ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খুচরায় পড়েনি চিনির শুল্ক কমানোর প্রভাব

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
খুচরায় পড়েনি চিনির শুল্ক কমানোর প্রভাব

ঢাকা: চিনি আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

আড়তদারদের দাবি, কম মূল্যের চিনি আসেনি। খুচরা বিক্রেতারা এ পণ্য বিক্রি করছেন পুরনো দামেই।

শুক্রবার (৩ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও মিরপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাজারগুলোয় সাদা খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১১৫ টাকা। দোকান ভেদে দাম নেওয়া হচ্ছে আরও ৫ টাকা বেশি।

প্যাকেট চিনিও বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। দেশি চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আজব ব্যাপার হলো, সব দোকানে দেশি চিনি মিলছে না। সেগুনবাগিচার সিটি কর্পোরেশন বাজারসহ আশপাশের দোকান ও ফার্মগেটেও একই কাণ্ড।

মিরপুরে খালেকের মুদি দোকানে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আহসানও একই মূল্যে প্যাকেট চিনি বিক্রি করছেন। শুল্ক কমানো হয়েছে, বাজারে দাম কমার কথা। কিন্তু কেন আগের দামেই চিনি বিক্রি করছেন, জানতে চাইলে এ দোকানিরা বলেন, যেখানে কমেছে সেখানে থেকেই নেন। আমরা আগের দামে চিনি কিনেছি; বিক্রিও আগের দামে করছি।

এ সময় কোন দোকান থেকে পূর্বমূল্যে চিনি কিনেছেন জানতে চাইলে তারা পাইকারি মূল্যে চিনি কেনার রশিদ দেখান। এতে দেখা যায়, ৫০ কেজি চিনির বস্তা দাম লেখা আছে ৫ হাজার ৪৭০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি চিনির দাম ১০৯ টাকা ৪০ পয়সা। কেজি প্রতি চিনির দাম কম হলেও ১০ টাকা করে বেশি কেন রাখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশি পরিমাণে কিনলে ১১৫ টাকায় বিক্রি করতে পারব।

যে দোকান থেকে এসব চিনি কেনা হয়েছে তার পাইকারি বিক্রেতা মিরপুর-১০ নম্বরের দুলাল এজেন্সি। মোবাইল ফোনে এজেন্সির মালিক হাজী আইয়ুব আলী দুলালের সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। তিনি জানান, এখনও কম দামে তারা চিনি পাননি। যে কারণে পূর্বমূল্যে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি এ প্রতিবেদক চাইলে ৫ হাজার ৪৬০ টাকায় এক বস্তা চিনি দিতে পারবেন বলেও জানান।

কম দামের চিনি পাননি, তাহলে বস্তায় ১০ টাকা কমাতে চাইছেন কেন জানতে চাইলে দুলাল বলেন, ডলারের দাম ওঠা নামা করায় দাম কমেছে। শুল্ক কমানোয় দাম কমে কিনা, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কম দামের চিনির এখনও পাইনি।

মৌলভীবাজার চিনির আড়তে চিত্র ভিন্ন। সেখানে খুচরা পর্যায়ে চিনি ১১০ থেকে দোকান ভেদে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাংবাদিক এসেছে জানতে পারলে দোকানিরা ১১০ টাকায় চিনি বিক্রি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাসেম বাংলানিউজকে বলেন, শুল্ক কমানো চিনির বাজারে এখনও পৌঁছেনি। কম দামের চিনি বাজারে এলে দামও কমবে। যদিও মিলাররা কেজিতে দুই টাকা কমিয়েছে। আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি দিতো ১০৯ টাকায়, এখন বিক্রি করছে ১০৭ টাকায়। এ জন্য আশপাশের খুচরা পর্যায়ে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। মিলারারা যেভাবে চিনির দাম কমাবে খুচরা পর্যায়ে কিছুটা কমবে। এর বেশি কমানো সম্ভব না।

মিরপুর, সেগুনবাগিচা বা ফার্মগেট এলাকায় ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় চিনি বিক্রি হচ্ছে। সেটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে- প্রশ্ন করলে আবুল হাসেম বলেন, এটা হচ্ছে ক্যারিং কস্ট কম-বেশি হওয়ার কারণে। তাছাড়া যারা বেশি দামে কিনছে তারা বেশি দামে বিক্রি করছে।  

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব পরিবশেক চিনি সরবারহ করতো এখন আর তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ানোর আগে এ ব্যাপারে আগাম সংবাদ দিয়ে এসব সরবরাহকারীরা লাপাত্তা হন। এরপর বেশি কিছুদিন আর বাজারে আসেনি। এবারও তাই হয়েছে।

এদিকে, শুল্ক উঠে যাওয়ার পর কম দামের চিনি বাজারে আসতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের ম্যানেজার বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শুল্ক কমানোর পর বাজারে কেজি প্রতি ৫ টাকা কমবে। তবে সেটা দেরি আছে। কম দামের চিনি এখনও পৌঁছেনি। চলতি মাসের ১০ তারিখে পোর্টে আসবে। এরপর মার্কেটে পাওয়া যাবে।

রোজায় চিনির দাম কমাতে সরকার শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু ক্রেতা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়ছে না। শুধু শুল্ক কমালেই হবে না, বিক্রেতারা কম দামে চিনি বিক্রি করছে কিনা সেটাও দেখতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তা না হলে শুল্ক কমিয়ে সরকারের রাজস্ব কমালেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না। সব টাকা চলে যাবে ব্যবসায়ীদের পকেটে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।