পরিকল্পনা বা উদ্যোগ নিতে হবে ভবিষ্যতের জন্য। আরে এই উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারবে। পথে এগোতে হলে তার কিছু বাধাও আসবে। এই বাধা টপকে সে সাফল্যতা পাবে৷

ব্র্যাক বলছে, এই ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য শিক্ষা, আর্থিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্য– এসকল বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশেষকরে তরুণ প্রজন্মকে সামগ্রিকভাবে দেশের ও নিজ নিজ এলাকার সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে উৎসাহ জোগায় বলে মনে করছেন আয়োজকরা।

বিকেল থেকেই মেলায় দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন৷ সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারা মেলায় আয়োজিত নানা আয়োজন উপভোগ করেন। পাশাপশি চলতে থাকে সুরের মূর্ছনা। শিশুদের জন্য রিক্সা পেন্টিন, মাটি খেলা সহ নানা উৎসবমুখর আয়োজন ছিলো।

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উৎসব চলবে। ২০২২ সালের ২১ মার্চ ব্র্যাক এর ৫০ বছর পূর্ণ হয়। সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের শেষ পর্ব হিসেবে সংস্থাটি ‘হোপ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
ইএসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।